প্রতীকী ছবি।
পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পথে নামা স্কুলগাড়ি আদতে কতটা বিপজ্জনক, তা অতীতে একাধিক দুর্ঘটনায় দেখা গিয়েছে। কখনও ব্রেক ফেল করে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরেছে স্কুলগাড়ি, কখনও আবার এক দিকে হেলে উল্টে গিয়ে আহত হয়েছে পড়ুয়ারা। কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তদন্তে জানা গিয়েছে, স্কুলগাড়ির স্পিডোমিটারের তার খোলা ছিল! তাই বোঝা যায়নি গাড়ি কত গতিতে ছুটছে। ফলে জোরে ছুটতে গিয়েই ঘটেছে বিপত্তি। আবার কখনও জানা গিয়েছে, গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেটই নেই!
পুজোর ছুটির পর্ব কাটিয়ে সোমবার থেকে স্কুল খুলেছে। সেই সঙ্গে স্কুলপড়ুয়াদের পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ছুটির পরে বেশির ভাগ স্কুলগাড়ির পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাই হয়নি। ফিটনেস সার্টিফিকেট, বিমার কাগজপত্রও নেই বেশ কিছু স্কুলগাড়ির। এমনকি, কয়েক বছর আগেই পথে নামা স্কুলগাড়ির মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে ছুটছে বলে অভিযোগ।
এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আরও একটি সমস্যা— চালকের অভাব। ছটের সময়ে বাড়ি যাওয়া চালকদের বড় অংশ এখনও ফেরেননি। ফলে গাড়িতে একাধিক পড়ুয়াকে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসানো তো আছেই, সেইসঙ্গে মাঝপথে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি বদলানোর ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। শ্যামবাজারের বাসিন্দা এক অভিভাবক বলেন, ‘‘ছুটির পর থেকে দেখছি, স্কুলগাড়ি নিয়ে আসছেন নতুন নতুন চালক। কোনও দিন আবার গাড়ি বদলে অন্য গাড়িও মেয়েকে দিয়ে যাচ্ছে। মালিককে জানালে বলছেন, কয়েক দিন পরে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু যা পরিস্থতিতি, তাতে স্কুলগাড়িতে ছেলেমেয়েকে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই!’’
সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন স্কুলগাড়ির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদেরই এক জন বিপ্লব সরকার বলছেন, ‘‘এখন এমনিতেই গাড়ি কম। পুরনো গাড়িগুলি বসে গিয়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় নতুন গাড়ি আসেনি। ফলে স্কুলগাড়ির সংখ্যা কমেছে। তার উপরে চালকদের একাংশ উৎসবের ছুটি কাটিয়েএখনও না ফেরায় পর্যাপ্ত গাড়ি নামাতে সমস্যা হচ্ছে।’’
কিন্তু গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা? ছুটির পরে সেটা কি আদৌ হয়েছে? স্কুলগাড়ি পরিবহণ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত একাংশের দাবি, স্কুলগাড়ির একটা বড় অংশ রাস্তায় ছুটছে কোনও কাগজপত্র ছাড়াই। এমনকি বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনকে জানানোর পরেও কাজ হয়নি বলে দাবি। স্কুলগাড়িসংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরের প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি স্কুলগাড়ি পথে নামছে। কিন্তু অধিকাংশেরই কোনও কাগজ নেই। এমনকি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কয়েক বছর পরেও বাতিল করা তো দূর, কোনও রকম পরীক্ষা ছাড়াই নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে সেই সব গাড়ি। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, চালকের কোনও লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের উদাসনতায় এই বেলাগাম দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে।’’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কারপুল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পার্ক স্ট্রিট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তপন ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘সংগঠনের তরফে মাঝেমধ্যেই স্কুলগাড়িগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা জানানো হয়। এমনকি নতুন স্কুলগাড়ি এলে তার কাগজপত্র ঠিক আছে কি না,সেটাও দেখে নেওয়া হয়। কিন্তু সংগঠনের আওতার বাইরের গাড়িকে তো আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভবনয়। প্রশাসনের কাজ তো আমরা করতে পারি না!’’
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ নিয়ে ট্র্যাফিক বিভাগ জানাবে। ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘নজরদারি চলছে। স্কুল চত্বরে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের বলা আছে, সমস্যা দেখলেই পুলিশে অভিযোগ করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy