প্রতীকী ছবি।
‘হঠাৎ বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। এখনই দু’হাজার টাকা পাঠাতে পারবে? আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠাচ্ছি!’ হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজ দেখে কিছুমাত্র সন্দেহ হয়নি যাদবপুরের বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষিকার। কারণ, যে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মেসেজটি এসেছিল, সেই নম্বরটি অচেনা হলেও ‘প্রোফাইল পিকচার’ হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এক জনের ছবি ছিল। এমনকি ওই নম্বর থেকে এই মেসেজও এসেছিল যে, ‘এই সমস্যার মুহূর্তেই ফোনটা গোলমাল করছে। তাই আমারই অন্য নম্বর থেকে মেসেজ করছি।’
মানবিকতার খাতিরে এর পরে দু’হাজার টাকা পাঠাতে গিয়েই প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন ওই স্কুলশিক্ষিকা!
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কোথাও হোয়াটসঅ্যাপে জরুরি পরিস্থিতির কথা জানিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতানো হয়েছে, কখনও আবার সরাসরি কাজ সারা হচ্ছে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের আইডি-পাসওয়ার্ড বা কার্ডের তথ্য এবং ওটিপি জেনে নিয়ে। যাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টটিতে অত্যন্ত পরিচিতের ছবি দেখে প্রথমে তাঁদের কোনও সন্দেহই হচ্ছে না। শেষে টাকা খোয়ানোর পরে সেই পরিচিতকে ফোন করলে জানতে পারছেন, হোয়াটসঅ্যাপে টাকা চেয়ে এমন কোনও মেসেজই তাঁরা পাঠাননি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর এমন হোয়াটসঅ্যাপ প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ে প্রায় ৩৫টি। গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে দেখে এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করেছে লালবাজার। এক তদন্তকারী পুলিশকর্মী জানান, এই ভাবে যাঁকে প্রতারিত করা হচ্ছে, তাঁর সম্পর্কে অনেক দিন ধরে খোঁজখবর চালানো হচ্ছে। নজরদারি চালিয়ে দেখা হচ্ছে তিনি কোথায় থাকেন, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, সবচেয়ে কাছের বন্ধু বা পরিচিত কে বা কারা। এর পরে এমন কোনও পরিচিতের ছবি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হচ্ছে, যাঁর সঙ্গে নিশানায় থাকা ব্যক্তির রোজ দেখা হয় না। অথচ দু’জনের মধ্যে এতটাই ভাল সম্পর্ক যে, টাকা চাইলে
ফেরানো হবে না! সমাজমাধ্যম থেকেই এর পরে ডাউনলোড করে নেওয়া হচ্ছে ওই পরিচিতের ছবি, যা ব্যবহৃত হচ্ছে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের ‘প্রোফাইল পিকচার’ হিসাবে।
লালবাজারের সাইবার শাখার এক তদন্তকারী আধিকারিক জানাচ্ছেন, কিছু টাকা চেয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে ফের জানানো হচ্ছে যে, টাকা এখনও আসেনি। কয়েক দফা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা চালাচালি করে যিনি টাকা পাঠাচ্ছেন তাঁকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর পরে একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখুন, টাকা আসেনি। কিন্তু লিঙ্কে ক্লিক করলেই মোবাইলে ডাউনলোড হয়ে যাচ্ছে একটি ক্লোনিং অ্যাপ। তাতে প্রতারিতের ফোনটি চলে যাচ্ছে প্রতারকের হাতের মুঠোয়।
লালবাজারের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রতারিতকে কিউআর কোড পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘দোকানে ওষুধ কিনতে এসেছি। ৫০০ টাকা কম পড়েছে। বাড়ি গিয়ে টাকাটা নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি নেই। বাড়ি গিয়েই পাঠাচ্ছি, এখানে একটু দিয়ে দেবে? একটা কিউআর কোড পাঠাচ্ছি, তাতে দিলেই হবে!’’ আর ফোনে ওই কিউআর কোড স্ক্যান করতেই কেটে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার টাকা!
তা হলে উপায়? সাইবার বিশেষজ্ঞ থেকে লালবাজারের তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, যাঁর নাম করে, যেখান থেকে খুশি কথা বলা হোক না কেন, সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে কোনও রকম আর্থিক লেনদেনের পথে হাঁটা যাবে না। প্রয়োজনে ওই পরিচিত ব্যক্তিকে ফোন করে কথা বলে নিতে হবে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘অনেকেরই মনে হতে পারে তা হলে কাকে বিশ্বাস করব? কিন্তু এটা বিশ্বাস-অবিশ্বাস নয়, সচেতনতার প্রশ্ন। সচেতন হয়ে যে কোনও ধরনের লেনদেনের পথে হাঁটলেই ঠকানো সহজ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy