এ বছর কোনও স্কুল সরস্বতী পুজো করছে আজ, রবিবার। কোনও স্কুল আবার কাল, সোমবার। রবিবার বেলা করে পুজো শুরু হওয়ায় অনেকেই পরের দিন পুজো করতে চাইছেন। অনেক স্কুল আবার জানাচ্ছে, সোমবার বেশ সকালে পুজোর সময় শেষ হয়ে যাবে। এত সকালে পড়ুয়ারা সকলে স্কুলে পৌঁছতে না-ও পারে। তাই রবিবার দেরি করে শুরু হলেও ওই দিনই পুজো সেরে নিতে চায় তারা। অনেক স্কুলই জানাচ্ছে, থিমের চমক দেখাতে চলেছে তারা।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানালেন, সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ বার তাঁদের পুজোর মণ্ডপসজ্জায় উঠে এসেছে সলিল চৌধুরীর ছবি আর গান। সলিল চৌধুরীর ছবি যেমন মণ্ডপে আঁকা হয়েছে, তেমনই শোলা দিয়ে হারমোনিয়াম, গিটার, সেতার-সহ নানা বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে মণ্ডপে রাখা হয়েছে। শুভ্রজিৎ জানান, তাঁদের সরস্বতী পুজোর আমন্ত্রণপত্রেও সরস্বতী এবং সঙ্গীত একসঙ্গে দেখানো হয়েছে। বাজবে সলিল চৌধুরীর সুর দেওয়া গান। সেই সঙ্গে স্কুলে চলবে ‘সংবিধানের ৭৫ বছর’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীও।
নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, তাঁদের স্কুলে এ বার থিমে উঠে আসছে সেই সব বিখ্যাত মানুষ, যাঁরা ২০২৪ সালে প্রয়াত হয়েছেন। সঞ্জয় বলেন, ‘‘২০২৪ সালে এক দিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে রতন টাটা, জাকির হুসেনের মতো অনেক কৃতী সন্তানকে হারিয়েছি আমরা। নতুন বছরে ফের এক বার এঁদের স্মরণ করতেই এই উদ্যোগ। গোটা মণ্ডপ এই কৃতীদের ছবি দিয়ে সাজানো হবে।’’ সঞ্জয় জানান, পুজোর দিন খিচুড়ি ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা ছাড়াও কয়েক দিন পরে আছে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে মহাভোজ।
টাকি বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, তাঁদের স্কুলে এ বার সরস্বতী পুজোয় মণ্ডপ দেখতে এলে দেখা হয়ে যাবে বইয়ের বিবর্তন। তালপাতার বই থেকে ই-বুকের এই যাত্রা ফুটিয়ে তুলতে সুন্দরবন থেকে তালপাতা আনিয়ে তৈরি করা হয়েছে তালপাতার বই। এ ছাড়া, তালপাতা দিয়ে হাতপাখা, মাটিতে বসার আসনের মতো নানা সামগ্রী তৈরি করেছে পড়ুয়ারাই।
পরিবেশবান্ধব হওয়ার বার্তা দেবে টাকি গার্লসের সরস্বতী পুজো। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানান, তাঁদের মণ্ডপ সেজে উঠেছে পুরনো খবরের কাগজ, ফেলে দেওয়া নানা জিনিস দিয়ে তৈরি মডেলে। পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে আদিবাসী শিল্পকর্মের আদলে মডেল তৈরি করেছে পড়ুয়ারা। এর জন্য পরিকল্পনা চলেছে প্রায় এক বছর ধরে।
এক উৎসবের থিমে উঠে আসছে অন্য উৎসবের কথা। মিত্র ইনস্টিটিউশন, ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানালেন, তাঁদের স্কুলে এ বারের থিম ‘উৎসবের ভারত’। রাজা বলেন, ‘‘এক দিকে যেমন সারা দেশের নানা উৎসব তুলে ধরা হবে মণ্ডপসজ্জায়, তেমনই
আবার পশ্চিমবঙ্গের নানা পার্বণও আলাদা করে তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে যে সব উৎসবের কথা এই প্রজন্মের অনেকেই জানে না। টুসু, ভাদু উৎসবের কথা ছবি ও শোলার মডেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে। সেগুলি সম্পর্কে তথ্যও লেখা থাকবে।’’
কেষ্টপুরের দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজরিন নাহার জানান, তাঁদের স্কুলে এ বার পুরনো কলকাতার ঐতিহ্যের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হবে।
মণ্ডপসজ্জায় এক দিকে যেমন থাকবে কলকাতার গর্ব ট্রাম, তেমনই থাকবে হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিকশা। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মোকলের মডেল।
কমলা গার্লস স্কুলের সরস্বতী পুজোর থিম হল ‘মা’। প্রকৃতি এবং জন্মদাত্রী মায়ের তুলনা করে মণ্ডপসজ্জা করেছে ছাত্রীরা। যামিনী রায়ের আঁকা ছবিকে মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে তুলে আনছে হালতু কিশলয় শিক্ষা সদনের পড়ুয়ারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)