কোন দিন কোন পুজো দেখবেন, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন। ছবি: ফেসবুক।
শহর কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতায় নয় নয় করে কয়েক হাজার পুজো। প্রতিটির নিজস্বতায় অনন্য। তবে সবগুলি ঘুরে দেখতে গেলে গোটাদশেক দুর্গাপুজো লাগবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিদিন বাছাই ছ’টি পুজো সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাদের অবহিত করছে। পুজো দেখতে গিয়ে যে যে প্রশ্ন আপনার মনে তৈরি হবে, তার জবাব রইল এই নির্দেশিকায়। সকলের পুজো সর্বাঙ্গসুন্দর হোক।
টালা পার্ক প্রত্যয় (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
থিমের পুজো। ভাবনার নাম ‘কহন’। মণ্ডপে ঢুকলে প্রথমে মনে হতে পারে লখিন্দরের লৌহবাসরে প্রবেশ করেছেন। ইতিহাসপ্রেমীরা মণ্ডপের অন্দরমহলকে তুলনা করতে পারেন সুলতানি আমলের কোনও স্থাপত্যের সঙ্গে। তবে সবচেয়ে বেশি চোখ টানবে আলো-ছায়ার অদ্ভুত খেলা।
কেন দেখবেন
বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মিত শিল্পীর ভাবনার ‘কহন’। নটরাজের মূর্তি এবং তার ছায়া সম্মোহিত করবে। লোহা কেটে নির্মিত ভাস্কর্যের ছায়ারূপও অপরূপ। লোহার আলমারির আদলে তৈরি আসনে দেবী বসে বৈঠকখানায়। ২০২৪ সালের শারদোৎসবের প্রস্তুতি পর্বের ঘোষণাও আছে। টালা প্রত্যয়ের প্রতিমা দেখে টালা সেতু দিয়ে টালা বারোয়ারি দেখতে যেতে পারেন।
কোথায় দেখবেন
টালা পার্কের কাছেই।
কী ভাবে যাবেন
মেট্রোয় বেলগাছিয়া স্টেশনে নেমে হেঁটে পৌঁছতে পারেন। বিটি রোড দিয়ে যেতে হলে টালা পার্ক স্টপেজে নামুন। যশোহর রোড দিয়ে পৌঁছতে পারেন মিল্ক কলোনি বা বেলগাছিয়া মোড়ে। সেখান থেকে অল্প হাঁটা। গাড়ি নিয়ে গেলে মণ্ডপের কাছাকাছি পৌঁছনো যাবে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
টালা পার্ক থানার কাছে পার্ক করলেই সুবিধা। তবে জায়গা পেতে সময় লাগতে পারে। গাড়ি নিয়ে গেলেও ঠাকুর দেখতে পুজো কমিটির ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট লাইনে অনেকটা হেঁটে মূল মণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে।
কোথায় খাবেন
গোটা মণ্ডপ ঘুরে দেখতে সময় লাগতে পারে প্রায় আধ ঘণ্টা। মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে একের পর এক অস্থায়ী খাবারের দোকান। পছন্দমতো পুজোর মেনু মিলবে।
কী ভাবে ফিরবেন
যাওয়ার সময় বাসে গেলে ফেরাটা মেট্রোয় হতে পারে।
বাগবাজার সর্বজনীন (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
বিশাল প্রতিমা। বছরের পর বছর ধরে স্মৃতিতে গেঁথে থাকা একচালার ঠাকুরের রাজকীয়তা। ডাকের সাজ। বিরাট মুকুটের তলায় ‘অতসীপুষ্পবর্ণাভাং’ মাতৃমুখ।
কেন দেখবেন
প্রতিমার মুখ দেখলেই মনে হয়, এই হল দুগ্গাঠাকুর! সাবেকিয়ানায় ভরা। বাগবাজারের পুজোয় অষ্টমী হল ‘বীরাষ্টমী’। শাস্ত্র অনুযায়ী, নবরাত্রির অষ্টম দিন বা ‘অষ্টমী’ হল দুর্গাপুজোর পবিত্রতম দিন। আশ্বিন মাসের এই অষ্টমী তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল। তবে বাগবাজারের পুজোয় বীরাষ্টমী যত না শাস্ত্রমতের, তার চেয়ে বেশি জাতীয়তাবোধ আর দেশপ্রেমের। স্বাধীনতার আগে অষ্টমীর সকালে এই পুজোর মাঠে লাঠিখেলা, ছুরিখেলা, কুস্তি হত। ফলে ইতিহাসও রয়েছে এই পুজোয়।
কোথায় দেখবেন
বাগবাজার স্ট্রিটের উপর। বাগবাজার ঘাট থেকে হাঁটাপথ। শ্যামবাজার থেকে বাগবাজার স্ট্রিট ধরে গেলে গিরিশ মঞ্চের পাশে।
কী ভাবে যাবেন
শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটাপথ। গঙ্গাপথেও ফেরিতে বাগবাজার ঘাটে নেমে যাওয়া যায়। চক্ররেলের বাগবাজার স্টেশনে নেমেও যেতে পারেন। সড়কপথে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরলেও সহজে পৌঁছনো যায়।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
কাছে বা দূরে যেখানে জায়গা পাওয়া যায়। রাতের দিকে গেলে গ্যালিফ স্ট্রিটে গাড়ি রাখা যেতে পারে। তেমন ভাবে গাড়ি পার্ক করার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই।
কোথায় খাবেন
পুজোমণ্ডপের বাইরে একাধিক খাবারের দোকান। ঠাকুর দেখে ফিরে শ্যামবাজারে গোলবাড়ির কষা মাংস খেতে পারেন। শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের পাশে মিত্র কাফেতেও যেতে পারেন। শোভাবাজারে অ্যালেন্স কিচেনও ভাল। নবীনচন্দ্র দাশের মিষ্টির দোকান আছে। চিত্তরঞ্জনের মিষ্টির দোকানের দইও চেখে নিতে পারেন।
কী ভাবে ফিরবেন
কলকাতার কোনও প্রান্ত থেকে গেলে মেট্রোতে ফেরা সুবিধাজনক। কাছেই তো শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশন।
কাশী বোস লেন (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
এ বারের থিম ‘চাই না হতে উমা’। কথার মালায় ভাবনায় প্রাণের পরশ দিয়েছেন কবি শ্রীজাত।
কেন দেখবেন
বছরে পাঁচ দিনের জন্য কৈলাস থেকে উমা আসেন। তাঁকে বরণ করে পুজো করা হয়। কিন্তু সাধারণ ঘরের কতশত উমা হারিয়ে যায় চোরাগলির বাঁকে। তাদের বরণ করে ঘরে ফিরিয়ে আনার ভার কে নেবে? অন্ধকার জীবনের হাজার আঘাতের পর তাঁরা কিন্তু আর উমা হতে চান না। এ বার পুজোয় তাঁদের ঘরে ফেরানোর গাথা লিখেছে এই পুজো।
কোথায় দেখবেন
বিধান সরণির উপরে মণ্ডপ।
কী ভাবে যাবেন
নিজস্ব গাড়ি থাকলে যেতে পারেন। না থাকলে মেট্রোয় শোভাবাজার স্টেশনে নেমে হাতিবাগানে আসবেন। সেখান থেকে কাশী বোস লেনে যাওয়া যায়। বাসে এলে বিধান সরণির উপর স্কটিশচার্চ স্কুল স্টপেজে নামতে হবে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
হেদুয়ার কাছেপিঠে কোথাও পার্ক করা যেতে পারে। পায়ে হেঁটে এই পুজো দেখতে যাওয়া বেশি সুবিধাজনক। কাশী বোস লেনের ঠাকুর দেখে উত্তর কলকাতার বাকি ঠাকুর দেখতে পারেন। হাতিবাগানে একের পর এক বড় পুজো রয়েছে।
কোথায় খাবেন
টাউন স্কুলের কাছে একাধিক বিরিয়ানির দোকান রয়েছে। যেতে পারেন সুতানুটি জংশনেও। হেঁটে শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের পাশে মিত্র কাফেতে যেতে পারেন। শোভাবাজারে অ্যালেন্স কিচেনও খাওয়ার পক্ষে ভাল।
কী ভাবে ফিরবেন
হেদুয়াতে রাখা গাড়ি নিয়ে ফিরবেন। হেঁটে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছে গেলে বাস বা মেট্রো পাবেন।
সুরুচি সঙ্ঘ (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
গ্রামবাংলার নানা শিল্পের সমাহার। তাঁবুর আকারের মণ্ডপে পটচিত্র থেকে কাঁথার কাজ, হাতপাখা, মাছ ধরার পলুই— সবই রয়েছে। মাটির প্রতিমায় বাংলার ডোকরা শিল্পের ছোঁয়া। প্রতিমার পিছনে অর্ধচন্দ্রাকৃতিতে ব্যবহার করা হয়েছে ডোকরার কাজের সজ্জা-সামগ্রী।
কেন দেখবেন
সুরুচির মণ্ডপ থিম পুজোর ভিড়ে বরাবরই আলাদা। মাসচারেকের অধ্যবসায়ে তৈরি হয় মণ্ডপ ও প্রতিমা। যত্নের ছাপ প্রাঙ্গণ জুড়ে। একে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজো, তায় তিনি টালিগঞ্জের বিধায়ক। তাই এই পুজোয় গেলে আপনি টলি-তারকাদের দর্শন পেয়ে যেতে পারেন।
কোথায় দেখবেন
নিউ আলিপুরে। দুর্গাপুর ব্রিজের পাশে।
কী ভাবে যাবেন
বিকেল ৩টের আগে যেতে পারলে কালীঘাট বা রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে নেমে অটো পাওয়া যাবে। বিকেলের পরে গেলে কালীঘাটে নেমে হেঁটে দুর্গাপুর ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে। রবীন্দ্র সরোবর স্টেশন থেকেও হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। টালিগঞ্জ ফাঁড়ি দিয়ে রাস্তা আছে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
মণ্ডপের অন্তত ৩ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। রসুই ফ্যাক্টরির কাছে গাড়ি রাখার সামান্য জায়গা আছে বটে। কিন্তু সেখানে জায়গা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
কোথায় খাবেন?
সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর একেবারে কাছাকাছি বড় রেস্তরাঁর চেয়ে কেক-পেস্ট্রি-হালকা নাস্তার দোকান বেশি। গুপ্ত ব্রাদার্স থেকে মনজিনিস— আছে সবই।
কী ভাবে ফিরবেন
মণ্ডপ থেকে বেরোনোর পথ খানিকটা ঘুরে। বেরোবেন নিউ আলিপুরের দিক দিয়ে। সেখান থেকে চেতলা ঘুরে কালীঘাট মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে।
চেতলা অগ্রণী (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
থিম ‘যে যেখানে দাঁড়িয়ে’। সমাজের বড় হয়ে ওঠা, না-ওঠার গল্প তুলে ধরা হয়েছে বাংলার নানা প্রান্তের শিল্পীদের হাতে তৈরি নানা কাজের মাধ্যমে।
কেন দেখবেন
সমাজভাবনা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কী ভাবে সমাজের নীচুতলার শ্রেণিকে শোষণ করে এগিয়ে চলেন অনেকে, সে কথা বলছে কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পুজো। দুই মন্ত্রী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজ্য সামলানোর কাজ চালালেও অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সঙ্ঘের সঙ্গে চেতলা অগ্রণীর পুজোর রেষারেষি নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত।
কোথায় দেখবেন
চেতলা। কেও়ড়াতলা মহাশ্মশানের অদূরে।
কী ভাবে যাবেন
মেট্রোয় কালীঘাট স্টেশন। বিকেল ৩টের আগে গেলে সেখান থেকে অটো পাবেন (পুজোর সময় ভাড়া বেড়ে মাথাপিছু ১৫ টাকা হয়েছে)। অটো না-পেলে পায়ে হেঁটে কেওড়াতলা শ্মশানকে বাঁ হাতে রেখে আদিগঙ্গার উপরের সেতু পেরিয়ে প্রথম মোড় থেকে বাঁ দিকে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
মণ্ডপের আশপাশে কোথাও গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এলাকার বাসিন্দারাও পুজোর সময় গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না। মণ্ডপ থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার দূরে আলিপুরের কোথাও গাড়ি রাখতে হবে। তার পরে হন্টন।
কোথায় খাবেন
রাসবিহারী মোড়ের কাছে বচ্চন্স ধাবা আছে। চেতলার ‘দেশের খাবার’-এর মিষ্টিও বিখ্যাত। চেতলা সারা দক্ষিণ কলকাতার ফুচকা তৈরির আড়ত। তা-ও চেখে দেখতে পারেন।
কী ভাবে ফিরবেন
কালীঘাট থেকে ফের মেট্রো ধরে নিন।
কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
কাঁথার শিল্প চোখ টানবে। বড়সড় মণ্ডপ। কিন্তু ছিমছাম আর রুচিসম্মত। মোমের প্রতিমা। সুচ-সুতো দিয়ে তৈরি নজরকাড়া ঝাড়লণ্ঠন। আলাদা বৈভবের বাহুল্য নেই। মণ্ডপে ঢুকতে হয় একটি গলি ধরে। তার দু’পাশ জুড়ে বাংলার কাঁথাশিল্পের প্রদর্শনী।
কেন দেখবেন
নানা থিমের ভিড়ে একেবারে আলাদা। তবে এই পুজোর আরও একটি আকর্ষণ আছে। এ পুজোর কর্ণধার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোথায় দেখবেন
হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিতে খানিক ঢুকে।
কী ভাবে যাবেন
নামতে হবে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনে। সেখান থেকে হাজরা দিয়ে হেঁটে গিয়ে ঢুকতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিতে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
এই গলিতে বা তার আশেপাশে কোথাও গাড়ি রাখার অনুমতি নেই। খুব বেশি হলে হাজরার দমকলের দফতের সামনে। সেখান থেকে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
কোথায় খাবেন
পুজো দেখে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সদানন্দ রোডে যেতে পারেন। সেখানে বিখ্যাত স্ন্যাক্সের দোকান আপ্যায়ন। এ ছাড়া হাজরা মোড় বা হরিশ মুখার্জি রোডেও প্রচুর খাবারের দোকান আছে। আছে রেস্তরাঁও।
কী ভাবে ফিরবেন
যতীন দাস পার্ক মেট্রো পর্যন্ত হেঁটে চলে যাওয়াই ভাল। নইলে হাজরা মোড় থেকে বিভিন্ন দিকে যাওয়ার বাস পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy