আনন্দ: সাও পাওলোর বাড়িতে সপরিবার ব্রাজিলের ম্যাচ দেখছেন এডভান কারভালো। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
এমনিতে এত সকাল সকাল এ দেশের ঘুম ভাঙে না। তবে শুক্রবারের সাও পাওলোর ছবিটা একেবারে আলাদা। ব্রাজিল-কোস্টা রিকার খেলা যখন এ দিন শুরু হল, ব্রাজিলে তখন সবে সকাল ৯টা। তবে ব্রাজিল যেন প্রস্তুত ছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। প্রায় সকলেই প্রিয় দলের জয় দেখতে ভোর থেকেই ব্রাজিলের রাস্তায় ভিড় করেছেন। কেউ কেউ আবার ঘুমিয়েছেন সমুদ্র সৈকতেই!
বেলা বাড়তেই সেই অপেক্ষা বদলে গিয়েছে বাঁধভাঙা আনন্দে। কোস্টা রিকার সঙ্গে ম্যাচের শত উৎকণ্ঠা তখন ভেসে গিয়েছে আমাজনের জলে। কুটিনহো এবং নেমারের গোল যেন কোথাও মুছিয়ে দিয়েছে জার্মানির সঙ্গে সেই রক্তাক্ত ক্ষতের স্মৃতিও। কেউ রাস্তাতেই বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনে ব্যস্ত, কাউকে সাতসকালেই ঘিরে ধরেছে মধ্যরাতের উন্মাদনা।
ভারতে যুব খেলোয়াড়দের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া ব্রাজিলীয় এডভান কারভালো সাও পাওলোর বাড়ি থেকে ফোনে জানালেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ডেজ়ি বৃহস্পতিবার রাত জেগেছেন। সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন বন্ধুর বাড়িতে। আর্জেন্টিনার শোচনীয় হার দেখে সেখানেই রাত কাটিয়ে ভোরের দিকে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। তবে ঘুমোনো হয়নি। তাঁদের ঘুমোনোর কোনও ইচ্ছে নেই এ দিনও। পার্টি চলবে রাতভর। সেটাই স্বাভাবিক। তিনি বললেন, ‘‘প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড়েরা দেখিয়ে দিয়েছেন, কেন তাঁরা ব্রাজিল।’’ সকাল সকাল বসার ঘরে লাগানো পতাকা এবং ফুটবল নিয়ে এর পরে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়।
এডভানদের জয়োচ্ছ্বাসে এ দিন আগাগোড়া ছিল আর একটি পতাকাও। সেটি ভারতীয় তেরঙা। হলদে-সবুজ-নীল এবং গেরুয়া-সাদা-সবুজ রঙেই যেন মাখামাখি হয়েছে সব ফুটবল আবেগ। প্রবল জয়োচ্ছ্বাসের মধ্যেই এডভান বললেন, ‘‘কলকাতায় এত দিন কাটিয়েছি। আমরা যতটা ব্রাজিলীয়, ঠিক ততটাই ভারতীয়। কলকাতার ফুটবল-উন্মাদনা আমার খুবই জানা। আজ আমাদের মতো কলকাতার মানুষও ব্রাজিলের জয় চেয়েছেন।’’
বছর চার আগে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ডাকে ভারতে আসেন এডভান। আনন্দপুরে ক্যাম্পে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন তিনি। সেই সময়ে নরেন্দ্রপুরের ফ্ল্যাটে স্ত্রী এবং তিন সন্তান ক্যামিলে, মার্কোস ভিনিসিয়াস এবং এভলিনকে নিয়ে থাকতেন তিনি। দেখেছেন ফুটবল ঘিরে কলকাতাবাসীর আবেগ। নিজের দেশ থেকে ফোনে তিনি বলছিলেন, ‘‘দেখেছি খেলা থাকলে কলকাতা কী রকম ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় ভাগ হয়ে যায়। মাঝেমাঝে বুঝতেই পারতাম না ভারতে আছি না ব্রাজিলে! আর্জেন্টিনার খেলা নিশ্চয় ওদের বহু সমর্থকের মন ভেঙেছে। তবে ব্রাজিল আজ মন ভরিয়ে দিয়েছে।’’
বিশ্বকাপের আবহে এ দিন মিশে গিয়েছে কলকাতা ও সাও পাওলোর আবেগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বাজতেই পতাকা নিয়ে বিভিন্ন পাড়ায় বেরিয়ে পড়েছিলেন ব্রাজিল সমর্থকেরা। হাওড়া পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রাজিলের জয়ে পাঁচ হাজার রসগোল্লা বিলি করেছেন মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘ব্রাজিল ব্রাজিলই। ওস্তাদের মার তো শেষ রাতেই হয়।’’
এডভান বলছেন, ‘‘কোস্টা রিকা রক্ষণাত্মক খেলবে না জানতাম। ওরা জিততে চাইছিল। এতে আখেরে ব্রাজিলেরই সুবিধা হয়েছে। একা নেমার নয়, ব্রাজিল একটা দল
হিসেবে খেলেছে।’’
এডভান একা নেমারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে না চাইলেও তাঁর ১০ বছরের কন্যা ক্যামিলে আবার নেমারের অন্ধভক্ত। নিজের ঘরে সে বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই স্বপ্নের খেলোয়াড়ের পোস্টার লাগিয়ে ফেলেছে। ‘‘মেয়ে তো খালি নেমারের পোস্টারে চুমু খাচ্ছে। ওরা দেশে ফিরলে দেখা করতে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেছে,’’ বলছেন গর্বিত বাবা।
তবে জয়োচ্ছ্বাসে ভাসতে চান না এডভানের স্ত্রী ডেজ়ি। তিনি বাস্তববাদী। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘বিশ্বকাপের এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। আরও ভাল করে তৈরি হতে হবে। অনেক উত্তর দেওয়া বাকি।’’ শুক্রবার রাতেও জয়ের আনন্দে ঘুমোয়নি ব্রাজিল। রাত না জাগুক, শহর কলকাতাও আপাতত ব্রাজিল-জ্বরে আক্রান্ত। সঙ্গে সতর্কও।
অনেক উত্তর দেওয়া বাকি যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy