Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

বিক্রি নেই, ভয়েই রথের চাকা ‘বসে গিয়েছে’

বরাত না এলে আগাম কেনা রথ তৈরির কাঁচামাল নিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না উত্তম পাল নামে আর এক কারিগর।

মন্দা: চাহিদা তেমন নেই, তবু তৈরি হচ্ছে রথ। বৃহস্পতিবার, ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

মন্দা: চাহিদা তেমন নেই, তবু তৈরি হচ্ছে রথ। বৃহস্পতিবার, ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০২:৪৯
Share: Save:

ইস্কন মন্দির কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিলেন, ভিড় এড়াতে এ বার আর রথ নামাচ্ছেন না তাঁরা। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট পুরীর রথযাত্রাও এ বারের মতো স্থগিত রাখারই নির্দেশ দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী মঙ্গলবার রথযাত্রার আগে তাঁদের তৈরি রথ বিক্রি নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব শহরের রথের কারিগরেদের। তাঁদের অধিকাংশই বলছেন, “প্রতি বার যা হয়, তার ১০ শতাংশও বরাত মেলেনি এ বার। করোনার ভয়ে রথ টানার ঝোঁক উধাও এ বার। তবু আগামী দু’দিনে চাহিদা বাড়তে পারে মনে হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্ট পুরীর রথই যখন বন্ধ করে দিল, আর কী হবে!”

তাঁদের কেউ প্রতিমা তৈরির মাঝেই এই সময়টায় রথ বানান। কেউ আবার টানা লকডাউনে অন্য ব্যবসা বা কারখানার কাজ বন্ধ থাকায় এ বার রথ বানিয়েই সংসারে কিছুটা সুরাহা করবেন ঠিক করেছিলেন। হিন্দমোটরের চাকরি হারানোর পরে পাড়ায় চায়ের দোকান খুলেছিলেন মানিকতলার রবি শর্মা। সেইসঙ্গে এই সময়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য স্ত্রীকে নিয়ে রথ তৈরি করতেন তিনি। টানা লকডাউনে চায়ের দোকান বন্ধ ছিল। কন্টেনমেন্ট জ়োন হওয়ায় আনলক ১-পর্বেও দোকান খোলার সাহস পাননি তিনি। রবির কথায়, “রথের বিক্রির উপরে এ বার বড় ভরসা ছিল। অন্য বার অন্তত এক হাজার রথ তৈরির বায়না থাকে, এ বার এসেছে মোটে দু’শোটি।”

রবি জানান, পাইকারি দরে একতলা রথের দাম ৬০ টাকা। দোতলা এবং তিনতলা রথের দাম যথাক্রমে ৮০ এবং ১১০ টাকা। শহর এবং শহরতলির পাইকারি বিক্রেতারা তাঁদের থেকেই রথ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এ বার ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেকেই জানিয়েছেন, দূর থেকে রথ নিতে আসবেন না। তাই বাজারে রথের চাহিদাও নেই।

আরও পড়ুন: আত্মীয়তায় বাঁধা পড়ে এ শহরই চিনাদের ভাল-বাসা

বরাত না এলে আগাম কেনা রথ তৈরির কাঁচামাল নিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না উত্তম পাল নামে আর এক কারিগর। ক্যানাল ইস্ট রোডে প্রতিমা গড়ার পাশাপাশি এই সময়ে তিনি রথও তৈরি করেন। অন্য বারের মতো এ বারেও কয়েক লক্ষ টাকার কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন তিনি। উত্তম বলেন, “রাতে ঘুম হয় না। এত টাকার কাঁচামাল নিয়ে কী করব? অন্য বার কম করে ১৬ হাজার রথ তৈরির বরাত আসে। এ বার মাত্র চার হাজার পেয়েছি। সব দিক থেকেই আমাদের মেরে ফেলল করোনা।” গণেশ পাল নামে এক কারিগরের চিন্তা, “যেখানে তিন হাজার হয় সেখানে তিনশোটির বায়না এসেছে। নিজেরা বানিয়েই বা বিক্রি করতে বসব কোথায়? বহু বাজার তো খোলেইনি। লেক মার্কেটের বাজার কর্তৃপক্ষ আবার বলে দিয়েছেন, বেপাড়ার ছেলেদের বসতে দেওয়া হবে না। আমাদের থেকেই নাকি করোনা ছড়ানোর ভয় বেশি।”

শ্যামল কর্মকার নামে কালীঘাট রোডের এক রথের কারিগর বলেন, “করোনার মধ্যে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের রথ দিয়ে বাইরে বার করতেই হয়তো ভয় পাচ্ছেন। ভয়েই রথের চাকা বসে গিয়েছে।”

আরও পড়ুন: ঝুঁকি জেনেও ছুটছেন ওঁরা কোভিড-দেহ নিয়ে

একই ভয়ের কথা বললেন কলকাতা ইস্কন মন্দিরের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস। তাঁর কথায়, “ইস্কনের কলকাতার রথ উৎসবেই ন’দিনে ১৬ লক্ষ লোক হয়। রথযাত্রার দিন আমাদের রথ যে ন’কিলোমিটার রাস্তা ঘোরে, তাতেই দড়ি ধরে হাঁটেন প্রায় তিন লক্ষ লোক। এই পরিস্থিতিতে এত ভিড় ক্ষতিকর। আমরা তাই রথযাত্রা বাতিল করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমপান বিধ্বস্ত এলাকায় মানুষের সাহায্যের জন্য ঘুরছি।”

বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে সংসার চালানো কাঁকুড়গাছির সোনালি সাহা বললেন, “সব উৎসব একে একে বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের পেট চলবে কী করে? প্রতি বার কোনও না কোনও রথের মেলায় রথ নিয়ে বসতাম। মেলায় তো এমনিতে যাওয়া হয় না! রথ দেখা, কলা বেচা হয়ে যেত আর কী!”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Rathayatra Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy