Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Health

করোনা-আতঙ্কে মার খাচ্ছে মুরগির ব্যবসা

দমদমের মাংস ব্যবসায়ী উত্তম হালদারের কথায়, ‘‘সপ্তাহে প্রায় ২০০ কেজি মুরগির মাংস বিক্রি করতাম। এখন অর্ধেকও বিকোচ্ছে না।’’

ফাঁকা: মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় কম। বুধবার, হাওড়ার কদমতলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ফাঁকা: মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় কম। বুধবার, হাওড়ার কদমতলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০২:৩৩
Share: Save:

বরাহনগরের পলাশ সাহা মুরগির ব্যবসা করেন। প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন খদ্দের তাঁর কাছ থেকে পোলট্রির মুরগির মাংস কিনতেন। কিন্তু খদ্দেরের সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছে। বুধবার পলাশ বললেন, ‘‘আজ মাংস কিনেছেন মাত্র ৩৩ জন। করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের জেরে বেশির ভাগ মানুষই মুরগির মাংস কিনছেন না। গত ১৫ দিনে আমার ৭০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে।’’ মাসখানেক আগেও শহরের বিভিন্ন বাজারে পোলট্রির মুরগির মাংসের দাম যেখানে ১৬০-১৮০ টাকার মধ্যে ছিল, বুধবার সেখানে তা বিকিয়েছে ১০০-১২০ টাকায়।

উল্টোডাঙা এলাকার বাসিন্দা কৌশিক সামন্ত নিয়মিত বাজার করেন উল্টোডাঙা বাজার থেকে। এ দিন সকালে বাজারে এলেও মুরগির মাংসের ধারেকাছেও গেলেন না তিনি। পরিচিত মাংস বিক্রেতা অনেক কাকুতিমিনতি করলেও সোজা মাছের বাজারের দিকে হাঁটা দিলেন কৌশিক। বললেন, ‘‘করোনা-আতঙ্কে মুরগির মাংস কেনা তো দূর, দোকানের ধারেকাছেও যাচ্ছি না।’’ দমদমের মাংস ব্যবসায়ী উত্তম হালদারের কথায়, ‘‘সপ্তাহে প্রায় ২০০ কেজি মুরগির মাংস বিক্রি করতাম। এখন অর্ধেকও বিকোচ্ছে না।’’ উত্তরের মানিকতলা, উল্টোডাঙা, দমদম থেকে শুরু করে দক্ষিণের যাদবপুর, লেক মার্কেট বা গড়িয়াহাট— সর্বত্রই মুরগির মাংস বিক্রিতে ভাটা।

নিউ মার্কেটে পোলট্রির মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম বারি বললেন, ‘‘করোনা-আতঙ্কে নিউ মার্কেট চত্বরের বিভিন্ন হোটেল, অতিথিশালা ও রেস্তরাঁয় মুরগির পদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। পরিবর্তে মাছ ও খাসির মাংসের চাহিদা বাড়ছে।’’ যাদবপুর বাজারের মাংস বিক্রেতা রাকেশকুমার সাউ বললেন, ‘‘আমার এখানে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা গত দু’সপ্তাহ ধরে কেউ মাংস কিনছেন না। তবে নিম্নবিত্তেরা অনেকেই মাংস কিনছেন।’’

পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির কথায়, ‘‘গত তিন সপ্তাহে সারা কলকাতায় পোলট্রির মুরগির মাংস বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোলট্রির মুরগি খেলে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে গুজব ছড়িয়েছে। সেই কারণেই মুরগি কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন অধিকাংশ ক্রেতা।’’ তিনি আরও জানান, শুধু মাংস নয়, করোনা-গুজবের জেরে ডিমের বিক্রিও কমে গিয়েছে প্রায় চল্লিশ শতাংশ। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যের পোলট্রি শিল্পে এখন প্রতি সপ্তাহে ১৬০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। এই ভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা খুব সমস্যায় পড়ে যাবেন।’’

করোনাভাইরাস আতঙ্কের জেরে সপ্তাহ দুয়েক আগেই আলিপুর চিড়িয়াখানার ভিতরে একটি ক্যান্টিনে মুরগির পদ রাখা বন্ধ হয়ে যায়। ট্যাংরার চায়না টাউন থেকে টেরিটি বাজার, ধর্মতলা থেকে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক চাইনিজ রেস্তরাঁ— প্রায় সর্বত্রই কমেছে ভিড়। ট্যাংরার একটি রেস্তরাঁর ম্যানেজার সঞ্জয় পাল বললেন, ‘‘গত এক মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ ভিড় কমে গিয়েছে চায়না টাউনে।’’ এর কারণ কী? সঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘এই এলাকার নামটা চায়না টাউন। চিনেই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। নিজেই বুঝে নিন, কেন ভিড় কম!’’

তবে করোনা-গুজব কমাতে বুধবার নিজের ছেলের বৌভাতে মুরগির মাংসের ছ’রকমের পদ রেখেছেন উল্টোডাঙার মুরগি ব্যবসায়ী অলোক গড়াই। তাঁর কথায়, ‘‘খাসির মাংস, মাছের পদ তো থাকছেই। অতিথিরা যাতে পেট ভরে চিকেন খান, তার জন্য ছ’খানা চিকেনের পদ রেখেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Chicken Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy