বিক্রি নিয়ে ধোঁয়াশা। প্রতীকী ছবি।
গত দু’বছরে উৎসবের মরসুমে কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, তা ধরতেই কালঘাম ছুটেছিল পুলিশের। সবুজ বাজির বাক্সের গায়ে কিউআর কোড থাকে, নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে ‘স্ক্যান’ করলেই কোনটা আসল আর কোনটা নকল বেরিয়ে আসবে। এই পথে এগিয়েও ভুগতে হয়েছিল তদন্তকারীদের। অভিযোগ উঠেছিল, সাধারণ কাগজেই কিউআর কোডের মতো ছেপে বাক্সের গায়ে সেঁটে দেদার বিক্রি হচ্ছে সবুজ বাজির নামে নিষিদ্ধ বাজি!
চলতি বছরের শুরু থেকেই এই বিড়ম্বনা কাটাতে সতর্ক হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সে জন্য এই রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীদের সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছিল। গত জুলাইয়ে কলকাতায় আসেন ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নিরি-র আরও পাঁচ বিজ্ঞানী। বাজি ব্যবসায়ীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন তাঁরা। প্রশিক্ষণ নিয়ে এই রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীদের তৈরি ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি এবং তুবড়ি পরীক্ষার জন্য নিরি-র অফিসে পাঠানো হয়।
বাজি ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রের খবর, নিরি-র দফতরে একাধিক পরীক্ষার পরে সব ক’টি বাজিই পাশ করেছে। এর পরেই নিরি-র তরফে সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র মিলেছে। এ বার আসতে শুরু করেছে বৈধ কিউআর কোড। প্রথম ব্যবসায়ীর ফুলঝুরির জন্য দেওয়া সেই কিউআর কোড এসে পৌঁছেছে শুক্রবার। পরীক্ষায় পাশ করা শুকদেব নস্কর নামে এই ব্যবসায়ীর অন্য বাজির পাশাপাশি আসার কথা অন্য ব্যবসায়ীদের কিউআর কোডও।
শুকদেব জানান, পরীক্ষায় পাশ হওয়া প্রতিটি বাজির জন্য আলাদা আলাদা কিউআর কোড আসার কথা। এই কিউআর কোডের উপরে সিএসআইআর এবং নিরি-র লোগো রয়েছে। নিরি-র নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে স্ক্যান করলেই প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের পাশাপাশি কোন কোন উপাদান দিয়ে বাজিটি তৈরি হয়েছে তা-ও জানা যাবে। যদিও শুকদেবের কথায়, ‘‘কোড এসে গেলেও আমাদের এখানে সবুজ বাজি তৈরির জটিলতা কাটেনি। বাজি তৈরির লাইসেন্স থাকলেও বিক্রি করার লাইসেন্স এখনও মিলছে না।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ বাজি ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু করোনা অধ্যায়ে বাজির উপরে আরোপ হওয়া নিষেধাজ্ঞায় বিক্রির লাইসেন্স আর নবীকরণই হচ্ছে না। দমকল থেকে পরিবেশ বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। পরিবেশ বিভাগ এখনও সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।
দমকলের দাবি, পরীক্ষায় এই রাজ্যের সবুজ বাজি পাশ করলেও বাজি বিক্রি ঘিরে ধোঁয়াশা কাটেনি। কারণ, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এখনও বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ। সুপ্রিম কোর্টও বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞার পক্ষেই ছিল। এ নিয়ে পরিবেশ দফতর কোন পথে এগোয়, তা দেখে দমকল বিভাগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে। পরিবেশ দফতরের আধিকারিকদের আশঙ্কা, যতই সবুজ বাজির কিউআর কোড আসুক, এর পরেও নিষিদ্ধ বাজি চোরাগোপ্তা বিক্রি হতেই পারে। পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানান, রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ অর্গানাইজ়েশন’-এর (পেসো) ছাড়পত্র পাওয়া বাজি কারখানা তিনটি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকায় রয়েছে ৩৭টি বাজি কারখানা। বাকি সব কারখানা অবৈধ। এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘নজরদারির ব্যবস্থা কই? ভুয়ো কোড ছেপে বাজি বিক্রি হওয়া কী এমন কঠিন! পুলিশেরও কি যাচাই করার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ রয়েছে?’’
‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না যদিও আশঙ্কার দিকটি মেনে নিয়েই বললেন, ‘‘আইন মেনে সবুজ বাজি তৈরি এবং বিক্রির ভাল উদ্যোগকে এই যুক্তিতে অস্বীকার করা যায় না। এত দিন সবুজ বাজি নিয়ে সচেতনতাই ছিল না। এ বার যখন ব্যবসায়ীরাই এগিয়ে আসছেন, তখন অবশ্যই সরকারের সাহায্য করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy