ফাইল চিত্র।
অসুস্থ বোধ করায় ৮২ বছরের বৃদ্ধকে তড়িঘড়ি স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। জরুরি বিভাগে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, বৃদ্ধ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সমস্যা রয়েছে মস্তিষ্কেও। তাই অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়োলজি এবং নিউরোলজি পরিষেবাই নেই! ওই দু’টি বিভাগ নেই জেনেও রাতে ঝুঁকি নিয়ে রোগীকে সেখানে ভর্তি করছেন বলে লিখিত ভাবে জানান পরিজনেরা। অবশ্য পরদিন সকালে তাঁরা কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যান বৃদ্ধকে।
ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সম্পর্কে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, কোনও দুর্ঘটনায় ভাঙা হাড়ের দ্রুত অস্ত্রোপচার বা প্লাস্টিক সার্জারির পরিষেবাও মেলে না। এমনকি রাতে যদি কারও গলায় কিছু আটকে যায়, তা বার করার জন্য ইএনটি বিভাগের জরুরি পরিষেবাও অমিল। এমনই সব অভিযোগ কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ঘিরে। ২০১১ সালে সাগর দত্ত হাসপাতালটি মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তরিত হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বড় অংশের মানুষকে উন্নত চিকিৎসা পেতে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আর ছুটতে হবে না বলেই সকলে আশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
১০ বছরের বেশি কেটে গেলেও শহরতলির একটি মেডিক্যাল কলেজে হৃদ্রোগ, কিডনির সমস্যার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বিভাগ চালু করা গেল না কেন, সেই প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি পরিষেবা দূর অস্ত্। স্পেশ্যালিটি যে সব বিভাগ রয়েছে, এত বছর কেটে গেলেও সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজ স্তরের পরিষেবাই মেলে না। এখনও সেই স্টেট জেনারেল বা মহকুমা স্তরের হাসপাতালের মতো হয়ে রয়েছে।’’
এ দিকে, নৈহাটি, ভাটপাড়া, ব্যারাকপুর, পানিহাটি-সহ বিভিন্ন জায়গার স্টেট জেনারেল, জেলা বা মহকুমা স্তরের হাসপাতাল থেকে রোগীদের এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সুপার স্পেশ্যালিটি পরিষেবা দেওয়ার পরিস্থিতি হলেই রোগীকে ফের রেফার করা হয় কলকাতায়। কামারহাটির ওই মেডিক্যাল কলেজে জেনারেল সার্জারি, মেডিসিন, স্ত্রীরোগ, নাক-কান-গলা, অস্থি, ত্বকের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সব বিভাগের আলাদা ওয়ার্ড নেই। জানা যাচ্ছে, শল্য, স্ত্রীরোগ, মেডিসিন বিভাগ থেকে কিছু কিছু শয্যা দেওয়া হয়েছে নাক-কান-গলা, অস্থি, ত্বকের রোগের চিকিৎসার জন্য। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এতেই এই অবস্থা। সেখানে কার্ডিয়োলজি, নিউরো মেডিসিন, প্লাস্টিক সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, নেফ্রোলজি বিভাগহীন হাসপাতালে সেই সবের পরিষেবা পাওয়াদূর অস্ত্।’’
সূত্রের খবর, একটা মাত্র ল্যাপারোস্কোপি যন্ত্র দিয়ে অস্ত্রোপচার সামলাতে হয় শল্য এবং স্ত্রীরোগ বিভাগকে। হাড়ের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় ‘ইমপ্ল্যান্ট’-এর জোগান দীর্ঘ দিন ধরে নেই। ইএনটি এবং ত্বক-সহ অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘হৃদ্রোগে আক্রান্ত এবং পথ দুর্ঘটনার অনেক রোগী আসেন এখানে। কিন্তু ন্যূনতম কিছু চিকিৎসা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। এখানে সিসিইউয়ে শয্যা মাত্র ১২টি। রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিটে ৬টি শয্যা।’’ চিকিৎসক মহলের একাংশের কথায়, ‘‘নতুন যে মেডিক্যাল কলেজগুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে পরিকাঠামো উন্নত করতে কয়েক বছর সময় লাগবে ঠিকই। কিন্তু সাগর দত্তে ১০ বছরে কেন একটাও সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগ চালু হল না, সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন।’’
এর উত্তরে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলছেন, ‘‘ওই হাসপাতাল ভবনের উপরে আরও তিনটি তল তৈরি করা হবে। সেখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার-সহ অন্যান্য ওয়ার্ডের পরিষেবা চালুর ব্যবস্থা হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে সুপার স্পেশ্যালিটি পরিষেবাও চালু করা হবে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কামারহাটির ওই মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসার ক্লিনিকও শীঘ্রই চালু করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy