পুষ্পকের মা প্রতিভা স্বর্ণকার বলেন, ‘‘ছেলে দেশে ফেরেনি। কিন্তু নিরাপদে রয়েছে। সেটুকু জেনে আমরা কিছুটা আশ্বস্ত। এ বার ধীরে ধীরে সবাইকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকেরা আমাদের জানিয়েছেন।’’
আশ্রয়: মঙ্গলবার দুপুরে রোমানিয়া শিবিরে সহপাঠীদের সঙ্গে পুষ্পক স্বর্ণকার। ছবি: পুষ্পক
অবশেষে কিছুটা স্বস্তির খবর। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রোমানিয়ার অস্থায়ী শিবিরে পৌঁছেছেন বাড়ির ছেলে। সোনারপুরের কামরাবাদের বাসিন্দা, ইউক্রেনে ডাক্তারি পাঠরত পুষ্পক স্বর্ণকারের এই সংবাদে অনেকটা নিশ্চিন্ত তাঁর পরিবার।
গত শনিবার ইউক্রেনের টার্নোপিল থেকে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সোমবার রাতে রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছেছেন পুষ্পক-সহ ভারতের প্রায় তিনশো ডাক্তারি পড়ুয়া। পুষ্পকের কথায়, ‘‘হস্টেল থেকে আমরা কয়েক জন সহপাঠী মিলে বাস ভাড়া করে রোমানিয়া সীমান্তের থেকে অনেকটা দূরে পৌঁছই। ভারতীয় দূতাবাসের তরফ থেকে কোনও সাহায্য আমরা পাইনি। এর পরে দীর্ঘ পথ হেঁটে সীমান্তের কাছে যেতেই চেক পোস্টে পাহারায় থাকা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর নজরদারির সামনে পড়তে হয়। সেই বাধা টপকে তবেই রোমানিয়া সরকারের দেওয়া সাময়িক সময়ের ভিসার অনুমোদন মিলেছে।’’ ইউক্রেনে এখন তাপমাত্রা রাতের দিকে মাইনাস সাত ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে। তীব্র সেই ঠান্ডার মধ্যে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে রোমানিয়া সীমান্তে পুষ্পকেরা পৌঁছেছিলেন বলে জানাচ্ছেন।
ইউক্রেনের আকাশে চক্কর দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। মাঝেমধ্যেই গুলি আর বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শোনা যাচ্ছে। একের পর এক ধ্বংসস্তূপ পেরোতে পেরোতে সীমান্তের দিকে এগোনোর সময়ে আতঙ্ক আরও চেপে বসছিল পড়ুয়াদের। তাই সীমান্তের অনেকটা দূরে বাস থামতে আর বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত পাননি পুষ্পকরা। পাছে দলছুট হলে কোনও বিপদ হানা দেয়, তাই ৩৬ কিলোমিটার পথ দ্রুত হেঁটে পেরিয়ে এসেছেন ওঁরা। ওই পড়ুয়া জানাচ্ছেন, রোমানিয়ায় প্রবেশ করতেই হাতে এসেছিল সাময়িক ভিসা। এর পরেই ভারতীয় পড়ুয়াদের একটি অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই শিবিরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার, জল, গরম জ্যাকেট, কম্বল, জুতো, মোজা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে বাসে করে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, রোমানিয়া সীমান্ত থেকে দেশে ফেরানোর দায়িত্বটুকুই শুধু নিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস। ইউক্রেনের ভিতরে নিজেদের চেষ্টাতেই সফর করেছেন তাঁরা।
পুষ্পকের মা প্রতিভা স্বর্ণকার বলেন, ‘‘ছেলে দেশে ফেরেনি। কিন্তু নিরাপদে রয়েছে। সেটুকু জেনে আমরা কিছুটা আশ্বস্ত। এ বার ধীরে ধীরে সবাইকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকেরা আমাদের জানিয়েছেন।’’ ছেলের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা পর পরই ভিডিয়ো কলে কথা বলে নিচ্ছেন মা প্রতিভা ও বাবা সুজিত।
পুষ্পকের বাবা বলেন, ‘‘ছেলেকে কেমন আছিস জানতে চাইলেই ভিডিয়ো কল করে শিবিরের ছবি ঘুরে ঘুরে আমাদের দেখাচ্ছে। সেখানেই দেখলাম, এক ছাদের নীচে প্রায় শতাধিক মেডিক্যাল পড়ুয়াকে রাখা হয়েছে। গত শনিবার ছেলের সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, চোখে-মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ছিল। সেই ছেলেরই মুখে মঙ্গলবার হাসি দেখে নিজেরাও অনেক শান্তি পেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy