Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Dead Body Preservation

Body Donation: দেহদানের বৈষম্যে ভুগছে জেলা মেডিক্যাল কলেজগুলি

এ রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ২৬টি। এ ছাড়াও রয়েছে আয়ুর্বেদিক এবং হোমিয়োপ্যাথিক কলেজ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২২ ০৬:২৫
Share: Save:

কোথাও সংরক্ষিত (এমবামড) শব উপচে পড়ছে, কোথাও আবার চেয়েও মিলছে না দেহ। ফলে দেহদানে ইচ্ছুক পরিবারকে কখনও ফিরে আসতে হয়, কখনও বহু খুঁজেও মেলে না ডাক্তারি পড়ুয়া বা গবেষকদের জন্য জরুরি শব। এ ক্ষেত্রে কোনও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ভবনে রিকুইজ়িশন দিলে তবেই অন্য কলেজ থেকে সংরক্ষিত শব পান। এমন বৈষম্য যে দূর করা জরুরি, তা মানছেন দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী এবং চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এর জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন।

এ রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ২৬টি। এ ছাড়াও রয়েছে আয়ুর্বেদিক এবং হোমিয়োপ্যাথিক কলেজ। তবে সব মেডিক্যাল কলেজে দেহদানের অনুমতি নেই। বেসরকারি কলেজে দেহদান হয় না। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়ম মেনে দেহ সংরক্ষণ করা যায় রাজ্যের প্রায় সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজেই।

কলকাতার সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দেহদানের পরিকাঠামো সব চেয়ে ভাল বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেহদানে ইচ্ছুক পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ যে ওঠে, মানছেন এক স্বাস্থ্যকর্তাই। ব্যাখ্যা হিসেবে উঠে আসছে দু’টি কারণ। হয় সংরক্ষিত দেহের ভারে ফ্রিজ়ার উপচে পড়ছে, অথবা ছুটির দিন বলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহারের মতো মেডিক্যাল কলেজগুলি দেহ পায় না বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তখন রিকুইজ়িশন দিয়ে সংরক্ষিত দেহ মেলে অথবা অজ্ঞাতপরিচয় দেহ দিয়েই কাজ চালাতে হয়।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এই রাজ্য থেকে সংরক্ষিত দেহ আগরতলা, অসম, মণিপুরের মেডিক্যাল কলেজে যায়। সেখানে দেহদান সম্পর্কে সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যেও সর্বত্র সচেতনতা এক রকম নয়। এখনও দেহদান আন্দোলন সীমাবদ্ধ মূলত কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়।’’ অ্যানাটমির চিকিৎসকদের দাবি, কলেজগুলিতে দান করা দেহের জোগান স্বাভাবিক রাখতে হলে প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলির গাঁটছড়া বেঁধে দেওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে কলকাতার কলেজে সংরক্ষিত দেহ অতিরিক্ত হয়ে গেলে তা অন্য কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

দেহদান করার পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। পড়াশোনা এবং গবেষণার কাজে ওই শব ব্যবচ্ছেদ হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্গ কলেজের মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত থাকে। নির্দিষ্ট সময় পরে প্রক্রিয়া মেনে তা সরিয়ে দেওয়া হয়। একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমির বিভাগীয় প্রধান নন্দিতা দাস জানাচ্ছেন, সংক্রামক রোগ, ক্যানসার, ব্লকেজ প্রভৃতি কারণে কিছু দেহ সংরক্ষণ করা যায় না। সেগুলিকে কঙ্কালে (স্কেলিটন) পরিণত করা হয়। তবে সেই পরিকাঠামোও রয়েছে হাতে গোনা কিছু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। খোলামেলা জায়গা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডোমের অভাব এর কারণ। তাই জনবহুল এলাকায় থাকার কারণে এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও এই পরিকাঠামো নেই।

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলছেন, ‘‘তিন দশক আগে ব্যবচ্ছেদের চাহিদা থাকলেও দেহ পাওয়া যেত না। আর এখন চাহিদা কমেছে, কিন্তু কলকাতার সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দেহের ভ্যাট (যে চৌবাচ্চায় বিশেষ মিশ্রণে দেহ ডোবানো থাকে) ভর্তি থাকে।’’ মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ছে, অথচ চাহিদা কমছে কেন? তপনবাবুর মতে, অ্যানাটমির জন্য এখন আগের চেয়ে অর্ধেক সময় পাওয়া যায়। আগে দশ জন পড়ুয়া মিলে একটি দেহ ব্যবচ্ছেদ করতেন। এখন শিক্ষক-চিকিৎসকেরা গোটা ব্যাচের জন্য বড়জোর দু’টি দেহ ব্যবচ্ছেদ করেন।

ছুটির দিনে দেহদান না-হওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জরুরি পরিষেবা বন্ধ থাকা কোনও যুক্তি হতে পারে না। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে স্বাস্থ্য ভবন থেকে এক-দু’জন, দেহদান আন্দোলনের সংগঠনের প্রতিনিধিরা এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। রোটেশন পদ্ধতিতে কর্মীদের দায়িত্ব দিক কলেজ।’’ দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ‘গণদর্পণ’-এর সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘কলেজগুলির সঙ্গে হাসপাতাল থাকে। ছুটির দিনে সেখানকার মর্গে কি দেহ রাখা যায় না? তাতেও তো সমস্যা মিটতে পারে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Dead Body Preservation Body Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE