Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
taliban

Afghanistan Crisis: ময়দানি ‘রাগবি-হিরো’র মন পড়ে কাবুলে

অতীত: কাবুলে কোচ থাকাকালীন জাফর (মাঝে)।

অতীত: কাবুলে কোচ থাকাকালীন জাফর (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫১
Share: Save:

কাবুলে সশব্দ বিস্ফোরণের মধ্যে ইদের নমাজের ছবি দেখে চরম ব্যথিত হয়েছিলেন তিনি। আবার নীরজ চোপড়ার অলিম্পিক্স সোনা জয়ে উচ্ছ্বসিত। তালিবান কাবুল দখলের পরে অসহায় ক্ষোভে সমাজমাধ্যমে পাক-বিরোধী #স্যাংশনপাকিস্তান ‘স্টেটাস’ দিয়েছেন।

জাফর খানের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম জুড়ে এমনই নানা রঙা অনুভবের সাক্ষ্য। তিনি কতটা ভারতীয় আর কতটা আফগান, কাটাছেঁড়া অবান্তর খিদিরপুরের যুবকের কাছে।

“তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের পরে আমার মনপ্রাণ এখন কাবুলে আপন চাচা, ডক্টর কবীরের বাড়িতে পড়ে আছে। বার বার ফোনে কথা বলছি। ওখানে এখন প্রায় কার্ফু! আমার তুতো বোনেরা তো বাড়িতে ভয়ে সিঁটিয়ে”, ওমানের মাস্কাট থেকে ফোনে কথাগুলো বলছিলেন মধ্য তিরিশের আফগান বংশোদ্ভূত ভারতীয় যুবক। আবার একবালপুরের বাড়িতে থাকা মা, দাদা কিংবা দিল্লিতে বোনটার জন্যও ভীষণ মনখারাপ। জাফর বলছেন, “ওঁদের পাশেও যদি এখন থাকতে পারতাম!” জন্মেছেন বোকারোয়। ওমানে পেশায় ফিটনেস বিশারদ। রাগবির খেলোয়াড় ও কোচ। কলকাতার ‘জাঙ্গল ক্রোজ়’, বাংলা এবং ভারতীয় দলে দাপুটে আউটসাইড সেন্টারের প্রতি নিঃশ্বাসে মিশে ময়দানের সবুজের গন্ধ। এবং এই সঙ্কটে তাঁর ‘দ্বিতীয় স্বদেশ’ আফগানিস্তানের জন্য কিছু করতেও মুখিয়ে আছেন!

মা, বাবা আফগানিস্তান ছেড়ে এ দেশে আসেন ১৯৭৫ নাগাদ। তখন সোভিয়েত সেনারা দেশটার দখল নিচ্ছে। একরত্তি জাফরকে নিয়ে কলকাতায় থিতু হওয়ার পরে তাঁর বাবা সুদের কারবার ও কাপড়ের ব্যবসায় ছিলেন। সাউথ সিটি কলেজ এবং বিলেতে অর্থনীতির পাঠের ফাঁকে ময়দানে রাগবি-চর্চা জাফরের জন্য এক বিরাট দিগন্ত খুলে দিয়েছে। “জীবনটা একটা বৃত্তের মতো মনে হচ্ছিল, যখন ২৫ বছর বয়সে কাবুলে রাগবি কোচিংয়ের ডাক পেলাম! মায়ের কী ভয়, তুই কিন্তু গ্রামে-টামে যাবি না! আর আমি কি না, ঠিক তালিবানের পাল্লায় পড়লাম!”

কাবুলে প্রথম দিন রাগবির আসরে মেতে উঠতেই গাজি স্টেডিয়ামের বাইরে বিরাট বিস্ফোরণ। সব চৌপাট। তবু কাবুলে কয়েকটা মাস দারুণ কাটছিল জাফরের। কিন্তু নিজের পারিবারিক শিকড়ের খোঁজে পাকিস্তান সংলগ্ন পাকতিকা প্রদেশের শারানা গ্রামে ঢোকার মুখেই সাংঘাতিক কাণ্ড! “হঠাৎ খুড়তুতো ভাই বলে, ওই দেখ জিরিওয়ালারা (পশতুতে দাড়িওয়ালা)! দেখি, দু’জন বন্দুকধারী!” জাফরের জিনস, শার্ট বা ভারতীয় টানের পশতু শুনে সন্দেহের তির ছিল তাঁর দিকেই। কাকা, পেশায় শিশুরোগ চিকিৎসক কবীরসাহেব পইপই করে বলেছিলেন, ‘‘তালিবান যদি ধরে, রাগবি-টাগবির কথা একদম বলবি না!’’ “যতই রাগবি খেলি, আমার তখন নিজেকে ফুচকা, ঝালমুড়ি খাওয়া নিরীহ বাঙালি বলেই মনে হচ্ছিল। আমি কাবুলের কলেজে পড়িটড়ি বলে রেহাই পেলাম!”

ইংরেজিতে কথার ফাঁকেই জাফর ফোনে বাংলা ধরেন, “আমি কিন্তু স্পষ্ট বাংলা বলি! গাদা গাদা বাঙালি বন্ধু। আর ময়দানকে ভীষণ মিস করি!” তালিবানের উত্থানের পরে পিতৃভূমিতে তুতো বোন ও তাঁদের বন্ধুদের কথা ভেবেই সব থেকে দুশ্চিন্তা! বলছেন, “দিনের বেলায় কাবুলে অল্পস্বল্প বেরোনো গেলেও মানুষের প্রধান চিন্তা, কোন পোশাকে বেরোব? আর মেয়ে হলে টেনশনটা চার গুণ বেশি। আফগানদের নিরুপায় হয়েই তালিবানকে সহ্য করতে হচ্ছে।” একটি ভিডিয়োয় তালিবানের আফগান পতাকা ছুড়ে ফেলার দৃশ্যটা বিঁধছে জাফরকে। তাঁর কথায়, “ভারতে বড় হয়েছি, জাতীয় পতাকার গুরুত্ব খুব বুঝি! ইন্ডিয়ার তেরঙাকে অসম্মান করলেও তো এমনই বুক ফাটে।”

এ বছরের শেষে ফরাসি স্ত্রী ও একরত্তি পুত্রকে নিয়ে কলকাতায় ফিরবেন জাফর। ওমানের পাটও শিগগির চোকার কথা! জীবনের একটা ইচ্ছে, বছর দশেকে আফগানিস্তান শান্ত হলে তাঁর বাপ-দাদার গ্রামটায় পর্যটকদের নিয়ে যাবেন তিনি। “কলকাতা আর কাবুল, দুটোই আমার দেশ! এবং এর মধ্যে এক ফোঁটা বিরোধ নেই! আমি জানি, দুনিয়ায় অনেকেই আমার মতো সত্তার বহু স্বরে মিশে বাঁচেন!” গর্বিত ভারতীয়, অনুভবী আফগান জাফর এটাই সার বুঝেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghanistan Kabul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy