যানজটের ফাঁসে। শনিবার, ধর্মতলায়। — নিজস্ব চিত্র।
পার্ক স্ট্রিটের পাঁচতারা হোটেলের সামনে পৌঁছেছিলেন বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ। সেখান থেকে গাড়িতে চেপে সল্টলেকের বাসিন্দা হিন্দোল মুখোপাধ্যায় চৌরঙ্গির হোটেলের সামনে পৌঁছলেন সওয়া একটার পরে!
বৌবাজার থেকে ট্যাক্সিতে চেপে হাজরা যাচ্ছিলেন দেবব্রত সান্যাল। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন পেরোতেই যানজটে ফাঁসলেন তিনি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে বুঝলেন, এ যানজট সহজে কাটার নয়। বাধ্য হয়ে এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে মেট্রোয় চেপে হাজরা পৌঁছলেন।
শনিবার সপ্তাহান্তে এমন যানজটের মূলত কারণ দু’টি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল। একটি মিছিল বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ধর্মতলা থেকে দক্ষিণ কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। পুলিশের হিসেবে হাজার পাঁচেক লোকের সেই মিছিলে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং আটকে যায়। ফলে ধর্মতলা সংলগ্ন সব রাস্তাই আটকে গিয়েছিল। সেই মিছিলের জের কাটতে না কাটতেই ফের কলেজ স্কোয়ার থেকে আর একটি ধর্মীয় মিছিল ধর্মতলার উদ্দেশে রওনা দেয়। ফের থমকে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা।
এ দিন যানজটে নাকাল হওয়া অনেকেই বলছেন, ধর্মতলায় রাজনৈতিক মিছিল মিটিং হলেও চৌরঙ্গি, হাজরা হয়ে নাকতলা পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি পুলিশ দেয় না। এ ক্ষেত্রে এমন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল কেন? এ দিন শুধু পায়ে হেঁটেই মিছিল হয়নি, ধর্মতলা থেকে বাস, ম্যাটাডরে চেপেও লোকজন নাকতলা গিয়েছেন।
লালবাজারের এক পুলিশ অফিসার জানাচ্ছেন, মিছিল শুরু হওয়া ইস্তক দক্ষিণ কলকাতা থেকে ধর্মতলামুখী গা়ড়ি পার্ক স্ট্রিট মোড়ে আটকে দেওয়া হয়। ফলে আশপাশের সব রাস্তাতেই গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। মিছিলটি জওহরলাল নেহরু রোড, আশুতোষ মুখার্জি রো়ড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, দেশপ্রাণ শাসমল রো়ড হয়ে দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রো়ডে গিয়ে শেষ হয়।
পুলিশ জানায়, বেলা দেড়টা নাগাদ কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া হাজার চারেক লোকের মিছিলটি নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্কোয়ার ঘুরে এসএন ব্যানার্জি রো়ড হয়ে রানি রাসমণি রো়ডে শেষ হয়। এর জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা গোটা ধর্মতলা চত্বরে যানবাহন কার্যত দাঁড়িয়ে ছিল। দক্ষিণে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল পর্যন্ত যানজট হয়। একইভাবে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এসএন ব্যানার্জি রোড, মৌলালি, বিধান সরণিতে যানজট হয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, ডোরিনা মোড় শহরের প্রাণকেন্দ্র। ফলে ওই মোড় আটকে যাওয়ায় মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যানজট হয়। তার ধাক্কা পৌঁছেয় পূর্ব ও উত্তর কলকাতার একাংশেও। এ দিন দুপুরে গিরিশ পার্ক থেকে ট্যাক্সিতে চেপেছিলেন নির্মল বসু নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘যানজটে আটকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। শরীর সুস্থ না থাকায় মেট্রোয় চেপে গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি।’’ যানজট পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউের মোড় থেকে ধর্মতলামুখী গা়ড়িগুলিকে ডালহৌসি দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। অন্য দিকে পার্ক স্ট্রিট ও জওহরলাল নেহরু রোডের মোড় থেকে উত্তর কলকাতামুখী গাড়িগুলিকে মেয়ো রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন এমন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল কেন? পুলিশের বক্তব্য, কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা, রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে কোনও মিছিলের এটিই নির্দিষ্ট পথ। কিন্তু চৌরঙ্গি দিয়ে সাধারণত কোনও মিছিল যেতে না দেওয়াটাই যে রেওয়াজ, তা-ও মেনে নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। তা হলে এ দিন ব্যতিক্রম হল কেন?
কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘কিছু কিছু মিছিলের এই রাস্তা দিয়ে যাওয়াটাই প্রথা। এই মিছিলটিরও তেমনই প্রথা রয়েছে। তাই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, এই সংগঠনটির মতোই আরও কয়েকটি সংগঠন জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে মিছিল করে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তেমন দু’টি মিছিল রয়েছে। সে দিনও যানজটে ভোগান্তি হবে বলেই মনে করছেন প্রবীণ পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy