একাধিক সেতু-বিপর্যয়ের ঘটনা সামনে আসার পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কাজের গুণমান নিয়ে বাড়তি সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে এমন কাজ চলে কী করে? স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত একটা সমস্যা হয়েছিল। সব পক্ষ গিয়ে মেটানোর চেষ্টা করছে। সমস্যা মিটে যাবে।’’
কাজ বন্ধ থাকায় ঢেকে রাখা হয়েছে গর্ত। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয়দের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে গেল টালা সেতু সংলগ্ন সার্ভিস রোড সম্প্রসারণের কাজ। ওই এলাকার খোলা নর্দমা ঢেকে দিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, যথাযথ ভাবে সেই কাজ হচ্ছে না। টেন্ডার পাওয়া সংস্থাকে প্রশাসনের তরফে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, মানা হচ্ছে না তা-ও। বিষয়টি ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে। এর পরে স্থানীয় কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অতীন ঘোষের নির্দেশে দ্রুত ওই এলাকা পরিদর্শনে যান পুরসভা, পূর্ত দফতর এবং সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে তাঁদের দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
স্থানীয় সূত্রের খবর, টালা সেতুর পশ্চিম দিকের ওই রাস্তা নিয়ে এলাকার মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বৃষ্টি হলেই সেখানে জল জমে যায়। পরে জল নামলেও পাঁক এবং দুর্গন্ধে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে বলে স্থানীয়দের দাবি। গত বিধানসভা ভোটের সময়েও এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন ওই এলাকার লোকজন। তারই জেরে টালা সেতুর সঙ্গে ওই রাস্তারও সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, রাস্তার খোলা নর্দমা ঢেকে দিয়ে সম্প্রসারণের কাজ হবে। এর জন্য মাটির নীচে বসানো হবে পাইপ। সেই পাইপের মাধ্যমেই নর্দমার জল গিয়ে মিশবে খালের সঙ্গে। সেতুর কাজের জন্য টেন্ডার পাওয়া সংস্থা এই কাজের ‘সাব-কন্ট্র্যাক্ট’ দেয় ‘দেবনাথ কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি সংস্থাকে। কিন্তু অভিযোগ, ওই সংস্থা ঠিক ভাবে কাজ করছে না। নর্দমার পাঁক তুলে নরম মাটিতেই পাইপ বসিয়ে দিচ্ছে তারা। পাইপ বসানোর আগে পাথরকুচি, সিমেন্ট ঢেলে মাটি শক্ত করে নেওয়ার কোনও কাজই করা হচ্ছে না। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই কাজ টিকবে কত দিন? কিছু দিনের মধ্যেই তো নরম মাটিতে পাইপ বসে যাবে।’’ আর এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘পাইপ বসে গেলে আবার কাদা বাইরে উঠে আসবে। বৃষ্টি হলেই সেই জলবন্দি হয়ে থাকতে হবে। এমন জোড়াতাপ্পির কাজ মানব কেন?’’
‘দেবনাথ কনস্ট্রাকশন’ নামে ওই সংস্থার কর্তা তরুণ দত্ত যদিও বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ১০০ মিটারের কিছু কম জায়গায় কাজ হয়েছে। ১২০০ ফুট ব্যাসের অন্তত ১৫-১৬টি পাইপ সেখানে বসে গিয়েছে। এখন এসে কাজ ঠিক করে হচ্ছে না বললে তো মুশকিল। একটি বা দু’টি পাইপ বসানোর সঙ্গে সঙ্গে বললেই তো তুলে নিয়ে ভাল করে করা যেত।’’ সেই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘যেখানে পাইপ বসছে, তার আশপাশে বেশ কিছু পুরনো বাড়ি রয়েছে। ওই ভারী পাইপগুলি তুলে ফের বসাতে গেলে বাড়িগুলোর কী হবে, বলা যাচ্ছে না।’’
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক যদিও বললেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে গত রবিবারই আমরা ওই এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য ভিত্তিহীন নয়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার এক আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘যা-ই সমস্যা হোক, দ্রুত মিটিয়ে ফেলে ভাল ভাবে কাজ করা হবে। সাব-কন্ট্র্যাক্ট পাওয়া সংস্থাকে এ বিষয়ে বলে দেওয়া হয়েছে। তাদেরই সমাধান খুঁজে বার করতে হবে।’’
একাধিক সেতু-বিপর্যয়ের ঘটনা সামনে আসার পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কাজের গুণমান নিয়ে বাড়তি সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে এমন কাজ চলে কী করে? স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত একটা সমস্যা হয়েছিল। সব পক্ষ গিয়ে মেটানোর চেষ্টা করছে। সমস্যা মিটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy