মেরুন হিজাবে প্রতিবাদ মিছিলে সেরিফা খাতুন, পাশেই অন্য এক তরুণীর কাঁধে ঘুমিয়ে রয়েছে তাঁর শিশুকন্যা। —নিজস্ব চিত্র।
অক্লান্ত মিছিল তখন চাঁদনি চকে। তুমুল স্লোগান কানে যাচ্ছে না সাড়ে তিন বছরের ‘ক্লান্ত’ মেয়েটির। সে ঘুমিয়ে রয়েছে এক তরুণীর কাঁধে। মাথায় বাঁধা সাদা ফেট্টিতে লাল দিয়ে লেখা, ‘তিলোত্তমা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। পিঠে সাঁটা পোস্টারে লেখা, ‘আমার আন্টির বিচার চাই, আমার মায়ের বিচার চাই।’ আর পাশেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আকাশে তুলে বিচারের দাবিতে স্লোগানে গলা মেলাচ্ছেন মেরুন রঙের হিজাব টানা এক মহিলা।
তাঁর নাম সেরিফা খাতুন। মেয়েকে কোলে নিয়ে এসেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মিছিলে। একটানা কোলে নিয়ে মিছিলে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল সেরিফার। পাশে হাঁটা এক তরুণী কাঁধ এগিয়ে দেন। মেয়েকে তাঁর কাঁধে দিয়েই ধর্মতলার অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন সেরিফা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বাড়ি তাঁর। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে যখন জুনিয়র ডাক্তারেরা অবস্থান চালাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন মেয়েকে নিয়ে। তার পর থেকে কলকাতাতেই রয়েছেন। সেরিফা জানালেন, দমদমে তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে। কেন এলেন? তাঁর জবাব, ‘‘বিচার চাই। বিচার চাই। জাস্টিস...জাস্টিস!’’ ঘাটাল থেকে কলকাতায়? সেরিফা বললেন, ‘‘হ্যাঁ! স্বাস্থ্য ভবন থেকে আছি। বিচার চাই।’’
যে তরুণী শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন, তিনি সেরিফাকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওঁর কষ্ট হচ্ছিল, তাই আমি কোলে নিয়েছি। ভাগাভাগি করে কোলে নিলে অসুবিধা হয় না।’’ রাজনীতি নির্ভর ছবি হোক বা সাহিত্য— তাতে একটা অভিন্ন বিষয় থাকে। মিছিল কিংবা আন্দোলনে অপরিচিতও ‘আত্মীয়’ হয়ে ওঠেন। যে তরুণীর কোলে সেরিফার কন্যা ঘুমোচ্ছে, তিনিও হয়তো সেই রকম ‘আত্মীয়’ হয়ে উঠেছেন। কলকাতা, জেলা বা মফস্সল শহর— অনেক বাবা-মা তাঁদের শিশুকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন আরজি কর আন্দোলনে। সেই সকল শিশুদের অনেকেই স্লোগান দিয়েছে পথে। কারও বা আন্দোলনে হাতেখড়ি হয়েছে রাস্তা-লিখনে তুলি বুলিয়ে। সেরিফার কন্যাও সেই তালিকায়। সেরিফা বলেন, ‘‘মেয়ে মিছিল শুরুর সময়ে জেগেই ছিল। তার পর ঘুমিয়ে পড়েছে।’’ স্বগতোক্তির মতো করেই বলে উঠলেন, ‘‘আবার জেগে যাবে।’’
বুধবার জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল শুরু হয়েছিল কলেজ স্কোয়্যার থেকে। শেষ হয় ধর্মতলায়। সেই মিছিলে নানা ধরনের স্লোগান শোনা গিয়েছে। যার মূল কথা, ‘বিচার চাই’। দেখা গিয়েছে বেগম রোকেয়া থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টারদা সূর্য সেন থেকে ভগৎ সিংহের ছবি। প্রকাণ্ড ব্যানারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দেওয়া ব্যানারের নীচে লেখা, ‘মুক্ত করো ভয়’। ঠিক তার সামনে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক জুনিয়র ডাক্তার। মিছিলের একেবারে শেষ প্রান্তে ছিল কয়েক জোড়া ঢাকও। সেই মিছিলে ছিলেন ঘাটাল থেকে মেয়েকে কোলে নিয়ে কলকাতায় আসা সেরিফা।
সেরিফার কন্যা কথা বলতে শিখছে। সেরিফার কন্যা অনেক কিছুর সঙ্গে বলতে শিখে গিয়েছে, ‘‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy