যোগেন চৌধুরীর শিল্পকলা।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’-এ শুরু হয়েছিল ‘যোগেন চৌধুরী ৮৫: সারা বছরের উৎসব’। নেপথ্যে ছিল এমন ভাবনা: যে কোনও সৃষ্টিশীল মানুষের একটি নির্দিষ্ট দিন জন্মদিন হতে পারে না, কাজে ও শিল্পে মেতে থাকার আনন্দে প্রতিটি দিনই হয়ে ওঠে জন্মদিন। অন্য দিকে এই অভিনিবেশও ছিল, পত্রপত্রিকায় যেমন কোনও লেখক ধারাবাহিক উপন্যাস রচনা করেন, রচিত হয় ধারাবাহিক স্মৃতিকথা, সে ভাবে কোনও শিল্পী যদি একটি গোটা বছর জুড়ে গড়ে তোলেন কোনও চিত্রপট, সেই যাত্রাপথকে নীরবে অনুসরণ করা।
বারো মাসে হয়েছে বারোটি প্রদর্শনী, আর শিল্পীর বিভিন্ন সময়পর্বের বারোটি স্কেচখাতার প্রকাশ। শিল্পীর অন্দর থেকে বাহিরমহলে পৌঁছনোর পথরেখা আঁকা সেখানে। এই সিরিজ়ে আছে ১৯৫৫ সালের, জীবনের প্রথম স্কেচখাতা, যেখানে লেখা, “আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে আমার ড্রয়িং খুবই দুর্বল ছিল। এই খাতার স্কেচগুলি থেকে তা বোঝা যায়। observation-এর ক্ষমতার ফলে তা ক্রমশ improve করে ১৫ দিনের চর্চায়!” সাড়ে চার দশক পরের অনুভব ২০০০ সালের স্কেচখাতায়: “এতদিন স্কেচখাতায় key drawing করার কথা ভেবেছি, এই মনে করে যে আসল ছবিতে কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারবো। এখন সব ড্রইংকে ‘ছবি’ হিসেবে করা। মন দিয়ে করা। ছোট বড়ো সবকিছু।” অর্থাৎ ছবির আয়তন থেকে সরে যাচ্ছে শিল্পীর ভাবনা; ছবি ছবিই, তার ছোট-বড় হয় না। এই সূত্র ধরে উৎসবের বারো মাসের প্রদর্শনীর দিকে তাকালে দেখা যাবে আয়তন দিয়ে তাদের পরিমাপ হয় না, শিল্পীর ক্রমাগত আত্ম-অনুসন্ধান থেকে উঠে আসা চিত্রকল্প এরা।
সারা জীবন যে অনুভূতি, যে সব শব্দবন্ধ তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলেছে, তা থেকেই হয়েছে প্রতিটি প্রদর্শনীর নামকরণ। যেমন ‘ব্ল্যাক গ্রাউন্ড’, কালো রঙের প্রতি তাঁর মনোযোগ মনে রেখে। যেমন ‘ফর্মস অ্যান্ড শেপস’, নানা আকার-আকৃতি থেকে ‘ভলিউম’-এর রচনা জেগে থেকেছে তাঁর সারা জীবনের কাজে। কোনওটির নাম ‘ফিগার ইন লাইন অ্যান্ড কালারস’। উৎসবের শেষ পর্বে প্রকাশ পেতে চলেছে ৪৬ নম্বর স্কেচখাতা, তাতে লেখা শিল্পীর নোট: “শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানুষের শরীরের মত এমন সম্ভাবনাযুক্ত আর কোনও বিষয় আছে কি? তার ভঙ্গি, গড়ন, গঠন, ভাব ও জটিলতা সবই আমাদের আকর্ষণ করে।” জীবন ও শিল্পের বোধের এই নিবেদন, বছরভর এক শিল্প-শিক্ষা পাঠের ভাবনাই দেবভাষা-র এই উৎসবের মূল সুর।
প্রদর্শনীকক্ষে এক বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে একটি ক্যানভাস। উৎসবের শেষ লগ্নে সমাপ্ত সেই ছবি দেখানো হবে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ক্রস অ্যাক্রস’। বাংলার চিত্রকলায় এই মুহূর্তে ক্রস হ্যাচ ও যোগেন চৌধুরী অভিন্ন, এই প্রদর্শনী তাঁর ‘স্মল ফরম্যাট ক্রস হ্যাচ’ নিয়ে। শিল্পের সঙ্গে দৈনন্দিনের যোগ গড়ে উঠুক, এই ভাবনা থেকেই প্রকাশ ঘটবে শিল্পীর ছবি-সম্বলিত কফি মগ ও বই ব্যাগেরও। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সকলের জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনী, চলবে ২২ মার্চ পর্যন্ত, রবিবার বাদে। ২৫ সন্ধ্যায় ‘মিট দ্য আর্টিস্ট’ অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে তাঁর যাত্রাপথকথা ভাগ করে নেবেন শিল্পী। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী ও স্কেচখাতা থেকে।
কবি ও কলকাতা
তাঁর ‘সোমনাথ ও শ্রীমতী’ গল্পের নায়ক বলেছিল, “কলকাতাকে ঘিরে একটা সমুদ্র থাকলে বেশ হত।” আসলে তো এ খোদ লেখকের, তাঁর অন্তর্গত কবির আকাঙ্ক্ষা। ফিয়ার্স লেন, টেরিটিবাজার, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এ শহরে হাইড্র্যান্ট আর কুষ্ঠরোগীর সহ-বাস, মোটরকারের ‘গাড়লের মতো’ কেশে যাওয়া, আহিরীটোলা বাদুড়বাগান পাথুরিয়াঘাটায় ঘুরে ঘুরে একটি করে পয়সা পাওয়া ভিখিরির অন্নের স্বপ্নে লুকিয়ে জীবনানন্দ দাশের (ছবি) কলকাতা। ৯০/২/এ হ্যারিসন রোডের ঠিকানা থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক। সান্ধ্যকালীন হাঁটার প্রিয় পথ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউ। লিখেছিলেন, “হঠাৎ তোমার সাথে কলকাতাতে সে এক সন্ধ্যায় উনিশশো চুয়াল্লিশে দেখা হ’ল”, আর আজ তাঁর ১২৫ পূর্তির জন্মদিনে তাঁকে মনে পড়বে “গগন, বিপিন, শশী, পাথুরেঘাটার; মানিকতলার, শ্যামবাজারের, গ্যালিফ স্ট্রিটের...”
মেলার মায়া
দক্ষিণ কলকাতার শিল্প গ্যালারি ‘মায়া আর্ট স্পেস’-এর শুরু ২০১৩-তে, সুনির্বাচিত শিল্পের প্রদর্শনীর সুবাদে শহরে জনপ্রিয় অচিরেই। ২০২০ থেকে শুরু তাদের শিল্প মেলা, লক্ষ্য: নাগালের মধ্যে থাকা মূল্যে মানুষের কাছে শিল্পসম্ভার পৌঁছে দেওয়া। গতকাল শুরু হয়েছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোজ দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা বসছে মেলা। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের ছবি ভাস্কর্য সেরামিক্স ছাপচিত্র আলোকচিত্র সরাচিত্র আছে, প্রচলিত ধারার বাইরে মেলা কেন্দ্র করে কাজ করেছেন অনেক শিল্পী, বৃহত্তর দর্শকের মন যাচাই করতে। আরও প্রাপ্তি লোকশিল্পের সমাহার, কাচের গয়না, বই, ঘরোয়া খাবার। ষাটের দশকে যে শিল্পমেলা শুরু হয় কলকাতায়, ‘মায়া আর্ট ফেয়ার’ তারই প্রবাহ বলা চলে। সাধারণ্যে শিল্পযাপনের অবকাশ তৈরির চেষ্টা।
তিন মঞ্চে
শীত ঘিরে যত উৎসব আর মেলা সাঙ্গ হওয়ার মুখে। তার আগে, একগুচ্ছ নাটক নিয়ে ‘পূর্ব পশ্চিম’ নাট্যগোষ্ঠীর উৎসব আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ, মিনার্ভা থিয়েটার, রবীন্দ্র সদন ও অ্যাকাডেমি মঞ্চে। উদ্বোধন-সন্ধ্যায় মিনার্ভায় রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার পাবেন সঞ্জীব সরকার, অভিনীত হবে পূর্ব পশ্চিম-এর নাটক পটলবাবু ফিল্মস্টার। উৎসবে আরও দু’টি নাটক তাদের— জোছনাকুমারী আর এক মঞ্চ এক জীবন, সৌমিত্র মিত্রের নির্দেশনায় ২ ও ৩ মার্চ সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমিতে। বাকি প্রযোজনাগুলি: দেবাশিসের নির্দেশনায় ২৯ তারিখে রবীন্দ্র সদনে নৈহাটি নাট্য সমন্বয়-এর নাটক ফেরারী ফৌজ; এ ছাড়া অ্যাকাডেমিতে দক্ষিণ দমদম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র-র বাদাবন, নবময়ূখ-এর এখনও অন্ধকার, ইচ্ছেমতো-র বীরাঙ্গনা কাব্য, নয়ে নাটুয়া-র কাব্যে গানে।
ক্যামেরায় ধরা
১৯৬৫-র ছবি দ্য সাউন্ড অব মিউজ়িক-এ কলকাতা মুগ্ধ হয়েছিল অস্ট্রিয়ার চোখ-জুড়ানো প্রকৃতি দেখে। সে ছবির অনেকটাই তৈরি অস্ট্রিয়ার সলজ়বার্গে। সলজ়বার্গ ছাড়াও অপরূপ ভিয়েনা, ইনজ়ব্রাক, টাইরল, ফোরার্লবের্গ, স্টাইরিয়া-ও। সুন্দর এই দেশের একুশ জন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি নিয়ে এ বার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট, গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা। অস্ট্রিয়ার ছবির সঙ্গে থাকবে ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের ছবিও। অন্য দিকে, শহরের ভ্রমণ-লেখক গোষ্ঠী ‘ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম’-এর সদস্যদের তোলা বাছাই ছবির প্রদর্শনী গ্যালারি গোল্ড-এ ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা।
জল-মাটির টানে
শহরের পুব প্রান্তের জলাভূমির গুরুত্ব অজানা নয়। এও জানা: সঙ্কুচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এই জলাভূমির পরিধি। ফলে বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি, ‘স্মার্ট সিটি’র ছায়ায় চাপা পড়া এলাকার প্রান্তিক মানুষের জলাভূমি-প্রকৃতিকে ঘিরে গড়ে ওঠা জীবন-জীবিকার উপর চাপ বাড়ছে। জলাভূমি সংরক্ষণে এলাকার জনগোষ্ঠীর ভূমিকা মনে রেখে গ্যোটে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলার ভবন আয়োজন করেছে প্রদর্শনী ‘সিমবায়োটিক কোহ্যাবিটেশন’, সঙ্গী ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং ডায়ালগস কালেক্টিভ’। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, রবিবার ও ছুটির দিন বাদে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নবীনা গুপ্ত ও আহিরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে হয়ে গেল একটি কর্মশালাও, মৃৎপাত্র ও অন্য নানা রূপ ও আকার গড়ে মানুষ ও প্রকৃতির সংযোগ খুঁজে দেখা হল।
গাড়ি ও ওঁরা
অভিযান ছবির ক্রাইজ়লার গাড়ির সামনে সত্যজিৎ রায়। চলতি কা নাম গাড়ি-র সেই বিখ্যাত গাড়ির সঙ্গে কিশোরকুমার। ফিয়াট গাড়ির দরজা দু’টি খোলা, সামনে রাস্তায় বসে রাহুল দেব বর্মণ (ছবি)। উত্তমকুমার তাঁর প্রিয় মরিসের সঙ্গে, তাঁদের শেভ্রলে শেভেলের সঙ্গে সস্ত্রীক মহম্মদ রফি, চেতন আনন্দের ছবি ট্যাক্সি ড্রাইভার-এর শেভ্রলে ফ্লিটমাস্টারের সঙ্গে দেব আনন্দ। চার্লি চ্যাপলিন থেকে অমিতাভ বচ্চন, চিত্রজগতের কাছে-দূরের তারকা ও ‘ভিন্টেজ কার’-এর ফ্রেমবন্দি নানা ছবিতে সেজে উঠেছে ছোট্ট ডেস্ক ক্যালেন্ডার ‘কার-নিভাল’। গত মাসে শহরে হয়ে গেল ‘ড্রাইভ হৃদয়’ কার র্যালি, এ বছর পঞ্চমে পা। স্রেফ সুদৃশ্য গাড়ির বহরের দেখনদারিতে নয়, রোটারি ক্লাব অব কলকাতা ওল্ড সিটি-র এই উদ্যোগটি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় সদাব্রতী। ক্যালেন্ডার নির্মাণেও কাজ করেছে সেই ‘স-হৃদয়’ ভাবনাই।
ভাস্বর
কোন্নগরের ছেলে, বাবাকে হারানো ছেলেবেলাতেই। আঁকতে ভালবাসতেন, কিন্তু মা পাঠালেন কলেজে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। সে কি আর হয়? গঙ্গার ঘাটে বসে জীবন দেখা আর আঁকা, ছবি লুকিয়ে রাখতেন এক পরিচিতের বাড়িতে। জীবন তাঁকে ঠিকই নিয়ে এল পঞ্চাশের দশকের কলকাতায় সরকারি আর্ট কলেজে। এখানেই ছাত্রবেলা, পরে শিক্ষকতা, অধ্যক্ষও হন ঈশা মহম্মদ (ছবি)। ষাটের দশক থেকে এ শহর বহু বার দেখেছে তাঁর একক ও একত্র প্রদর্শনী; তাঁর আঁকা ছবি ছড়িয়ে দেশে বিদেশে, ব্যক্তিগত বিশিষ্ট সংগ্রহ থেকে মিউজ়িয়মে। ছিলেন গণতান্ত্রিক লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সদস্য, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি। ২০২১-এ প্রয়াত শিল্পীর ৯২তম জন্মবার্ষিকী এ বছর, গত ১২ ফেব্রুয়ারি একত্রে উদ্যাপন করল এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতা ও রেখাচিত্রম্, সল্ট লেকে রাজেন্দ্রলাল মিত্র ভবনে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে চলছে রেখাচিত্রমের বার্ষিক প্রদর্শনীও।
সুরের সত্যজিৎ
দিনানুদিনের কঠিন শ্রমের মধ্যেও মাঝে মাঝে ভ্রমণের অবকাশ খুঁজে পাই আমরা, কোথাও না গিয়েও ছুঁয়ে ফেলি আকাশ। তেমনই আনন্দময় অভিজ্ঞতা হল কলকাতার, কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘রায় সোসাইটি’ আয়োজিত কনসার্ট ‘দ্য মিউজ়িক অব সত্যজিৎ রায়’। দেবী চিড়িয়াখানা-সহ গুগাবাবা সিরিজ়ের সত্যজিৎ রচিত-সুরারোপিত গানগুলির কয়েকটি গাইলেন সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায় পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় সাহেব চট্টোপাধ্যায়, বাজানো হল তাঁর সৃষ্ট আবহ সঙ্গীতের নির্বাচিত অংশ বিভিন্ন ছবি থেকে, দু’-একটি বাদে সবই তাঁর পরিচালনা। তপনকুমার দে ও নির্মাল্য (হামটু) দে-র তত্ত্বাবধানে শিল্পীদের অর্কেস্ট্রেশনের মূর্ছনায় মুগ্ধ দর্শকেরা। “পথের পাঁচালী থেকে আগন্তুক পর্যন্ত বাবার সঙ্গীত-সহযোগী ছিলেন অলোকনাথ দে, তিন প্রজন্মের পরম্পরা চলেছে। দাদুর মতোই বাঁশি বাজানোয় অনন্য হামটুও,” শ্রোতার আসনে মন্তব্য সন্দীপ রায়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy