অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভার প্রস্তুতি পর্বে তাঁকে দেখা যায়নি। যা নিয়ে নানা কৌতূহল তৈরি হয়েছে তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে। তবে বার্ষিক সভার প্রাক্কালে রবিবার দলীয় মুখপত্রের বিশেষ বিভাগে নিবন্ধ লিখলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যার শিরোনাম: ‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফল উপভোগ করার, কিন্তু আত্মসন্তুষ্টি নয়।’ নিজের লেখায় এক দিকে ২১ জুলাইয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন অভিষেক, অন্য দিকে এ বারের ‘বার্তা’ দিতে চেয়েছেন। জাতীয় এবং রাজ্য রাজনীতি, সরকার পরিচালনা থেকে সংগঠন— সব দিকই ছুঁয়ে গিয়েছে অভিষেকের লেখা।
উল্লেখ্য, গত বছরও দলীয় মুখপত্রে এই দিনে একটি লেখা লিখেছিলেন অভিষেক। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। বিজেপি তখন একক ভাবে শক্তিশালী। এ বারে তা নয়। ‘পরনির্ভরশীল’ হয়ে সরকার গড়তে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। যে কারণে অভিষেকও তাঁর লেখায় বিজেপি সরকারের বদলে ‘এনডিএ সরকার’ কথাটি উল্লেখ করেছেন। বিজেপির ক্ষয়ের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রামমন্দিরের ভূমি অযোধ্যায় পদ্মশিবিরের পরাজয়ের কথা লিখেছেন অভিষেক। এ বার অযোধ্যায় বিজেপিকে হারিয়ে জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ। সেই সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবেরও রবিবার তৃণমূলের সভায় উপস্থিত থাকার কথা। ভোট-পরবর্তী পর্বে যে ভাবে নিট এবং নেট পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে, তাকেও নিশানা করেছেন অভিষেক। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে একাধিক বিধায়ক সেই মামলায় জেলবন্দি। অভিষেককেও নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২১ জুলাইয়ের লেখায় শিক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির উদ্দেশে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন অভিষেক। সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকারও।
তবে নিজের লেখায় ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের সুরই বাঁধতে চেয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি। যে সুর বলছে, লোকসভা ভোটের ফলাফল যেন দলের মধ্যে আত্মসন্তুষ্টির জন্ম না দেয়। ২০২৬ সালের ভোটে তৃণমূলকে যেতে হবে টানা তিনটি মেয়াদের ক্ষমতায় থাকার ফলে উদ্ভুত ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা’ নিয়ে। শুধুমাত্র সংগঠন দিয়ে তার মোকাবিলা করা যাবে না বলেই মনে করেন তৃণমূলের সেনাপতি। কাজ করতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। কাজ করতে হবে মন্ত্রী এবং আমলাদের। লোকসভা ভোটের ফলাফলে ‘আত্মতুষ্টি’ চলে এলে তাতে দল এবং প্রশাসন— দুয়েরই ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তৃণমূলের অন্দরে অনেকে মনে করছেন, অভিষেক সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন।
এখন দেখার, রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভা মঞ্চে অভিষেক হাজির হন কি না। হাজির হলে ভাষণ দেন কি না। ভাষণ দিলে তার দিশা কী থাকে। অনেকেরই মতে, অভিষেক বক্তৃতা করলে তাতে ভোটে জয়ের আনন্দের পাশাপাশি এই ‘হুঁশিয়ারি’র বার্তাও থাকবে।
লেখার ছত্রে ছত্রে অভিষেক স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন, লোকসভার ফলে যেন কর্মী সমর্থকদের আত্মসন্তুষ্টি না আসে। সরকারি পরিষেবা দেওয়া এবং অহংহীন হয়ে নিরলস সংগঠন করে যাওয়ার বার্তা দিতে চেয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি। পাশাপাশি এ-ও লিখেছেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ীই চলবে তৃণমূল। তবে এ তো মুখপত্রে লেখা। গোটা তৃণমূল তাকিয়ে রয়েছে রবিবারের মঞ্চে অভিষেক কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বা বক্তৃতার অভিমুখ কী হয় সেই দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy