ফাইল চিত্র।
এ যেন শাঁখের করাত! এক দিকে আনাজ থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, ভোজ্য তেল— সব কিছুর আগুন দামে দিন দিন লোকসানের বহর বাড়ছে। অন্য দিকে, লোকসান কমাতে খাবারের দাম বাড়ালে থাকছে খদ্দের কমে যাওয়ার আশঙ্কা। এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছেন শহরের রেস্তরাঁর মালিকেরা। এক রকম বাধ্য হয়েই আরও কিছু দিন ‘দেখে নেওয়ার’ পথে হাঁটছেন তাঁরা।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া দামে নাভিশ্বাস উঠছে আমজনতার। বাজারে গেলে খরচের ভারে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানির আকাশছোঁয়া দাম। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত মানুষজন। তবে শুধু তাঁরাই নন, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির ফাঁসে পড়েছেন শহরের রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীরাও। কাঁচামালের খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাবারের মান ও দাম অক্ষুণ্ণ রেখে কী ভাবে রেস্তরাঁ চালানো সম্ভব, সেটাই এখন মূল মাথাব্যথা তাঁদের কাছে। সমাধানসূত্র খুঁজতে গত ৩ মে একটি বৈঠকে বসেছিলেন ‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র সদস্যেরা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, খাবারের দাম ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু রেস্তরাঁ সেই পথে হেঁটেছে।
কিন্তু রেস্তরাঁ মালিকদের বড় অংশের আশঙ্কা, খাবারের দাম বাড়ালে খদ্দের কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও বাড়তে পারে লোকসানের বহর। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাস দুয়েক আগেও যেখানে
মুরগির মাংসের দাম ঘোরাফেরা করছিল ২২০ টাকার আশপাশে, তা এখন পৌঁছেছে ৩০০ টাকার কাছাকাছি। পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে মাছ, তেল, আনাজ-সহ অন্যান্য জিনিসের। রেস্তরাঁ মালিকদের প্রশ্ন, এই অবস্থায় খাবারের দাম না বাড়িয়ে মান অপরিবর্তিত রাখা কী ভাবে সম্ভব?
হিন্দুস্থান পার্কের কাছে একটি রেস্তরাঁর কর্ণধার অমৃতা অ্যানি বলছেন, ‘‘আমরা পড়েছি সাঁড়াশি চাপে। করোনাকালে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের আয় কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসা এখনও পুরোপুরি প্রাক্-করোনা অবস্থায় ফিরে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির কথা ভেবে দাম বাড়ালে খদ্দের আরও কমে যেতে পারে। বাধ্য হয়ে ঠিক করেছি, আরও কিছু দিন
দেখে নিয়ে তার পরে দাম বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করব।’’ একই ভাবে ‘জল মেপে চলার’ কথা বলছেন নিউ টাউন ও সেক্টর ফাইভের দু’টি রেস্তরাঁ এবং পানশালার কর্ণধার
প্রণব সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে খাবারের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই ঠিকই। কারণ, কাঁচামালের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। অনেকেই খাবারের মান ঠিক রাখতে দাম বাড়ানোর পথে গিয়েছেন। তবু আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েক দিন দেখে নিতে চাইছি।’’
রেস্তরাঁয় খাবারের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কী ভাবছেন শহরবাসী? মানিকতলার বাসিন্দা প্রত্যুষ মিত্রের কথায়, ‘‘গত কয়েক মাসে সব জিনিসের দাম বাড়ায় এমনিতেই সংসার খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে কমাতে হয়েছে রেস্তরাঁয় খাওয়া। এর উপরে যদি সেখানেও দাম বাড়ে, তা হলে তো রেস্তরাঁর দিকে পা বাড়াতে গেলে দু’বার ভাবতে হবে।’’ ‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার বলছেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে ন্যূনতম যতটুকু দাম বাড়ানো সম্ভব, সেটুকু বাড়ানোরই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ, খাবারের মানের সঙ্গে আপস করে কিছু করা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy