কালীঘাট স্টেশনে বিকল হয়ে পড়ে আছে স্ক্যানার।
এমনিতে গড়ে প্রতি দিন সাড়ে ছ’লক্ষ নিত্যযাত্রী ব্যবহার করেন কলকাতা মেট্রো। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পুজোর ভিড়। গত বছর পুজোর চার দিনে মেট্রোয় যাত্রী হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ। এ বছর মেট্রো পুজোর চার দিন ট্রেনের সংখ্যাও বাড়িয়েছে। যাত্রীর চাপও বাড়বে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। মেট্রোয় যাত্রী নিরাপত্তার হাল নিয়ে এমনিতেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর উপরে পুজোর ভিড়! এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের কী ভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে?
মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এ কে কপূর অবশ্য বলেছেন, ‘‘যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে পুজোয় অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে মেট্রোর স্টেশনগুলিতে। কলকাতা পুলিশ, আরপিএফ-সহ মেট্রোর সিনিয়র অফিসারেরাও স্টেশনগুলিতে থাকবেন।’’ পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, ‘‘যাত্রীদের স্বার্থে আমাদের তরফে সব রকম নিরাপত্তারই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
মেট্রো রেলের নিরাপত্তার হাল এখন কেমন?
মেট্রো সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো ২৪টি স্ক্যানারের ১৭টিই খারাপ হয়ে গিয়েছে বহু দিন। এমনকী, স্টেশনে ঢোকার মুখে মেটাল ডিটেক্টর থাকলেও যাত্রীরা তার ভিতরে ঢুকলে যন্ত্র কী নির্দেশ দিচ্ছে, সে দিকেও নিরাপত্তারক্ষীরা খেয়াল রাখেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশির ভাগ স্টেশনেই সিসিটিভিগুলি ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যাত্রী-সুরক্ষার অন্যতম হাতিয়ারই যদি ঠিক না থাকে, তবে কী ভাবে মেট্রো সুরক্ষিত থাকবে!
মেট্রোর ২৪টি স্টেশনের মধ্যে একটি বাদে বাকি সবগুলি স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেল পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে রয়েছে কলকাতা পুলিশও। শুধু নোয়াপাড়া স্টেশনের দায়িত্বে রয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। মেট্রোর নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি স্টেশনে গড়ে ছ’সাত জন করে পুলিশকর্মী থাকেন। এ ছাড়া রয়েছে রেলের নিজস্ব বাহিনী আরপিএফ। সঙ্গে থাকে প্রায় হাজার সিসিটিভি-র চোখ। তাঁদের দাবি, সেগুলিতে নজর রাখা হয় নিয়মিত। পুজোর সময়ে ওই ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হবে। তবে স্ক্যানার মেশিন থাকা যে জরুরি ছিল, তা তাঁরা মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু যাত্রীদের একাংশের দাবি, মালপত্র তল্লাশি তো দুর অস্ত্, গেটে যে পুলিশকর্মীরা বসে থাকেন, তাঁদের অফিসটাইমেও গল্পগুজবে মত্ত থাকতে দেখা যায়। কোনও কোনও যাত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাগ দেখাতে গেলে দু’এক জনের ব্যাগ পরীক্ষা হয়। বাকিরা চলে যান পরীক্ষা ছাড়াই। কার্যত কাজেই লাগানো হয় না, হাতে থাকা মেটাল ডিটেক্টরগুলিকেও।
যাত্রীদের অভিযোগ মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘স্ক্যানার খারাপ থাকলেও সন্দেহ হলেই পুলিশকর্মীরা যাত্রীদের ব্যাগ বা মালপত্র তল্লাশি করেন। তবে অফিসেটাইমে যাত্রীর চাপ এতটাই বেশি থাকে যে, সব সময় তা একশো শতাংশ করা হয় না।’’
নিরাপত্তা জোরালো করতে কেন দরকার স্ক্যানারের?
কলকাতা পুলিশের কথায়, যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশির জন্য বিমানবন্দর, রেল স্টেশন ও মেট্রো স্টেশনে এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানারের মতো সরঞ্জাম অপরিহার্য। তাঁদের দাবি, কলকাতার মতো শহরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা কখনওই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ব্যাগেজ স্ক্যানারগুলি গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্যানারে ঢোকানো ব্যাগ বা স্যুটকেসে থাকা যাবতীয় জিনিসের ছবি এক্স রে-র মাধ্যমে ফুটে ওঠে ওই যন্ত্রে থাকা কম্পিউটারের মনিটরে। যন্ত্রটির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী মনিটর দেখে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে তখনই ব্যাগ খুলে তল্লাশি চালাতে পারেন।
কেন সারানো হচ্ছে না স্ক্যানারগুলি?
মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘যে সংস্থার হাতে ওই যন্ত্র মেরামতির দায়িত্ব ছিল, সেই সংস্থা কাজ ঠিকমতো না করায় মাঝপথেই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন কোনও সংস্থাকে বরাত না দেওয়া পর্যন্ত ওই যন্ত্র চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’’
তার বদলে অবশ্যে সিসিটিভি ও মেটাল ডিটেক্টর গেট ও হাতে রাখা মেটাল ডিটেক্টর বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পুলিশ যাই বলুক না কেন, মেট্রোর নিরাপত্তা যে ঢিলেঢালা তার প্রমাণও মিলেছে সম্প্রতি। মাস তিনেক আগে মাষ্টারদা সূর্য সেন স্টেশনের পুলিশকর্মীরা এক ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তার ব্যাগে তল্লাশি চালান। উদ্ধার করা হয় তিনটি দেশি রিভলভার।
ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy