Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

পথ দেখিয়ে উদাসীন কলকাতাই

রাজ্য সরকার পরিবেশের বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব না দেওয়ায় মানুষও সচেতন হয়নি। আর কলকাতায় বাঁচার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাম্প্রতিক কালে কোনও বড় আন্দোলনও গড়ে ওঠেনি। পরিবেশবিদেরা বলছেন, শহুরে মানুষের উন্নাসিকতাই এর মূলে।

বাড়ছে দূষণ। সংগৃহীত ছবি।

বাড়ছে দূষণ। সংগৃহীত ছবি।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গই। কিন্তু পরিবেশ দফতরটা এখন এ রাজ্যে যেন দুয়োরানি।

কী বাম আমল, কী তৃণমূলের ছ’বছর— কখনওই সরকারের কাছে গুরুত্ব পায়নি পরিবেশ। রাজ্য সরকার পরিবেশের বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব না দেওয়ায় মানুষও সচেতন হয়নি। আর কলকাতায় বাঁচার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাম্প্রতিক কালে কোনও বড় আন্দোলনও গড়ে ওঠেনি। পরিবেশবিদেরা বলছেন, শহুরে মানুষের উন্নাসিকতাই এর মূলে।

অথচ আলাদা করে পরিবেশ দফতর তৈরির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু এ দেশে পথিকৃত। স্বাস্থ্য দফতর থেকে বার করে পরিবেশের জন্য ১৯৮২ সালে আলাদা মন্ত্রী তৈরি হয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রী ছিলেন ভবানী মুখোপাধ্যায়। সেই দৌড়েই পিছিয়ে পড়েছে রাজ্য। কমেছে পরিবেশ দফতরের গুরুত্ব। অন্য কোনও দফতরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পরিবেশ দফতরকে।

বাম আমলে র়ডন স্কোয়ারে সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে যেমন আন্দোলন হয়েছিল, তেমন কোনও আন্দোলন কিন্তু গড়ে ওঠেনি কলকাতা পুর এলাকায় ব্যাপক হারে পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে। শহরের দক্ষিণাংশে ভূস্তরে আর্সেনিক বিপদজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়লেও রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি মানুষকে। একই ভাবে যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলেও, শব্দের দাপটে কানে তালা লেগে গেলেও কোনও গণ আন্দোলন দেখেনি শহর।

পরিবেশের গুরুত্ব যে কমছে, তার পরিচয় দেন বামফ্রন্টের আমলে এক তরুণ পরিবেশমন্ত্রী। তিনি সল্টলেকে নবগঠিত পরিবেশ ভবনে বসে সিগারেট খেয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। বামফ্রন্টের শেষ দিকে আরও কমে পরিবেশ দফতরের ভূমিকা। বাম আমলের শেষ পরিবেশমন্ত্রী শৈলেন সরকার অসুস্থ অবস্থাতেই কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁর পুরো সময়কাল।

তৃণমূল আমলের প্রথম পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারও দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত বছর সুদর্শনবাবু জিতলেও তাঁকে আর মন্ত্রী করা হয়নি। পরিবেশ দফতর যাঁকে দেওয়া হল, সেই শোভন চট্টোপাধ্যায় শহরের মেয়র, আবাসন ও দমকলমন্ত্রীও। তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে সামলাতে হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলা। তাই পরিবেশ দফতর শোভনবাবুর একটা অলঙ্কারের মতো। শোভনবাবুর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘আমাকে যে দফতরই দেওয়া হোক না কেন, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করি। একসঙ্গে এতগুলি দফতর সামলাতে কোনও সমস্যাই হয় না আমার।’’

কিন্তু পরিবেশ দফতরের দায়িত্ব শোভনবাবু ঠিকঠাক পালন করছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, শহরে যত্রতত্র নলকূপ বসিয়ে, বহুতল বাড়িগুলিকে গভীর নলকূপ বসানো থেকে বিরত করতে পারেননি মেয়র। শহরের জলস্তর হু হু করে নেমেছে। কলকাতার রাস্তায় পুরনো সরকারি গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে পারেননি পরিবেশমন্ত্রী শোভনবাবু। পুরসভা তাঁর হাতে থাকা সত্ত্বেও শহরের বাজারগুলি থেকে তিনি প্লাস্টিক নির্মূলে কোনও পদক্ষেপই করেননি।

রাজ্য মন্ত্রিসভার মতো কলকাতা পুরসভাতেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি দেখার জন্য আলাদা মেয়র পারিষদ নেই। বামফ্রন্ট আমলে এক বারই মাত্র পরিবেশের জন্য পৃথক মেয়র পারিষদ ছিলেন। বর্তমানে জঞ্জাল, টালিনালার মতো বিভাগ এক পারিষদের হাতে এবং পরিবেশ দেওয়া হয়েছে বস্তির দায়িত্বে থাকা এক পারিষদকে। এ সংক্রান্ত পুর দফতরও নড়বড়ে।

দূষণ নিয়ন্ত্র পর্ষদ তবে করছে কী? একটা সময়ে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান থাকতেন। সেই নিয়ম বদলেছে। এখন পর্ষদের চেয়ারম্যান এক জন নামী পরিবেশবিদ। কিন্তু পর্ষদের দড়ি বাধা সেই পরিবেশ দফতরে। ‘‘দফতরই যখন নিষ্ক্রিয়, তখন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সক্রিয় করবে কে,’’ আক্ষেপ এক পরিবেশকর্মীর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy