আপ্রাণ: তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বই শুকোনোর চেষ্টা। বৃহস্পতিবার, বইমেলার একটি স্টলে। নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন সরকারি দফতরের সহযোগিতায় সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এমনটাই ছিল বইমেলা কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু বইপ্রেমীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দফায় দফায় চলা বৃষ্টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রস্তুতিতে কতটা ফাঁক ছিল। বহু স্টলের ভিতরে জল ঢুকে যাওয়ায় বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ঘণ্টা তিন-চার দুর্ভোগে পড়লেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। ভিজে গেল অসংখ্য বই। বৃষ্টির জেরে সময় মতো বই নিয়ে বসতে পারলেন না অনেক বিক্রেতা। জমা জল, কাদায় ভরা মেলা প্রাঙ্গণের কয়েকটি অংশে যাতায়াত করতে পারলেন না বইপ্রেমীরাও।
প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক ছিল না দাবি করেও বইমেলা কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন, স্টল তৈরির ক্ষেত্রে কিছু কারিগরি ত্রুটি ছিল। তার জেরে আচমকা অতি বৃষ্টিতে সমস্যা হয়েছে। তবে মেলা বিপর্যস্ত হয়নি দাবি করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের বাহিনী প্রস্তুত ছিল। বৃষ্টি থামতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবস্থা অনেকটাই সামাল দেওয়া হয়েছে। দ্রুত স্টল মেরামতির কাজ শুরু হয়। জমা জল সরাতে ব্যবহার করা হয় জেটিং অ্যান্ড সাকশন মেশিন।
এ দিন সকাল থেকে চলা বৃষ্টিতে সল্টলেকের করুণাময়ী মোড় সংলগ্ন স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণের ভিতরে জল জমে যায়। শুধু মাত্র মেলা প্রাঙ্গণের রিং রোড-সহ রাস্তাগুলিতেই নয়, ফুড কোর্ট, মুক্তমঞ্চ, লিটল ম্যাগাজ়িন প্যাভিলিয়ন সংলগ্ন এলাকাও জলমগ্ন হয়। লিটল ম্যাগাজ়িনের প্যাভিলিয়ন অনেক বেশি খোলামেলা। ফলে সেখানে বই রাখার জন্য টেবিলগুলি জলে ভিজে যায়। বাদ যায়নি ছোট-বড় বইয়ের স্টলগুলিও। অসংখ্য স্টলের সিলিং কিংবা দেওয়াল বেয়ে জল পড়ে ভিজিয়ে দিয়েছে বই। সে সব বই কিনতে রাজি হননি ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়ার কথাও অনেক স্টল থেকে ঘোষণা করা হচ্ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু প্রকাশক-লেখকের তরফে আবেদন করা হয়, বই অল্প ভেজা হলেও যেন পাঠকেরা তা কেনেন। বৃষ্টির জেরে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আধঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। বৃষ্টি থামার পরে বইমেলার চার নম্বর গেটের কাছে একটি জায়গায় আগুনের ফুলকি দেখা যায়। বইমেলায় হাজির থাকা দমকল কর্মীরা দ্রুত সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ দিন একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু বই ভিজে গিয়েছে। স্টলের কর্মীরা জানান, স্টল তৈরির সময়ে মাথার উপরে ছাউনি দেওয়া হয়েছিল। ছাদের সঙ্গে স্টলের বাইরের দিকে বোর্ডগুলির মধ্যে কয়েক ইঞ্চির ফারাক ছিল। ছাউনি আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিলে জল ভিতরে ঢুকত না। কেউ কেউ আবার জানান, শীতের মরসুমে এমন মুষলধারে বৃষ্টি হবে তা ভাবা যায়নি। এ দিন বহু স্টলে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে বই বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন কর্মীরা।
বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন লিটল ম্যাগাজ়িনের প্যাভিলিয়নের ছোট-বড় প্রকাশকেরা। সেখানে বসে একটি পত্রিকার কর্মকর্তা চৈতালি ব্রহ্ম জানান, প্যাভিলিয়নের বাইরের দিকে যাঁরা বসেছেন, তাঁরা সকাল থেকে বই বার করে সাজাতেই পারেননি। টেবিলগুলি সব ভিজে গিয়েছে। তাঁর নিজের স্টলেরও বহু বই ভিজে গিয়েছে। পরে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মুক্তমঞ্চের কাছে স্টলগুলির সামনে জল দাঁড়িয়েছিল অনেক ক্ষণ। ফলে কোনও ক্রেতাই সেখানে ঢুকতে পারেননি। জল সরানো হলেও কাদার জেরে দিনভর চলে ভোগান্তি।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে জানান, আকস্মিক প্রবল বৃষ্টির জেরে সমস্যা হয়েছিল। জলও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরে দ্রুত জল সরানো হলেও কাদা ঠেকানো যায়নি। তবে বেলা যত গড়িয়েছে ততই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। প্রথম দিনের তুলনায় বইপ্রেমীদের ভিড়ও বেড়েছে। তিনি জানান, মেলার প্রথম দিনের লক্ষাধিক লোকের ভিড়কে ছাপিয়ে গিয়েছে এ দিনের ভিড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy