Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

ঝড় এড়িয়েও ক্ষণস্থায়ী স্বস্তি, তুমুল বৃষ্টিতে বন্দি শহর

তুমুল বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে যায় উত্তরের উল্টোডাঙা মোড়, কাঁকুড়গাছি, সিআইটি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলুটোলা স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট।

জলমগ্ন: জলের তলায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। বৃহস্পতিবার। 

জলমগ্ন: জলের তলায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। বৃহস্পতিবার।  ছবি: সুমন বল্লভ 

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

ইয়াসের তাণ্ডব এড়ানোর স্বস্তি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভোগান্তিতে বদলে গেল। এক দিকে ভরা কটালের জেরে বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও গঙ্গায় বাড়ল জলস্তর। অন্য দিকে, এ দিন দুপুর থেকেই শহরে শুরু হয়ে গেল টানা বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে দ্রুত জলমগ্ন হয়ে পড়ল বেশ কিছু এলাকা। বিকেলের পরে বন্ধ লকগেট খুলে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও বহু এলাকায় রাত পর্যন্ত জল জমে থাকে বলে খবর।

আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হবে। পাশাপাশি, দুপুর ২টো ৩ মিনিটে কটালের জেরে গঙ্গার জলস্তর বাড়তে পারে প্রায় সাড়ে ১৭ ফুট! বুধবার রাত থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় শহরে। পুরসভা সূত্রের খবর, সকাল ছ’টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত শহরের বহু জায়গায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে জিঞ্জিরাবাজার এলাকায়, প্রায় ১৫৯ মিলিমিটার। এর পরেই রয়েছে বেহালা ফ্লাইং ক্লাব এলাকা। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিমিটার। বেলগাছিয়া এবং মোমিনপুরে বৃষ্টি হয়েছে ১০৬ মিলিমিটার করে। ঠনঠনিয়া এবং মানিকতলায় বৃষ্টির পরিমাণ যথাক্রমে ১০২ এবং ১০১ মিলিমিটার।

তুমুল বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে যায় উত্তরের উল্টোডাঙা মোড়, কাঁকুড়গাছি, সিআইটি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলুটোলা স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট-সহ ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির আশপাশের কিছু রাস্তা। একই অবস্থা হয় ক্যামাক স্ট্রিট, ইলিয়ট রোড, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যাভিনিউ, ফ্রি-স্কুল স্ট্রিট, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, পার্ক সার্কাস মোড়, ডায়মন্ড হারবার রোড-সহ খিদিরপুরের বেশ কিছু রাস্তার। গঙ্গার জলস্তর বাড়ায় বুধবারের মতো এ দিনও জলমগ্ন ছিল কালীঘাট রোড, টালিগঞ্জ রোড-সহ আদিগঙ্গার আশপাশের কিছু এলাকা। দফায় দফায় বৃষ্টির পরে শহরের পরিস্থিতি এক সময়ে এমন হয় যে, কোথাও কোথাও নৌকা নামাতে হয় পুলিশকে। নিকাশির কাজে নামে পুরসভার ওয়ার্ড-ভিক্তিক দল। দ্রুত খুলে দেওয়া হয় লকগেটগুলি। বিপদ বুঝেও লোক নামিয়ে ম্যানহোল খোলানোর কাজ করাতে হয় পুরসভাকে।

তার মধ্যেই উত্তরের কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে দেখা গেল, দিনভর অপেক্ষার পরেও বৃষ্টি কমছে না দেখে বন্ধ গাড়িতেই পরিবারকে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন দু’জন। তাঁদের এক জন বললেন, “দিনভর খাওয়া হয়নি। ঘরে জল ঢুকে রান্না করে খাওয়ার পরিস্থিতি নেই। পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছি।” অন্য জন বললেন, “গাড়িটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুকনো কোনও জায়গা পেলে চালু করা যায় কি না দেখি।” কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ওষুধের দোকানের ভিতরে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে জিনিস বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি। বললেন, “প্রচুর ওষুধ ভিজে গিয়েছে। আগামী কয়েক দিন এই চত্বরে কেউ দোকান খুলতে পারবেন কি না সন্দেহ।”

এন আর এসের সামনে আবার খাবারের অপেক্ষায় লাইন দিয়ে থাকা এক মহিলা বললেন, “আজ সারা দিন খাওয়া হয়নি। জমা জল পেরিয়ে খাবারের গাড়ি আসবে বলে মনেও হয় না।” বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডের একটি বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধকে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ছেলে বলেন, “বাবা শয্যাশায়ী। কিন্তু ঘরে খাট নেই। এসে দেখি, জলের মধ্যেই পড়ে আছেন। কবে জল নামবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।” আহিরীটোলা ঘাটের কাছের পুরনো বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে উঠে যাওয়ার সময়ে এক পরিবারের বয়স্ক সদস্য নৃপেন হালদার বলে উঠলেন, “আগেই ছেলেদের বলেছিলাম এ বাড়ি ছেড়ে দে। ঝড় থেকে বাঁচলেও জল থেকে কোনও মতে রক্ষা হবে না।” পাশ থেকে বিরক্ত স্ত্রী স্বামীকে থামিয়ে বলে উঠলেন, “এখনই বৃষ্টি নামবে, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটো দেখি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy