Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus Lockdown

বিপজ্জনক বাড়ির চিন্তা বাড়াচ্ছে বৃষ্টি

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ বিপজ্জনক বাড়িতেই দেওয়াল ফাটিয়ে গাছের শিকড় ঢুকেছে। আমপানের কারণে সেই গাছ পড়ে যাওয়ায় বাড়িতেও টান পড়েছে।

করুণ: মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি বিপজ্জনক বাড়ির বেহাল দশা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

করুণ: মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি বিপজ্জনক বাড়ির বেহাল দশা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৩:২৪
Share: Save:

শহরে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। লাগাতার বৃষ্টিতে সেই বাড়ি ভাঙার বিপদ আরও বাড়ে। আমপানের রেশ কাটতে না কাটতেই বর্ষার টানা বৃষ্টি বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে পুরসভার। অভিযোগ, বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কার সংক্রান্ত পুর আইন সংশোধন করেও লাভ হয়নি। সে ভাবে কাজেই লাগেনি ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’ বা এফএআর-এ ছাড় দেওয়ার পুর পরিকল্পনাও।

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ বিপজ্জনক বাড়িতেই দেওয়াল ফাটিয়ে গাছের শিকড় ঢুকেছে। আমপানের কারণে সেই গাছ পড়ে যাওয়ায় বাড়িতেও টান পড়েছে। পুরকর্মীরা সেই গাছ কেটে সরাতে গেলে বিপজ্জনক বাড়িটিও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি হচ্ছে। গত সপ্তাহে চেতলায় এ ভাবেই একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ে।

কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে শহরে প্রায় দেড় হাজার বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে ৪০০টির অবস্থা খুব খারাপ। সেই সব বাড়ির বাসিন্দাদের বার বার নোটিস দিয়েও কাজ হয়নি। আমপানের পরে সেই বাড়িগুলি আরও দুর্বল হয়েছে। ওই আধিকারিকের কথায়, “কোথাও মালিক-ভাড়াটে, কোথাও শরিকি বিবাদে বাড়িগুলির সংস্কার হচ্ছে না।”

সংস্কার না হওয়ায় ২০১৬ সালে ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় দু’জনের। তখন এ নিয়ে শোরগোলের পরে পাশ হয় পুর আইনের ৪১২(এ) ধারা। এতে বিপজ্জনক বাড়ি জানিয়ে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেম্‌ড’ নোটিসও ধরা হয়। ওই ধারায় বিপজ্জনক বাড়ির মালিককে বাড়িটি ভেঙে ফের নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তার বদলে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’ বা এফএআরের ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে। কিন্তু বাড়িমালিক সেই কাজ না করলে ভাড়াটেদেরও সুযোগ দেবে পুরসভা। তারাও সংস্কার করতে না-পারলে পুরসভাই ওই কাজে নামবে। কিন্তু আদতে এফএআরের ছাড় বা কনডেমড নোটিস ধরিয়েও কাজ হয়নি বহু জায়গায়। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, এখনও প্রায় ১২ হাজার শহরবাসী মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে আঁকড়ে রয়েছেন বিপজ্জনক বাড়িকেই।

মহাত্মা গাঁধী রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে এমনই একটি বাড়িকে প্রায় পাঁচ বছর আগে বিপজ্জনক ঘোষণা করে পুরসভা। বাড়ি খালি করার নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও সেখানে বসবাস করে ১৬টি ভাড়াটে পরিবার। এমনকি, বিপজ্জনক লেখা বোর্ডটিও খুলে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে বাড়ির ভিতরে। বাড়ির এমন অবস্থা যে, বহু জায়গায় সিঁড়ির অংশবিশেষও ভেঙে পড়েছে। পাঁচিল ভেদ করে উঠেছে বটগাছ। ওই বাড়ির এক ভাড়াটে জীবন সরকার বললেন, “বৃষ্টি পড়লে ঘরে বালতি ধরে বসে থাকতে হয়। মালিক বলেছেন, ভেঙে পড়লে তবেই সারাবেন।” অন্য কোথাও চলে যান না কেন? জীবনবাবুর উত্তর, “মাসে ১৪০ টাকায় ঘরভাড়া কোথায় পাব?”

লকডাউন শুরুর আগে শোভাবাজারের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো নন্দন বাড়ির একাংশও ভেঙে পড়েছিল। এখনও সেখানে দোতলার ঘরের একাংশে বিপজ্জনক ভাবে বসবাস করছেন বৃদ্ধ দম্পতি। শয্যাশায়ী স্বামীর পাশে বসে বৃদ্ধা বলেন, “বাড়ি সারানোর টাকা নেই। আর বোনেরাও সারাতে দেবে না। শরিকি বিবাদ আছে।” হাজরা মোড়ের এমনই এক বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দা স্নেহময় হালদার আবার বললেন, “আমপানে যখন বেঁচে গিয়েছি, আর ভয় নেই। অকারণ টাকা খরচ করব কেন?” পাশে বসা স্ত্রী অবশ্য ঝাঁঝিয়ে উঠলেন— “ভেঙে পড়ার ভয়ে আমার মানসিক সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, তাতে কারও হুঁশ নেই।”

বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে হুঁশ ফিরবে কী ভাবে? লালবাজারের দাবি, বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা এ নিয়ে পুলিশের কাছে গেলে স্থানীয় থানা সাহায্য করবে। পুরসভা কী আরও কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবছে? কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বললেন, “সবটাই মাথায় আছে। দেখা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy