অবৈধ: রেলের স্লিপার টুকরো করে এ ভাবেই বাড়ি তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
রেললাইন লাগোয়া এলাকা। সেখানে বাড়িতে-বাড়িতে, এমনকি রাস্তাতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে দামি কংক্রিটের স্ল্যাব। সে সব দিয়ে কোথাও উঁচু করা হয়েছে রাস্তা, কোথাও বা বাড়ির উঠোন। কিন্তু এ রকম শক্তপোক্ত কংক্রিটের স্ল্যাব এল কোথা থেকে?
একটু খোঁজ করতেই জানা গেল, ওই স্ল্যাবগুলি আসলে রেলের স্লিপার। সরকারি সম্পত্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, দেখভালের অভাবে মাঝেমধ্যেই চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলের নানা সম্পত্তি। পথে-বাড়িতে পড়ে থাকা এই সব স্লিপার ও সেগুলির ভাঙা টুকরো সেই চুরিরই ফল।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রেললাইনকে সমান্তরাল ভাবে দু’পাশ থেকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য মাঝখানে পাতা থাকে কংক্রিটের এই স্লিপার। এক ধরনের ক্লিপ (প্যান্ড্রোল) দিয়ে
সেগুলি লাইনের সঙ্গে আটকানো থাকে। এই স্লিপারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, মাটির সঙ্গে তা শক্ত হয়ে থাকে। ফলে নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা স্লিপারের উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও সেগুলি মাটিতে বসে যায় না।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, আগে এই স্লিপারগুলি ছিল কাঠের। এখন তার পরিবর্তে আরও পোক্ত কংক্রিটের স্লিপার ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন স্লিপারগুলি তৈরি হচ্ছে সিমেন্ট দিয়ে। ভিতরে থাকছে লোহা। ফলে সেগুলি দেখতে হচ্ছে স্ল্যাবের মতো। অনেক জায়গায় পুরনো কংক্রিটের স্লিপার বদলানোর কাজও শুরু হয়েছে।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখা সূত্রের খবর, কিছু দিন ধরেই ওই শাখার বারাসত, বামনগাছি, দত্তপুকুর থেকে শুরু করে অশোকনগর, বনগাঁর বিস্তীর্ণ রেলপথে বদলানো হচ্ছে পুরনো স্লিপার। সেই পুরনো এবং নতুন স্লিপার রাখা থাকছে রেললাইনের ধারে। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে সেখান থেকেই সাইকেল ভ্যান এবং মালবাহী গাড়িতে করে সেগুলি চলে যাচ্ছে এলাকার বিভিন্ন গুদামে।
গোটা স্লিপার ছাড়াও স্লিপারের ভাঙা টুকরো বস্তায় ভরে গুদাম থেকে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। মাফিয়াদের কাছ থেকে সে সব কিনে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। বারাসত সংলগ্ন বামনগাছিতে গিয়ে দেখা গেল, এমনই সব স্লিপার ছড়িয়ে রয়েছে নিত্যানন্দ সরণি এলাকার রাস্তাঘাটে। ওই এলাকারই কাশিমপুরে আবার বাড়ি-বাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে স্লিপারের ভাঙা টুকরো। সস্তায় এমন শক্তপোক্ত জিনিস মিলছে বলেই কি সেগুলি ব্যবহার করছেন কেউ কেউ? বেশির ভাগ বাসিন্দাই অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। অপূর্ব দেব নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘রেলের এই সম্পত্তি চুরি করে, বিক্রি করে সেই টাকায় নেশা করার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রাত বাড়লেই চোরা কারবারের পাশাপাশি চলে নেশার আসর।’’ এক স্কুল শিক্ষিকার অভিযোগ, বারাসত, বামনগাছি, দত্তপুকুর স্টেশন এলাকার রেললাইন চত্বর এখন হয়ে উঠেছে অপরাধের মুক্তাঞ্চল। বিকেলের পরে ভয়ে ওই পথে কেউ যান না। এ বিষয়ে রেলকে জানিয়েও লাভ হয়নি।
ঘটনার কথা জেনে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলের স্লিপার চুরি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রেললাইন ও সংলগ্ন এলাকায় যারা নেশার আসর বসাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy