Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

প্রক্রিয়াকরণ হয় পুরোটাই, তাই খাতায় হিসাব ওঠার আগেই সরিয়ে ফেলা হত বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য?

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের অভিযোগ, সন্দীপ এই কাজটাই করতেন। যেখান থেকে সিবিডব্লিউটিএফ বর্জ্য সংগ্রহ করবে, সেখানে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য জমানোর আগেই তার একাংশ সরিয়ে ফেলা হত।

বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য।

বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৫৩
Share: Save:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বিক্রি-সহ একাধিক অভিযোগ খতিয়ে দেখবে সিবিআই। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংক্রান্ত তথ্যে খাতায়কলমের ফাঁক ধরাই গোয়েন্দাদের কাছে তদন্তের প্রাথমিক ধাপ হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কারণ, সরকারি নথি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ হয়। অর্থাৎ, প্রক্রিয়াকরণ হয় না, এমন কোনও অংশ নেই।

যেমন, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট (বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্ট, ২০২২) জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ হল ৩৮৮৮৬.১৪ কিলোগ্রাম। আবার কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে গত ৩১ ডিসেম্বর যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে শয্যাযুক্ত এবং শয্যাহীন হাসপাতালের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দৈনিক পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৭৯৯.৫২ কিলোগ্রাম এবং ৬০৮৬.৬২ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ মোট ৩৮৮৮৬.১৪ কিলোগ্রাম, যার পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ হয়। ফলে যেখানে উদ্বৃত্ত বা প্রক্রিয়াকরণ হয় না এমন অংশই নেই, সেখানে কী ভাবে দুর্নীতির প্রসঙ্গ এসেছে, কী ভাবে সন্দীপ সেই বর্জ্য বাইরে বিক্রি করেছেন, দরপত্রে কী ভাবে অনিয়ম হয়েছে, হিসাবে কী ভাবে গোলমাল দেখানো হয়েছে— এমন প্রশ্নগুলিই তদন্তের আতশকাচের তলায় উঠে আসতে পারে বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

তাঁদের বক্তব্য, আসলে বিষয়টা যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে দেখার পরিবর্তে বিষয়টা কোথা থেকে শুরু হচ্ছে— সেখান থেকে দেখা দরকার। ধরা যাক, কোনও হাসপাতালে দৈনিক ১০০ কিলোগ্রাম বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অশুভ চক্র সূত্র থেকেই এই ১০০ কিলোগ্রামের মধ্যে থেকে ৩০ কিলোগ্রাম সরিয়ে দিল। শুধুমাত্র ৭০ কিলোগ্রামের হিসাব দেখাল খাতায়কলমে, যার পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ হল। এ বার সরকারি নথিতে এই ৭০ কিলোগ্রামেরই হিসাব ধরা থাকছে। বাকি ৩০ কিলোগ্রামের কোনও হিসাব থাকছে না।

রাজ্যের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত এক ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’-এর (সিবিডব্লিউটিএফ) এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা যেটুকু হাতে পাই, পুরোটাই প্রক্রিয়াকরণ করি। এ বার নির্দিষ্ট জায়গায় বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য রাখার আগেই যদি কেউ বা কারা সরিয়ে নেন, সেটা তো আমরা জানতে পারি না।’’ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের অভিযোগ, সন্দীপ এই কাজটাই করতেন। যেখান থেকে সিবিডব্লিউটিএফ বর্জ্য সংগ্রহ করবে, সেখানে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য জমা করে রাখার আগেই তার একাংশ সরিয়ে ফেলা হত।

প্রসঙ্গত, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে ২০২০ সালের জুলাইয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একটি কমিটি গঠন করেছিল। তাতে সরকারি প্রতিনিধির পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ঠিক হয়েছিল, কোভিড-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে গাফিলতি থাকলে রিপোর্টের মাধ্যমে কমিটি তা পর্ষদকে জানাবে। ওই কমিটির সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে দুর্নীতি একটা রয়েছেই। অতীতে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য সিবিডব্লিউটিএফ হিসাবে ছাড়পত্রই পায়নি, এমন এক সংস্থাকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যপ্রক্রিয়াকরণের বরাত দেওয়া হয়েছিল বেআইনি ভাবে। ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নব দত্তের কথায়, ‘‘আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের মতো আমাদেরও অভিজ্ঞতা হল, এই বর্জ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি হয়ে এসেছে রাজ্যে। সন্দীপ ঘোষের ঘটনা সেটারই প্রমাণ!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bio Medical Waste R G Kar Medical College and Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy