Advertisement
E-Paper

এত কাজ করবে কে? এত ক্লাসই বা কে নেবে? নিয়োগ বাতিলের পর প্রশ্ন বহু স্কুলে, চাপে প্রধানশিক্ষকেরা

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানালেন, তাঁদের স্কুলে ২০১৬ সালে যোগ দেওয়া কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পার্থ বলেন, ‘‘ওঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব ভাল।’’

যোগ্য শিক্ষকদের বহাল রাখার দাবিতে চাকরি-হারা শিক্ষকদের জমায়েতে জমা নেওয়া হচ্ছে নথি। বুধবার, শহিদ মিনার ময়দানে।

যোগ্য শিক্ষকদের বহাল রাখার দাবিতে চাকরি-হারা শিক্ষকদের জমায়েতে জমা নেওয়া হচ্ছে নথি। বুধবার, শহিদ মিনার ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৮
Share
Save

প্রধান শিক্ষক বা সহ-শিক্ষককে কি এ বার ছুটির পরে স্কুল ভবনে তালা দেওয়ার কাজও করতে হবে? অথবা, মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজির শিক্ষককেই কি পড়াতে হবে একাদশ-দ্বাদশের ইংরেজি?

আদালতের রায়ে ২০১৬ সালের প্যানেলের ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিল হওয়ার পরে কলকাতার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মনে এই প্রশ্নই উঁকি মারছে। কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতায় পাঁচশোরও বেশি স্কুল রয়েছে। এই জেলার শ’চারেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। গরমের ছুটির পরে কী ভাবে স্কুলগুলি চলবে, তা নিয়েই সংশয়ে প্রধান শিক্ষকেরা।’’ তবে ওই কর্তা জানান, আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া ওই শিক্ষকদের স্কুলে আসতে এখনও বারণ করা হয়নি। এমন কোনও নির্দেশও শিক্ষা দফতর থেকে আসেনি।

দ্য খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুল থেকে দু’জন শিক্ষক এবং এক জন গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। ওই দুই শিক্ষকের এক জন ইংরেজির, অন্য জন রসায়নের। সালেহিন বলেন, ‘‘রসায়নের শিক্ষক ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন। মাধ্যমিকে তিনি ছিলেন ৪২তম স্থানাধিকারী। এই নিয়োগ বাতিলের দলে তিনিও পড়েছেন। এখন রসায়ন পড়ানোর কেউ নেই।’’ সালেহিন বলেন, ‘‘চাকরি হারানো ওই গ্রুপ-সি কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, উদ্ভিদবিদ্যায় এম এসসি এবং বিএড। স্কুলে কম্পিউটারের সব ধরনের কাজের জন্য ওঁর উপরেই নির্ভরশীল ছিলাম আমরা। এ বার কে এই কাজ করবেন?’’ বাঙুরের নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, তাঁদের স্কুলের দু’জন শিক্ষক এবং এক জন গ্রুপ-ডি কর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। দু’জন শিক্ষকের মধ্যে এক জন একাদশ-দ্বাদশের রসায়নের শিক্ষক এবং অন্য জন নবম-দশমের বাংলার শিক্ষক। সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে দু’জন গ্রুপ-ডি কর্মী ছিলেন। এক জন অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। তিনি স্কুলে আসেন না। তাই কর্মরত এক জনই ছিলেন। তাঁরও নিয়োগ বাতিল হল।’’

যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানালেন, তাঁদের স্কুলে চার জন গ্রুপ-ডি কর্মী ছিলেন। এক জন আগেই অবসর নিয়েছেন, এক জন অন্য চাকরি পেয়ে চলে গিয়েছেন, আর এক জন মাসকয়েক আগে মারা গিয়েছেন। কর্মরত যিনি ছিলেন, তিনি ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে নানা দিক সামলাতেন। এ বার যদি তিনিও চলে যান, তা হলে কী ভাবে স্কুল চলবে? অমিতের প্রশ্ন, ‘‘এ বার কি স্কুলে তালা দেওয়ার কাজও সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকদের করতে হবে? স্কুলে ঘণ্টাও বাজাতে হবে শিক্ষকদের?’’

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানালেন, আদালতের রায়ে তাঁদের স্কুলে ২০১৬ সালে যোগ দেওয়া কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পার্থ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব ভাল। পড়াতেনও দারুণ। তাঁর নিয়োগও বাতিল হল। নিয়োগ বাতিল করার সময়ে কেন অযোগ্য ও যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য করা গেল না? সেট করা গেলে স্কুলগুলিকে এই অবস্থায় পড়তে হত না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengal SSC Recruitment Case Calcutta High Court School Teachers Education system

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}