Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাস্তায় কেন তারের জট, প্রশ্ন তুলল যুবকের মৃত্যু

যত্রতত্র এমন দলা পাকানো তার দৃশ্যদূষণ তো করতই। এ বার সেই তার ছিনিয়ে নিল একটি জীবনও। বছরের প্রথম দিনেই তারের কুণ্ডলীতে আটকে প্রাণ হারিয়েছেন এক মোটরবাইক আরোহী।

মরণফাঁদ: বিবাদী বাগে তারের কুণ্ডলী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মরণফাঁদ: বিবাদী বাগে তারের কুণ্ডলী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share: Save:

ধর্মতলা মোড়। বাতিস্তম্ভের গায়ে দলা পাকানো অবস্থায় ঝুলছে টিভি-র কেব্‌ল সংযোগের তার।

পার্ক সার্কাস থেকে বালিগঞ্জ যাওয়ার দিকে গড়িয়াহাট রোড। দু’পাশের ফুটপাথে কুণ্ডলী পাকানো তার।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন ফুটপাথ। বাতিস্তম্ভ থেকে ঝুলে থাকা তার ছড়িয়ে রয়েছে ফুটপাথের উপরেও।

যত্রতত্র এমন দলা পাকানো তার দৃশ্যদূষণ তো করতই। এ বার সেই তার ছিনিয়ে নিল একটি জীবনও। বছরের প্রথম দিনেই তারের কুণ্ডলীতে আটকে প্রাণ হারিয়েছেন এক মোটরবাইক আরোহী। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তারের এমন জট রাস্তায় থাকবে কেন?

কোনও জবাব মেলেনি পুলিশ ও প্রশাসনের অফিসারদের কাছে। টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— শহরের প্রায় সর্বত্রই তারের এমন জট রয়েছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা বাঁধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে পুরসভারই বিদ্যুৎ বা বাতিস্তম্ভ। বড় রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলি, সর্বত্রই ছেয়ে গিয়েছে তারের জঙ্গল। যা শহরের শ্রী নষ্ট করার পাশাপাশি বাড়াচ্ছে বিপদের ঝুঁকিও।

তা হলে পুর প্রশাসন ও পুলিশ নির্বিকার কেন?

পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, মাস আটেক আগে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কেব্‌ল অপারেটর এবং এমএসও (মাল্টিপল সিস্টেম অপারেটর)-দের ডেকে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে স্পষ্টই বলে দেওয়া হয়েছিল, মাটির উপরে কোনও তার রাখা যাবে না। অবিলম্বে তা সরাতে হবে। কিন্তু বছর ঘুরতে চলল, কোনও হুঁশ নেই কেব্‌ল ব্যবসায়ীদের। মেয়রের নির্দেশ কেন মানা হল না, তা দেখারও কোনও প্রয়োজন বোধ করেনি পুর প্রশাসন। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘শাসক দলের কর্তারা চাইলেই শহর থেকে ওই সব তারের জঙ্গল সরিয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু তাঁরা উদ্যোগী না হওয়ায় ওই পরিকল্পনা রয়ে গিয়েছে খাতায়কলমেই।’’ তাঁর ধারণা, এ বার বাইকের হাতলে ওই তার জড়িয়ে এক জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিশ্চয়ই টনক নড়বে পুরকর্তাদের।

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় তার ঝোলানোর অনুমোদন দেয় কলকাতা পুরসভা। অভিযোগ পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।’’ ‌

আরও পড়ুন: তারের ফাঁদে জড়িয়ে মৃত বাইক আরোহী

পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, এক-একটি কেব্‌ল অপারেটর সংস্থা শহরে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ পর্যন্ত সংযোগ দিয়েছে। তাদের আয়ও প্রচুর। রীতিমতো মাসোহারা দিয়েই ব্যবসা চালান তাঁরা। কোনও কোনও কেব্‌ল ব্যবসার পিছনে আবার শাসক দলের নেতা, কাউন্সিলরেরাও রয়েছেন। তাই তার সরানো নিয়ে দ্বিধা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। তা ছাড়া, অনুমতি না নিয়েই যত্রতত্র তার ঝোলানোয় বহু টাকার রাজস্ব পাচ্ছে না পুরসভা। ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘পুরসভার বিদ্যুৎস্তম্ভকে ব্যবহার করেই কেব্‌ল সংযোগের তার লাগানো হচ্ছে। পুর নিয়মে তা করতে হলে পুরসভাকে ভাড়া দিতে হয়।
নামী কিছু সংস্থা পুরসভার স্তম্ভ ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে স্তম্ভপিছু এক হাজার টাকা করে ভাড়া দেয়। অথচ, কেব্‌ল অপারেটরেরা তা দেন না। এ নিয়ে শহরের এক কেব্‌ল অপারেটরের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো কম পয়সা নিই। বিদ্যুৎস্তম্ভের ভাড়া দিতে হলে কিছুই থাকবে না।’’

ওই পুর ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘স্যাটেলাইট টিভির যুগে মাটির উপরে এ ভাবে তারের জঙ্গল থাকা একেবারেই উচিত নয়। হিডকো-র উদ্যোগে নিউ টাউনে এখন সব তার মাটির নীচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরুতেও এ সব উঠে গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার মতো শহর এখনও পিছিয়ে। এর পরেও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Wire Death Roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE