পাখির চোখ: লক্ষ্য ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা। জোরকদমে চলছে নতুন টালা সেতুর নির্মাণ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
জমা জলের পাশে এবড়োখেবড়ো মাটিতে বসানো লোহার স্তম্ভের সঙ্গে ঝুলছে নির্মাণ সংস্থার বোর্ড। তাতে লেখা, ‘সাবধান। ফলিং জ়োন। উপর থেকে কিছু মাথায় পড়ে বিপদ ঘটতে পারে।’ তবে তা নিয়ে যেন ভাবনাই নেই এক যুবকের। নির্মীয়মাণ টালা সেতুর নীচে বসে খাতায় অঙ্ক কষে চলেছেন তিনি। বোর্ড দেখেছেন? প্রশ্ন শুনেই একগাল হেসে যুবকের উত্তর, ‘‘সামনে পরীক্ষা। বসিরহাট থেকে সকালের ট্রেনে এসেছি। এখানে এত সুন্দর হাওয়া দেখে বসে পড়েছি। আসলে ছোট থেকে অনেক গল্প শুনেছি। টালা সেতু হয়ে এসেছে শুনে দেখতে চলে এলাম।’’
ওই যুবকের মতো উত্তর কলকাতার অনেকের মধ্যেই এখন এই সেতু ঘিরে উৎসাহ প্রবল। মহালয়ার আগেই সেতুটি খুলে দেওয়া হবে বলে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় ঘোষণা করে দেওয়ার পরে তা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গেই বেড়েছে নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের তৎপরতা। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, সেতুর কাজ শেষ করার কথা আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর পরে উদ্বোধনের দিন ঠিক করার কথা সরকারের। এই কারণেই দিন-রাত জেগে, রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এখন কাজ চলছে সেখানে। বাড়ানো হয়েছে কর্মীর সংখ্যাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেতুটিতে দিনে যতটা না কাজ হয়, রাতে কাজ চলে তার চেয়েও বেশি।
সেতুর কাজ কত দূর এগোল, আদৌ ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে মহালয়ার দিন বা তার আগে উদ্বোধন সম্ভব কি না— সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে শনিবার দুপুরে যাওয়া হয়েছিল নির্মীয়মাণ টালা সেতুর কাছে। দেখা গেল, শ্যামবাজারের দিক থেকে টালা সেতুর দিকে আসার পথে বাঁ পাশে প্রচুর কাজ চলছে। ওই জায়গায় চলছে জলের পাইপলাইনের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সেখানকার এক হোটেলের মালিক বললেন, ‘‘জলের পাইপলাইনের কাজ শেষ হলে এই দিকের সার্ভিস রোডটি মেরামত করে সুন্দর করে দেওয়ার কথা। গত আড়াই বছর ধরে আমার হোটেল বন্ধ। কিন্তু এই ক’দিনের সমস্যা মানিয়ে নিয়েছি ভাল কিছু হওয়ার আশায়।’’ সেতুর ডান দিকে দেখা গেল, খোঁড়াখুঁড়ি অপেক্ষাকৃত কম। সেখানকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই দিকে সেতুর উপরে ওঠার একটি সিঁড়ি তৈরি হয়েছে। এখান দিয়েই নির্মাণ সামগ্রীর গাড়ি ঢোকে। প্রয়োজনে ওই সিঁড়ি দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী তোলা হয়।’’
ওই সিঁড়ি দিয়ে টালা সেতুর উপরে উঠে দেখা গেল, চার লেনের দ্বিমুখী এই সেতুর এক দিকের র্যাম্পের কাজ প্রায় শেষ। সেখানে কংক্রিটের উপরে বস্তা পেতে জল দিয়ে শুকোনোর কাজ চলছে। বাকি রয়েছে ওই দিকের কিছু অংশের রেলিং এবং রাস্তার পাশের ফুটপাতের কাজ। তবে আগে টালা সেতু হয়ে যে দিকটি ধরে সিঁথির মোড়ের দিকে আসা যেত, সেই দিকের কাজ একটু বেশি বাকি। সেখানেই নির্মাণ সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘এই দিকের প্রায় ৫৫ মিটার মতো রাস্তা কংক্রিট করা বাকি। প্রায় ২০০ মিটার বাকি রেলিংয়ের কাজও। কংক্রিটের কাজটি বড়জোর এক সপ্তাহে হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরেও ফুটপাত, রেলিং, সেতু থেকে নামা-ওঠার জন্য তৈরি সিঁড়ির কাজ-সহ আরও বেশ কিছু জিনিস বাকি থাকবে।’’
সেতুর উপরেই বানানো নীল-সাদা কাপড়ে মোড়া প্যান্ডেলে রাখা রয়েছে নানা সময়ে তোলা সেতু তৈরির কাজের ছবি সংবলিত বোর্ড। তার মধ্যেই একটিতে রয়েছে সেতুর সম্পূর্ণ পরিকল্পনার মানচিত্র। সেগুলি দেখিয়ে নির্মাণ সংস্থার অন্যতম ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘টালা সেতু লম্বায় বেড়েছে প্রায় ১৫০ মিটার। অর্থাৎ, মোট ৯৫০ মিটারের কাজ হচ্ছে। খরচ পড়ছে প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা। এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাড়াহুড়ো করে হয় না। তবু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ হয়ে যেত। কিন্তু এখন বৃষ্টি যা ভোগাচ্ছে, তাতে কী হবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’’ কথা শেষ করেই উঠে পড়তে হল ইঞ্জিনিয়ারকে। কয়েক জন সহকর্মীকে দ্রুত নির্দেশ দিলেন, ‘‘আকাশ দেখো, মেঘ ডাকছে। সাবধান। যা যা যেখানে সরানোর, সরিয়ে ফেলো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy