মহালয়ার বিকেলে জনজোয়ার। নিউ মার্কেট অঞ্চলে। — নিজস্ব চিত্র
যানজটের হয়রানি রয়েছে। আছে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরিও। কিন্তু কিছুকেই পাত্তা দেওয়ার সময় নেই আমবাঙালির। শহর জুড়ে যে সেই গন্ধটা ম ম করছে। এক অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ, যাতে নতুন মাত্রা যোগ করছে রাস্তার পাশের বিজ্ঞাপনের হোডিং, প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে আসা প্যান্ডেল আর পুরনো দোকানের নতুন সাজসজ্জা। এই সব কিছুই আরও চড়িয়ে দিয়েছে পারদটা। জানান দিচ্ছে, দিন চলেই এল।
আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান পর্বও হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ভোরে রেডিও মনে করিয়ে দিয়েছে, দেবীপক্ষ শুরু। হাতে আর মাত্র ছ’দিন। তাই ছুটির দুপুরের ভোজ তাড়াতাড়ি সেরে শেষ বেলার তোড়জোড়ে নেমে পড়েছেন বাঙালি।
বাজার করার ধরন বদলেছে। সেই সব দিন ফুরিয়েছে যখন ধর্মতলা বা গড়িয়াহাটে গেলেই মাথার ক্লিপ থেকে পায়ের জুতো কেনা হয়ে যেত। ছুটোছুটির কিলোমিটার ক্রমশ বাড়ছে। পরিশ্রম বেড়েছে কিশোর-কিশোরীদের। পছন্দের ব্র্যান্ডের জিনিস কিনতে তাঁরা হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন শপিং মলে। তবে জামাকাপড় কিনেই তো লিস্ট শেষ হয় না। সঙ্গে মানানসই জুতো, কানের দুল, ব্যাগ আরও কত কী চাই! সেগুলির জন্য কিন্তু নতুন প্রজন্মেরও প্রথম পছন্দ সাবেক ঠেক। নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের ফুটের সঙ্গে দৌড়ে নামার মতো জায়গা তৈরি হয়নি।
এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রো়ডের একটি শপিং মলে ঢুকেই মনে হল মেলা বসেছে। লাল-কমলা-সবুজ রঙের কাপড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে টিমটিমে আলো। সেই আলো-আঁধারির মাঝেই ভিড় জমিয়েছেন আট থেকে আশি। তাঁদেরই এক জন একাদশ শ্রেণির অনুষ্কা রায়ের কথায়, ‘‘প্রায় সবই কেনা হয়ে গিয়েছে। জিন্স আর টি-শার্ট বাকি ছিল। তাই ছুটির দিন নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়েছি।’’ সদ্য কলেজে পা দেওয়া অমৃতা শেষ বেলার কেনাকাটা সারতে এসেছিলেন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে। তবে পছন্দের কুর্তি, প্যান্ট, পালাজো কিনেই পর্ব শেষ হচ্ছে না এই অষ্টাদশীদের। তাঁদের পরের গন্তব্য গড়িয়াহাট। অমৃতার কথায়, ‘‘আমাদের সকলের পছন্দের ব্র্যান্ড একই। তাই সেই দোকান থেকে কুর্তি কিনব বলে একসঙ্গে এসেছি। কিন্তু মানানসই কানের দুল কিনতে গড়িয়াহাট যেতেই হবে। ওখানে একটা দোকানে ৫০ টাকায় ভাল দুল পাওয়া যায়।’’
এলগিন রোডের আর একটি শপিং মলের ছবিও প্রায় এক। কলেজপড়ুয়া রক্তিম বসুও এ দিন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন শেষবেলার কেনাকাটি করতে। হরেক ব্র্যান্ডের জামা, জুতো, ব্যাগের মেলবন্ধনের বিচারে সেরার শিরোপা পাচ্ছে সেই নিউ মার্কেট। দামি ব্রান্ডের শার্ট, প্যান্ট কিংবা কুর্তি, সালোয়ারের সম্ভার যেমন আছে, তেমনই রয়েছে দোকানির সঙ্গে দরদাম করে জিতে যাওয়ার সুযোগ। সেখানে ভিড় ঠেলে সস্তায় ব্যাগ-চুরি-হার-দুল কেনার আনন্দটাই নাকি আলাদা, বলছে জেন ওয়াইও। তাই শহরময় সব বাজারে যতই বেড়েছে ভিড়, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লোক জমতে থেকেছে সাবেক সব বাজার-পাড়ায়। বৃদ্ধা থেকে কিশোরী, কারওরই পুজোর বাজার সম্পূর্ণ হয় না সে সব পাড়া ছুঁয়ে না এলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy