ফাইল চিত্র।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় পরিবেশ আদালতে অতিরিক্ত হলফনামা দাখিল করে কলকাতা পুরসভা জানিয়েছিল, হট মিক্সের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি করতে পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হবে। এ জন্য দ্রুত দরপত্র ডাকা হবে। কিন্তু আড়াই বছর পরেও, সেই দরপত্র পুরসভা ডেকে উঠতে পারেনি! পুর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, করোনা সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের কাজে দেরি হচ্ছে।
এ দিকে পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, হট মিক্স প্লান্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি করতে কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য পূর্ত দফতরকে একই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে পূর্ত দফতর রাস্তা তৈরির কাজে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেও ‘গড়িমসি’-র কারণে পুরসভা এখনও তা করেই উঠতে পারেনি।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, গত বছর মার্চের মধ্যেই খড়্গপুরে ‘হোয়াইট টপিং’ পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি শেষ হয়েছিল। রাস্তার উপরিভাগে পিচের আস্তরণের বদলে তা শক্তপোক্ত কংক্রিট করার পদ্ধতিকেই সহজ ভাবে ‘হোয়াইট টপিং’ বলা হয়। সেই সঙ্গে ওই দফতর রাস্তা মেরামতির কাজে ‘মাইক্রোসারফেসিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে সিমেন্ট, বালি, বিশেষ রাসায়নিক, জল-সহ মিশ্রণ একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। যাতে জল, রাস্তার উপরিভাগের আস্তরণ সরিয়ে চুঁইয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে এবং মেরামতি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, এই পদ্ধতিতে ইতিমধ্যেই হাওড়ায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতি শেষ হয়েছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, হোয়াইট টপিং এবং মাইক্রোসারফেসিং— দু’টিই পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সমস্ত ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কাজের বরাত পেতে গেলে বায়ুদূষণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রাখতে হবে। ফলে তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি থাকাটা বাধ্যতামূলক।’’
পুরসভা অবশ্য জানাচ্ছে, শহরের শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের একাংশে (আন্দুল রাজ রোড থেকে রাসবিহারী মোড়ের দিকে যেতে ৪৩১ মিটার) পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুমোদনের জন্য রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই তিন কোটি টাকারও বেশি ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। পামারবাজার ও গড়াগাছার হট মিক্স প্লান্টকেও পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো পরিবেশবান্ধব করা হয়েছে।
কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ায় এত দেরি কেন?
করোনা সংক্রমণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাস্তা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রতন দে বলছেন, ‘‘আগে তো মানুষকে বাঁচাতে হবে। তার পরে দরপত্র। তা ছাড়া অতিমারির কারণে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি রয়েছে।’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ বড় সমস্যা ঠিকই। কিন্তু সেই সংক্রমণ তো গত দেড় বছর ধরে রয়েছে। তার আগেই তো দরপত্র ডাকার কথা ছিল পুরসভার।’’
সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পুরসভা করোনা সংক্রমণের যে অজুহাত দিচ্ছে, তা এখানে প্রযোজ্য নয়। কারণ, ওই একই সময়ে পূর্ত দফতর কী করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি করতে পারল? আসলে এ বিষয়ে পুরসভার চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy