প্রাক্তন চেয়ার প্রফেসার সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সুরে সুর মিলিয়ে কাজের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে এ বার প্রেসিডেন্সি ছাড়লেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মইদুল ইসলামও। এক বছরের লিয়েন নিয়ে সোমবার প্রেসিডেন্সি ছেড়েছেন মইদুল। মঙ্গলবারই যোগ দিয়েছেন সেন্টার ফর স্টাডিস ইন সোস্যাল সায়েন্সে।
রাজ্যের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেসিডেন্সিকে বাড়তি গুরুত্ব দিলেও বার বার কাজের পরিবেশ তুলে কেন শিক্ষকেরা এই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। প্রেসিডেন্সির পঠনপাঠন ও গবেষণার মান বাড়াতে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে মেন্টর গ্রুপ। দেশ-বিদেশ থেকে নামকরা অধ্যাপকদের নিয়ে আসার জন্য তৈরি হয়েছে চেয়ার প্রফেসর পদ। তা সত্ত্বেও কেন বিদায় নেওয়া শিক্ষকদের একাংশ কাজের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলছেন তা নিয়ে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর উদ্বিগ্ন। তবে উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, বাইরে থেকে যে সব অধ্যাপক প্রেসিডেন্সিতে পড়াতে এসেছিলেন তাঁরা অনেকেই আর্থিক লোকসান করে এসেছেন। প্রেসিডেন্সির জন্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন কাঠামো তৈরি করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মূলত বেতনের প্রশ্নেই অন্য জায়গা থেকে আসা শিক্ষকেরা প্রেসিডেন্সি ছাড়ছেন বলে মনে করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।
মহিদুল ইসলাম অবশ্য প্রেসিডেন্সি ছাড়ার দায় চাপিয়েছেন কাজের পরিবেশ না থাকাকেই। মহিদুলের অভিযোগ, ‘‘প্রেসিডেন্সিতে সব কিছুই অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে। একের পর এক শিক্ষক ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁরা কেন যাচ্ছেন, তাঁদের আটকাতেই বা কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে সে সব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!’’ তাঁর মতে, ‘‘কাজের পরিবেশ না থাকার কারণেই প্রেসিডেন্সি ছাড়ার সিদ্ধান্ত।’’ পাশাপাশি ওই অধ্যাপক জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘কোনও দিন পরিবেশ ঠিক হলে আমি ফেরত আসব প্রেসিডেন্সিতে।’’ অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তাঁকে ডাকলে যে তিনি পড়াতে আসবেন তাঁর লিয়েনের চিঠিতে সে কথা উল্লেখও করেছেন ওই অধ্যাপক।
প্রেসিডেন্সি থেকে শিক্ষক চলে যাওযার ঘটনা অবশ্য আগেও ঘটেছে। ইতিহাস বিভাগের বেঞ্জামিন জাকারিয়া দিয়ে যার শুরু। গত বছর মে মাস নাগাদ পদত্যাগ করেন ইতিহাস বিভাগের প্রধান শুক্লা সান্যাল। বিদেশ থেকে আসা জীবনবিজ্ঞানের অধ্যাপক অধীর মান্নাও ছেড়ে যান গত বছর। গত জুলাইয়ে ইস্তফা দেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার প্রফেসর সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তিনিও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এবং পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে ফিরে যান মুম্বইয়ে। সে সময়েও রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর বেতনের প্রসঙ্গ তুলেছিল।
কাজের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে অধ্যাপকদের প্রেসিডেন্সি ছাডা়র এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের শিক্ষাবিদেরা। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার যেমন বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কাজের পরিবেশ না থাকে তা হলে কী ভাবে তা ফেরানো যায় তা উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ঠিক করতে হবে।’’ প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীদের সংগঠনের সম্পাদক বিভাস চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কেউ যদি কাজের পরিবেশের অভাবের অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যান সেটা সত্যিই উদ্বেগের ব্যাপার। এতে প্রেসিডেন্সি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে বাইরে।’’
উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া অবশ্য কাজের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তিনি (মইদুল ইসলাম) আমাকে এ সমস্ত কোনও অভিযোগ করেননি। তিনি জানিয়েছেন, রিসার্চে যেতে চান। এর বেশি আমি কিছু বলব না।’’
তবে প্রেসিডেন্সির এক প্রবীণ অধ্যাপকের মন্তব্য, ‘‘গলদটা অন্য জায়গায়। প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হল, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুগ্রহ হয়ে থাকতে হল তাকে। বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসা হল, কিন্তু তাঁদের যথাযথ সম্মানিক দেওয়া হল না। এমন প্রেসিডেন্সি আমরা চাইনি। যদি যথাযথ বেতন না পান তা হলে বাইরে থেকে কৃতী অধ্যাপকেরা এই বিশ্ববিদ্যালেয় পড়াতে আসবেন কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy