সল্টলেকের দিগন্তিকা আবাসনের কাছে রাখা একাধিক গাড়ি। সেগুলির মালিকেরা কেউই সল্টলেকের বাসিন্দা নন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
কেউ থাকেন কেষ্টপুরে, কেউ লেক টাউনে, কেউ আবার বেলেঘাটায়। কেউই সল্টলেকের বাসিন্দা নন। অথচ, তাঁদের গাড়িই দিনের পর দিন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাসের পর মাস রাখা থাকে সল্টলেকের রাস্তায়! অভিযোগ, তেমন নজরদারি থাকে না পুলিশ বা পুরসভারও। রাস্তা সারাতে গিয়ে বা অন্য কোনও কাজে রাস্তা ফাঁকা করার প্রয়োজন পড়লে বিষয়টি সামনে আসে!
এমনই একটি গাড়ি রাখা ছিল সল্টলেকের বৈশাখী আইল্যান্ড থেকে খেয়াঘাট যাওয়ার রাস্তায়। সম্প্রতি বিধাননগর পুরসভা ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই গাড়িটির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। শেষে জানা যায়, আদতে কেষ্টপুরের বাসিন্দা গাড়ির মালিক নির্দ্বিধায় সল্টলেকে পার্কিং করে বিদেশে চলে গিয়েছেন। অগত্যা ওই গাড়ির নীচ এবং আশপাশ মিলিয়ে ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে রাস্তা পিচ করে চলে যেতে হয় পুরসভাকে। প্রায় দিন ১৫ পরে ওই গাড়ির মালিক দেশে ফিরে গাড়িটি সরিয়ে নিয়ে গেলে বাকি অংশে পিচ করা হয়।
এ ব্যাপারে বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল বললেন, ‘‘এমন সব গাড়ির জন্য প্রচণ্ড ভুগতে হচ্ছে। এই সব গাড়ির মালিকেরা সল্টলেকে থাকেন না, অথচ গাড়ি রেখে দিয়ে চলে যান। এই ঘটনার পরেও হুঁশ হয়নি।’’ বিধাননগরের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘বেআইনি পার্কিংয়ের এই ধরনের অভিযোগ ট্র্যাফিকের কাছে সে ভাবে আসেনি। সব দিক দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’
পিএনবি মোড় থেকে বৈশাখী মোড়, ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক, আইবি ব্লকের একটি শপিং মল সংলগ্ন রাস্তা, জিডি আইল্যান্ডমুখী রাস্তা, সল্টলেকের অফিসপাড়া-সহ তিনটি সেক্টরের বিভিন্ন ব্লকের অলিগলিতে ঘুরে যদিও দেখা গেল, সল্টলেক জুড়ে এমন প্রচুর গাড়ি পড়ে রয়েছে, যেগুলি আদৌ সেখানকার বাসিন্দাদের নয়। এমনই একটি গাড়ি ‘ডব্লিউবি০২এএল৮৩৪৪’। সল্টলেকের দিগন্তিকা আবাসনের পাশের রাস্তায় সেটি আধ ঢাকা অবস্থায় রাখা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গাড়িটি ব্যবহার না হওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। পুলিশ সূত্রে গাড়ির নম্বর ধরে বার করা হয়েছিল মালিকের নাম-ঠিকানা। জানা গেল, গাড়িটি রাজীব বসাক নামে এক ব্যক্তির নামে রয়েছে। কিন্তু যে ফোন নম্বর পরিবহণ দফতরের নথিতে রয়েছে, সেটি জয়দীপ সরকার নামে এক ব্যক্তির। জয়দীপকে ফোন করে জানা গেল, তিনি গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন রাজীবকে। জয়দীপের থেকে পাওয়া নম্বরের সূত্রে রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় তাঁর বাড়ি। সল্টলেক ফাঁকা থাকে, তাই সেখানে গাড়ি রেখে দেন। বললেন, ‘‘ব্যাপারটা খুব সমস্যার কিছু কি? আসলে সল্টলেকের মতো ফাঁকা জায়গা তো বিশেষ নেই, তাই ওখানে রেখে আসি।’’
ওই রাস্তাতেই একই ভাবে রাখা ‘ডব্লিউবি৩৪এক্স৭৫০৫’ নম্বরের একটি গাড়ি। পুলিশ সূত্রে জানা গেল, সেটির মালিকের নাম কৃষ্ণেন্দু পাত্র। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের ঠিকানায় নথিভুক্ত করা গাড়িটি। এই গাড়ি সল্টলেকে পার্ক করে রাখা কেন? কৃষ্ণেন্দু প্রথমে দাবি করলেন, ‘‘কেষ্টপুরে থাকি। সল্টলেকে যেখানে গাড়ি রাখা রয়েছে, তার পাশেই খালের সেতু ধরে হেঁটে সহজেই কেষ্টপুরের বাড়ির কাছে চলে যাওয়া যায়।’’ এর পরে কৃষ্ণেন্দুর দাবি, ‘‘সল্টলেকে এডি-৩৩৩ নম্বর বাড়িটাও আমাদেরই।’’ কিন্তু এডি-৩৩৩ বাড়িটির কাছে পৌঁছে দেখা গেল, সেটি নির্মীয়মাণ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে কৃষ্ণেন্দু নামের কেউ থাকেন না বলে জানালেন প্রতিবেশীরা। পরে আর ফোন ধরেননি কৃষ্ণেন্দু। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
একই ভাবে সল্টলেকের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ‘ডব্লিউবি০২এইউ২৬৯৩’ নম্বরের আর একটি গাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, সেটি আবার জওহরলাল নেহরু রোডের একটি ইস্পাত সংস্থার নামে নথিভুক্ত। সেটির মালিকের নম্বর ধরে যোগাযোগ করে জানা গেল, গাড়িটি অনুপম ঘোষ নামে এক ব্যক্তির। অনুপম বললেন, ‘‘সল্টলেকে থাকি না ঠিকই, তবে ওখানে আমার এক আত্মীয় থাকেন।’’ কিন্তু কোথায় সেই আত্মীয়ের বাড়ি? উত্তর দিতে পারেননি অনুপম। শুধু বলেছেন, ‘‘খুব কাছেই থাকি, সমস্যা হলে গাড়ি সরিয়ে দেব।’’
ঘুরতে ঘুরতেই আবার এমন বহু গাড়ির দেখা মিলেছে, যেগুলির ভগ্নপ্রায় অবস্থা। এর কোনওটিতে তেলেঙ্গনার, কোনওটিতে আবার বিহার বা উত্তরপ্রদেশের নম্বর প্লেট। গাড়ির মালিকের যে ফোন নম্বর নথিভুক্ত করা রয়েছে, সেগুলির আজ আর কোনও অস্তিত্বই নেই। এ ছাড়া, এমন গাড়িরও দেখা মিলেছে, যেটির মালিকের নাম দেবদাস সাহা। খড়দহের ঠিকানায় নথিভুক্ত গাড়িটি। কিন্তু গাড়ির মালিকের নম্বর হিসেবে পরিবহণ দফতরে যে নম্বর রয়েছে, সেটি হালিশহরের বাসিন্দা রিপন সাহা নামে এক ব্যক্তির। তিনি ফোনে বললেন, ‘‘আমার মোটরবাইক আছে। কোনও দিন গাড়ি কিনিনি। তা ছাড়া, হালিশহর থেকে শেষ কবে সল্টলেক গিয়েছি, মনেও পড়ে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy