বিপত্তি: বুধবার প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সংগঠনের অবরোধের জেরে বন্ধ রাজা এস সি মল্লিক রোড। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী ছিল বুধবার। তার মধ্যেও খোলা ছিল স্কুল, বেশ কিছু কলেজ এবং অফিস। এমন ভরা কাজের দিনে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহামিছিল এবং অবস্থান-বিক্ষোভে থমকে গেল দক্ষিণ কলকাতার বড় একটি অংশ। দুপুর দু’টো থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা রাজা এস সি মল্লিক রোডে ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নিদারুণ দুর্ভোগে ফেললেন বাঘা যতীন, রানিকুঠি, নাকতলা, নেতাজিনগর থেকে গড়িয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। হয়রানি থেকে রেহাই পেলেন না হাসপাতালে যাওয়া রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরাও। সংগঠনের নেত্রী পৃথা বিশ্বাসের দাবি, এ দিন তাঁদের প্রায় এক লক্ষ সমর্থক মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘উস্তি ইউনাইটেড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর কয়েক হাজার সদস্য এ দিন দুপুর সওয়া একটা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে রওনা হন। মিছিলের জমায়েতের জন্য তখন থেকেই যানবাহনের গতি শ্লথ হতে শুরু করে। লালবাজারের নির্দেশ পেয়ে বাঘা যতীন মোড়ে ব্যারিকেড করে মিছিল আটকায় পুলিশ। ব্যারিকেড করা হয় সুলেখা মোড়েও।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এর জেরে আটকে পড়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা। বন্ধ হয়ে যায় গড়িয়া ও টালিগঞ্জমুখী যান চলাচল। অটো এবং রিকশা চলাচলও প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা জানান, গড়িয়া থেকে গড়িয়াহাটগামী বাসকে পাটুলি মোড় থেকে বৈষ্ণবঘাটা হয়ে ইএম বাইপাস দিয়ে পাঠানো হয়। কিছু বাস গড়িয়া মোড় থেকে এন এস সি বসু রোড ধরে টালিগঞ্জ দিয়ে যায়। অন্য দিকে, গড়িয়াহাট মোড় থেকে গড়িয়াগামী সব গাড়িকে সুলেখা মোড় থেকে বাইপাস ধরে পাঠানো হয়। যদিও পৃথার দাবি, ‘‘আমরা রাস্তার একটি লেন খুলে রেখে অবস্থানে বসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ ওই লেনও বন্ধ করে দেয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তারাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছে।
ওই এলাকায় তিনটি বড় স্কুল রয়েছে— বাঘা যতীন বালক বিদ্যালয়, বাঘা যতীন বালিকা বিদ্যালয় এবং যাদবপুর সম্মিলিত বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষকদের বিক্ষোভ-অবস্থান দীর্ঘমেয়াদি হবে, এই আশঙ্কায় এবং ছাত্রীদের বাড়ি ফিরতে দুর্ভোগ হবে অনুমান করে স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে দেন। কিন্তু ওই তিনটি স্কুলের পুলকার বা যাতায়াতের গাড়ি না আসায় বিপাকে পড়ে ছাত্রীরা।
অ্যাঞ্জেলা গুহ নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘বাবা আমাকে নিতে আসতে পারেনি। কী করে ফিরব বুঝতে পারছি না।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘রাস্তা আটকে এ ভাবে অন্যের দুর্ভোগ বাড়িয়ে আন্দোলন করলে মানুষ তা সমর্থন করেন না।’’
ওই অবস্থান-বিক্ষোভের জন্য এ দিন নাজেহাল হন বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাওয়া লোকজনও। অনেক অসুস্থ লোকজনকে দেখা যায়, রিকশা না পেয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র কিছু অ্যাম্বুল্যান্সকে এ দিন যেতে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্ধ্যায় বিক্ষোভ চলাকালীন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন অজন্তা রায় নামে এক মহিলা। বাঘা যতীন মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘সামনেই বাড়ি। বাস থেকে নেমে রিকশা করে ফিরি। কিন্তু যা অবস্থা, তাতে রিকশা যাওয়ারও উপায় নেই। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে হেঁটে কী ভাবে ফিরব কে জানে।’’
অবশেষে সন্ধ্যা ছ’টার পরে রাস্তা থেকে অবস্থান ওঠে। পৃথা বলেন, ‘‘দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে আমরা রাস্তা থেকে অবস্থান তুলে নিয়ে পাশে একটি পার্কে গিয়ে বসছি। সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে আমরা আন্দোলন করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy