Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্র-শিক্ষক একযোগে পথে প্রেসিডেন্সি

মঙ্গলবারের শীতের বিকেল ছড়িয়ে দিল এমনই উত্তাপ। খুবই অল্প সময়ের আহ্বানে নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী মিছিলে চলে এসেছিলেন সক্কলে। প্রাণশক্তির জোরে স্লোগানে স্লোগানে শহর কাঁপিয়েই তা রাজপথে ধারে ও ভারে বিরাট হয়ে উঠল।

প্রতিবাদ:শ্যামবাজার মোড়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের অবস্থান। ছবি: ঋজু বসু

প্রতিবাদ:শ্যামবাজার মোড়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের অবস্থান। ছবি: ঋজু বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৯
Share: Save:

মধ্য চল্লিশের শিক্ষকমশাই মাইক হাতে বললেন, ‘‘আমি স্বীকার করছি, আগে কখনও মিছিলে হাঁটিনি! মনে হয়েছিল, কী হবে হেঁটে? বেশ তো আছি! আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছি।’’ ছাত্রছাত্রীদের কাছে শেখার ভঙ্গিতেই মিছিলে পা মিলিয়ে তিনি চললেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে সিধে শ্যামবাজারের মোড় পর্যন্ত।

মঙ্গলবারের শীতের বিকেল ছড়িয়ে দিল এমনই উত্তাপ। খুবই অল্প সময়ের আহ্বানে নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী মিছিলে চলে এসেছিলেন সক্কলে। প্রাণশক্তির জোরে স্লোগানে স্লোগানে শহর কাঁপিয়েই তা রাজপথে ধারে ও ভারে বিরাট হয়ে উঠল। এসএফআই, আইসি, আইসা ইত্যাদি ছাত্র সংগঠন— সব একজোট। কে শিক্ষক, কে ছাত্র— সেটাও গুলিয়ে গিয়েছে। অনুচ্চ চেহারার পক্ককেশ প্রবীণ রীতিমতো দাপুটে ভঙ্গিতে হিন্দুত্ববাদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়া কিংবা নাগরিক পঞ্জির কাগজ ছিঁড়ে ফেলার আর্জি জানাচ্ছেন। তিনি কলা বিভাগের ডিন প্রদীপ বসু। মুষ্টিবদ্ধ হাতে স্লোগান দিচ্ছেন জনৈক তরুণী, ‘হো হো হো চি মিন বা রাজগুরু সুখদেব ভগৎ সিংহ, উই শ্যাল ফাইট, উই শ্যাল উইন’! আপনি কোন বর্ষ? প্রশ্ন করে জানা গেল, তিনি ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা দাস।

গুলিয়ে গিয়েছে এমন অনেক কিছুই। প্রেসিডেন্সির গেটে পাশাপাশি হাত ধরে স্লোগান দিচ্ছেন দু’জন ছাত্র। এক জনের পরনে লুঙ্গি, অন্য জনের কপালে তিলক কাটা। জানা গেল, লুঙ্গিধারী তরুণ ইংরেজির দ্বিতীয় বর্ষের সূর্যদীপ কর্মকার। তিলক কাটা তরুণ বাদুড়িয়ার বাসিন্দা, প্রেসিডেন্সিতে জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ইকবাল হাসান। বিক্ষোভকারীদের পোশাক নিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে মন্তব্য করেছিলেন, এ ভাবেই তার জবাব দিলেন দুই ছাত্র। মিছিল কখনও বলেছে, ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই, বিচ মে মোদী কাঁহা সে আই’ কিংবা ‘রবীন্দ্রনাথের মাটিতে এনআরসি চলবে না’! বহুচর্চিত আজাদির স্লোগান থেকে বেলা চাওয়ের সুরে ‘মোদী অমিত দূর হটো, বাংলা থেকে বিজেপি তাড়াও’ তো ছিলই। মিছিলের ছবি ঘুরে ঘুরে তুলে চলেছেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী তথা জেএনইউ-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। কিছু প্রাক্তন ছাত্র, অধুনা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, বর্তমান ছাত্রী অসমের এক তরুণী বা বন্ধুদের সূত্রে প্রেসিডেন্সিতে আড্ডা মারতে আসা এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্যামবাজার পর্যন্ত হাঁটলেন। ‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে’ থেকে ‘ও আলোর পথযাত্রী’— পরপর গান গাইছিলেন ইতিহাসের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষ বিপাশা ভট্টাচার্য।

আগাগোড়া সবটাই উপভোগ করছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপিকা নিকিতা সুদ। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়কার প্রেসিডেন্সি, প্রধানত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত তথাকথিত ভদ্রলোক শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রাধান্যের কথা তাঁর জানা। তিনি বললেন, ‘‘আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, খানিকটা পাল্টাচ্ছে আজকের প্রেসিডেন্সি। এবং সব থেকে ভাল লাগল, ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে উঁচুনিচুর ভেদ প্রায় নেই। সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ আগে তত দেখা যেত না। কলকাতায় এ বার সেটা দেখে দারুণ লাগল।’’ প্রতিবাদের এই পদধ্বনিই যেন বেঁধে দিল ক্রিসমাস ইভের কলকাতার সুর।

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency University NRC CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy