কারও বিরুদ্ধে পুলিশকে গুলি করার অভিযোগ। কেউ বা অপহরণের অভিযোগে সংশোধনাগারে দিন কাটাচ্ছেন। আবার কারও বিরুদ্ধে খুন এবং ধর্ষণের বিচার চলছে। সেই সব বন্দিদের তুলিতেই ক্যানভাসে শোভা পাচ্ছে মধুবনী চিত্রকলা। কয়েক মাস পরে খিদিরপুরে পা রাখলে এ সবই চাক্ষুষ করবেন সাধারণ মানুষ। এ বারই শহরের পুজোর থিম তৈরির সঙ্গে প্রথম নাম জড়িয়েছে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিদের। পুজোর আর কয়েক মাস বাকি। তাই রাত জাগছেন সংশোধনাগারের বন্দি তারক কোটাল ওরফে বাবলি, তপন চট্টোপাধ্যায়, আকাশ আলি, শেখ জামালেরা।
কারণ তাঁদের আঁকা একশোটির মতো ক্যানভাস খিদিরপুরের এক পুজোয় ঠাঁই পাবে। তার মধ্যে ৪০টি ক্যানভাস তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই সব ক্যানভাসে যেমন থাকবে দেব-দেবীরা, তেমনই কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রীও। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সংশোধনাগারের ভিতরে একটি প্রদর্শনীতে তা দেখতে পাবেন অন্য বন্দিরাও। শুরুতে ১১ জন বন্দি তথা সংশোধনাগারের আর্ট ফোরামের সদস্য এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন বেড়ে ১৩-১৪ জন হয়েছেন। কারণ কয়েক জন বন্দি স্থানান্তর হয়েছেন।
পুজোয় ক্যানভাস রাঙানো নিয়ে ওই সব বন্দিদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। তাতে অনেকটাই এগিয়ে গিরিশ পার্ক কাণ্ডে অভিযুক্ত বাবলি। একদা যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেই বাবলিই আগ্নেয়াস্ত্র না ধরে তুলি ধরতে চাইছেন। তাঁর সঙ্গে টক্কর রয়েছে অপহরণ-সহ অন্য অভিযোগে বন্দি তপন চট্টোপাধ্যায়ের। এক দিন ছবি আঁকলে তা প্রেসিডেন্সির আর্ট ফোরামের শিক্ষক আশিস দাসকে না দেখিয়ে যাঁর এক পা চলে না, সেই জামালও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বাবলি-তপনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার। এঁদের সঙ্গে ক্যানভাস রাঙানো শুরু করলেও সংশোধনাগার স্থানান্তরে দমদমে যেতে হয়েছে ছত্রধর মাহাতোর আত্মীয় সমীর মাহাতোকে।
গত বছর হুগলিতে বন্দিদের নিয়ে পুজোর কাজ করেছিলেন আশিস। এ বারে তাঁর মাধ্যমেই খিদিরপুরের পুজোয় বন্দিদের শিল্পীসত্তা ফুটে উঠবে। আশিসের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা হাতে অহরহ চপার, বোমা, আগেয়াস্ত্র তুলতেন। তাঁদের মধ্যেও যে শিল্প চেতনা আছে, তা এই শিল্পীদের কাজ দেখলে বোঝা যাবে।’’ খিদিরপুরের সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির সহ-সভাপতি সুজিত বসুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা অপরাধ জগতে ছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেরা কিছু করছেন। তাঁদের সেই শিল্পী পরিচয়কে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।’’ প্রতিমার সাজও বন্দিদের তৈরি করার কথা।
সোনা-রুপো-মুক্ত দিয়ে বাঁধানো বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ছবি। যেখানে একটি শিশুর দুর্গারূপকে তুলে ধরার কথা।মণ্ডপের সব থেকে বেশি নিরাপত্তা থাকবে ওই ছবি ঘিরে। এমন ভাবনার কারণ হিসাবে
আশিসের দাবি, ‘‘একটি শিশুর দুর্গারূপ থাকবে ছবিতে। একটি ছবির জন্য এত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করলে, কেন একটি শিশুকে তা দিতে পারব না! শিশুরাই তো ভবিষ্যৎ। সেই বার্তাও থাকবে।’’
সবুজায়নের বার্তা দিতে মণ্ডপে থাকবে বিভিন্ন রকমের আনাজও। যার চাষ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা।
সেপ্টেম্বরে প্যারোলে বন্দিদের ওই মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আগামী রবিবার খুঁটি পুজোয় সেখানে থাকতে পারেন সংশোধনাগারের পদস্থ আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy