Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু প্রসূতির, দাবি পরিবারের

দুধের শিশু কেঁদে উঠলে সদ্য মা হারানো মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন বছর সাঁইত্রিশের যুবক। একরত্তি শিশুকে কী ভাবে সামলাবেন মাঝেমধ্যেই ঠাহর করতে পারছেন না।

পরিচর্যা: সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে খাওয়াচ্ছেন জয়ন্ত সান্যাল। রবিবার, কামালগাজির বাড়িতে। (ডানদিকে) পৌলোমী ভট্টাচার্য। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পরিচর্যা: সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে খাওয়াচ্ছেন জয়ন্ত সান্যাল। রবিবার, কামালগাজির বাড়িতে। (ডানদিকে) পৌলোমী ভট্টাচার্য। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

এনআরএস-কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন দিদি পৌলোমী ভট্টাচার্য সান্যাল। সেই তাঁকেই চিকিৎসায় গাফিলতির শিকার হতে হল, এমনটা মেনে নিতে পারছেন না ভাই সাগ্নিক ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে, যিনি নিজেও চিকিৎসক। রবিবার সাগ্নিক বলেন, ‘‘ভাই চিকিৎসক বলে, দিদি প্রকাশ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল। এমনও আছেন যিনি চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ান। অথচ চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে তাঁর প্রাণও চলে যায়!’’

স্ত্রীকে হারানোর পরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে আপাতত রয়েছেন পৌলোমীর স্বামী জয়ন্ত সান্যাল। এ দিন দুপুরে কামালগাজির ঠিকানায় পৌঁছে দেখা গেল, তিন দিনের সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছেন বাবা। ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে ঠাকুমা বন্দনা সান্যাল। দুধের শিশু কেঁদে উঠলে সদ্য মা হারানো মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন বছর সাঁইত্রিশের যুবক। একরত্তি শিশুকে কী ভাবে সামলাবেন মাঝেমধ্যেই ঠাহর করতে পারছেন না। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বলে ওঠেন, ‘‘মা কেমন ছিল জানতেই পারল না!’’

এমন পরিস্থিতির জন্য বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলে তারকেশ্বরের বাসিন্দা জয়ন্ত জানান, বুধবার গভীর রাতে স্ত্রীর জল ভাঙতে শুরু হলে তাঁকে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সুপর্ণা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি করানো হয়। পরদিন বিকেলে শিশুকন্যার জন্ম দেন পৌলোমী। রাত পর্যন্ত তাঁর কোনও সমস্যা ছিল না। জয়ন্ত জানিয়েছেন, রাত ১২টা পর্যন্ত পৌলোমী ফেসবুকে অনলাইন ছিলেন। নতুন সদস্যের আগমন সংক্রান্ত কিছু পোস্টও করেন। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ হাসপাতালের ফোনে ঘুম ভাঙে জয়ন্তর। পৌলোমীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে আসতে বলা হয়। শুক্রবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিট নাগাদ পৌলোমীকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

স্বামীর বক্তব্য, তাঁকে ফোন করে জানানোর আগে পৌলোমীর দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের কারণ সম্পর্কে কেন তাঁকে জানানো হয়নি? জয়ন্তের কথায়, ‘‘মৃত্যু কেন হল সেটাই তো চিকিৎসকেরা বলতে পারেননি। বলছেন, কিছু বুঝতে পারছেন না! কার দোষে আমার মেয়ে তার মাকে হারাল জানতে চাই।’’ ইতিমধ্যেই আলিপুর থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

চিকিৎসক হিসেবে পৌলোমীর ভাই সাগ্নিকের ব্যাখ্যা, ‘‘হাসপাতাল জানিয়েছে, দিদির হিমোগ্লোবিন দশ থেকে চারে নেমে গিয়েছিল। অনেকটা রক্তক্ষরণ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। মনে হয়, অস্ত্রোপচারের সময়ে কোনও ব্লিডিং পয়েন্ট ছিল। ডাক্তারেরা যখন বুঝেছেন, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। সে জন্যই ফের সেলাই খোলা হয়েছিল। শরীরে থেকে ফ্লুইড বেরোলে রোগীর শক তো হবেই। সেটাই হয়েছে।’’ তিনি জানান, অস্ত্রোপচারের পরে আধ ঘণ্টা অন্তর রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সাগ্নিকের কথায়, ‘‘দিদির রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে গিয়েছিল। প্লেটলেট কম ছিল। পর্যবেক্ষণ ঠিক মতো হলে দিদির শারীরিক অবস্থার এত অবনতি হত না।’’

এই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার দাবি জানিয়েছেন মৃতার পরিজনেরা। অস্ত্রোপচারের সময়ের ফুটেজও দেখতে চান সাগ্নিক। তিনি বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তেরা সুবিচার পান না। দিদিকে যখন হারিয়েছি শেষ দেখে ছাড়ব। আর কাউকে পৌলোমী হতে দিতে চাই না।’’

ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে এক আধিকারিককে ফোন করা হলে তিনি আজ, সোমবার যোগাযোগের পরামর্শ দেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক সুপর্ণার দাবি, ‘‘চিকিৎসক হিসাবে রোগীর জন্য যা করণীয় করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy