আন্দোলন: অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল পড়ুয়া-চিকিৎসকদের। বুধবার সন্ধ্যায়, আর জি করে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কোনও কড়া মনোভাব নেওয়া বা পদক্ষেপ করার পক্ষপাতী ছিল না স্বাস্থ্য ভবন। শুধু স্পষ্ট করে জানানো হয়েছিল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রত্যেক চিকিৎসকের দৈনিক উপস্থিতির তথ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাতে হবে। যাঁরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের অনুপস্থিত দেখিয়ে সেই তথ্যও পাঠাতে বলা হয়। তার পরেই কাজে যোগ দিলেন আন্দোলনরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিরা (পিজিটি)।
হস্টেল কমিটি, স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন, হাউসস্টাফ নিয়োগে স্বচ্ছতা, হস্টেলের পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্ষোভ-অনশন করছিলেন আর জি করের পড়ুয়া-চিকিৎসকদের একাংশ। অগস্ট থেকে শুরু হওয়া সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ইন্টার্ন ও পিজিটি-দের একাংশও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, হাসপাতালে রোগী পরিষেবাও ব্যাহত হতে শুরু করে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তাদের তরফে সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়, পিজিটি-দের ব্যক্তিগত ভাবে ডেকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকে শুরু করে বুধবার সকালের মধ্যে পিজিটি-দের সকলেই কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের কর্মবিরতিতে পরিষেবা সব চেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছিল স্ত্রী-রোগ, অস্থি, শল্য বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। হাউসস্টাফদেরও প্রায় ৭০ শতাংশ কাজে যোগ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “পড়ুয়া, পিজিটি-সহ সকলেই সন্তানসম। তাই কড়া পদক্ষেপ না করে নমনীয় মনোভাব দেখানো হচ্ছে। কিন্তু দিনের পর দিন অনুপস্থিতি মানা যায় না। তাই উপস্থিতির তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। মনে হয়, শুভবুদ্ধি হওয়াতেই পিজিটি ও হাউসস্টাফেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।”
স্বাস্থ্য দফতরের এই ‘প্রচ্ছন্ন’ কড়া মনোভাবের জন্যই কি কাজে যোগ দিলেন? এই দাবি অবশ্য মানতে নারাজ বিক্ষোভরত পিজিটি-রা। তাঁদের এক জনের কথায়, “স্বেচ্ছায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। আবার স্বেচ্ছায় রোগী-স্বার্থের কথা ভেবেই কাজে যোগ দিয়েছি।”
হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় জরুরি বিভাগ, ট্রমা কেয়ারে এবং অন্যত্র একটি ফোন নম্বর টাঙিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা না মিললে সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে রোগীর পরিজনদের। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রোশন আলি নামে এক রোগী বুধবার জরুরি বিভাগে আসেন। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বলে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে শেষে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এ ভাবে হাসপাতালের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এখনও আর জি করের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থেকে বিক্ষোভ-অনশন চালিয়ে যাওয়া পড়ুয়া-চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের দাবি, “শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রথম থেকেই দুর্ব্যবহার করেছেন। তাই অগস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করি। শেষে উনি বাড়িতে পুলিশ পাঠান। এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছি। সরকারের বিরোধী নই, শুধু অধ্যক্ষ-বিরোধী।” গত ১৬ দিন ধরে টানা অনশনে কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শেখ রাজকুমার বলে এক জনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে শুনেছি। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রতিনিধির সেখানে গিয়ে দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলা উচিত। আমি ও আমার দল আন্দোলনের পাশে আছি। বিজেপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরের বিষয়ে নাক গলাতে চায় না। তবে ওঁরা ডাকলে যাব।” তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, “স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বার বার জানিয়েছেন, অনশন তুলে সুস্থ পরিবেশ ফেরানোর পরেই তিনি এসে সব কিছু খতিয়ে দেখবেন।”
অন্য দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পড়ুয়াদের ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট শুরু হবে। তার পরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা রয়েছে। এক শিক্ষক চিকিৎসকের কথায়, “কলেজের নিজস্ব পরীক্ষায় উপস্থিতি হয়তো দেখা হয় না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তো ৮০ শতাংশ উপস্থিতি লাগে। সেটা না থাকলে তো পরীক্ষায় বসা নিয়েও সমস্যা হতে পারে।” যদিও পড়ুয়াদের দাবি, তাঁরা ছুটির মধ্যেই আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাই সেখানে অনুপস্থিতির বিষয় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy