Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

মেডিক্যালের পাশেই দেদার শব্দবাজি ছটপুজোর রাতে

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা। গাড়ির হর্ন বাজানোও যেখানে বারণ, ছটপুজোর ভোরে সেখানেই চলে শব্দবাজির বেলাগাম দৌরাত্ম্য।

দৌরাত্ম্য: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় এক যুবকের হাতে ধরা চকলেট বোমার প্যাকেট (চিহ্নিত), কানে চাপা দিয়েছে বাকিরা। নিজস্ব চিত্র

দৌরাত্ম্য: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় এক যুবকের হাতে ধরা চকলেট বোমার প্যাকেট (চিহ্নিত), কানে চাপা দিয়েছে বাকিরা। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

‘রাত তিনটে নাগাদ চলে আসবেন। এলে নিজেই সব দেখতে পাবেন।’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা। গাড়ির হর্ন বাজানোও যেখানে বারণ, ছটপুজোর ভোরে সেখানেই চলে শব্দবাজির বেলাগাম দৌরাত্ম্য। এলাকাবাসীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে রাত তিনটে নাগাদ পৌঁছে গিয়েছিলাম ওই হাসপাতালের সামনে। এক নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তখন চা খাচ্ছেন রোগীদের পরিজনেরা। পাশেই দাঁড়িয়ে কয়েক জন অ্যাম্বুল্যান্স চালক। চায়ের একটি দোকানই তখন খোলা।

রাত ৩টে ১০। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু শব্দবাজি ফাটছে ঠিকই, কিন্তু তেমন বেশি নয়। ভাবলাম, তা হলে কি স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগটা কিছুটা অতিরঞ্জিত?

রাত ৩টে ৪৫। হঠাৎ মেডিক্যালের উল্টো দিকের ফুটপাত থেকে প্রবল জোরে বেজে উঠল সাউন্ড বক্স। সেই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছিল হাসপাতালের ভিতরেও। গানের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বিকট শব্দ। ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি।

পাশেই ফাটছে শব্দবাজি। মঙ্গলবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র

বাজির সেই আওয়াজটা এসেছিল মেডিক্যাল চত্বরের ইডেন হাসপাতাল রোডের দিক থেকে। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তার ধারে মেডিক্যাল কলেজের ধার ঘেঁষে তুবড়ি আর রংমশাল পোড়াচ্ছেন কয়েক জন। তুবড়ির ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ধোঁয়া ঢুকে পড়ছে হাসপাতাল চত্বরেও।

ভোর ৪টে ৫। যাঁরা বাজি পোড়াচ্ছিলেন, তুবড়ি আর রংমশালের সঙ্গে এ বার তাঁদের হাতে দেখা গেল রকেট আর চকলেট বোমাও। জানা গেল, প্রতি বছরই ভোর থেকে শব্দবাজি ফাটিয়ে গঙ্গায় ছটপুজো করতে যান তাঁরা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ট্রাক। তাতে চেপেই ওঁরা যাবেন গঙ্গায়।

এর মধ্যেই ইডেন হাসপাতাল রোড লাগোয়া প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট থেকে ঘনঘন শোনা যাচ্ছে শব্দবাজির আওয়াজ। সেখানে গিয়ে দেখলাম, দুই কিশোর চকলেট বোমায় আগুন দিয়ে ছুড়ে দিচ্ছে আকাশে। সেই বোমা যেখানে গিয়ে পড়ছে, সেই জায়গাটি মেডিক্যাল কলেজের গেট থেকে ১০০ মিটারেরও কম দূরে। প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের ওই চকলেট বোমার জবাব দিল মেডিক্যাল কলেজের তিন নম্বর গেটের উল্টো দিকের গলি আরপুলি লেন থেকে ছোড়া চকলেট বোমা।

৪টে ৩৪। আরপুলি লেনের ভিতরে দেদার চকলেট বোমা ফাটাচ্ছিল স্থানীয় ছেলেরা। তার মধ্যেই অচেনা আগন্তুককে দেখে এক জন বলে উঠল, ‘‘সাদা পোশাকের পুলিশ এসেছে রে! বাজি ফাটাস না এখন। দেখছিস না, মোবাইলে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক যুবক বলে উঠলেন, ‘‘পুলিশ কি এত রাতে গলিতে ঢোকে?’’

আরপুলি লেন থেকে কলেজ স্ট্রিটে বেরোতেই দেখলাম, পুলিশের টহলদার ভ্যান কোথাও না দাঁড়িয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। ভ্যানটি চলে যেতেই ফের চকলেট বোমার প্যাকেট নিয়ে আরপুলি লেন থেকে বেরিয়ে এল এক কিশোর। সঙ্গে কয়েক জন বন্ধু।

ভোর ৪টে ৩৭। ট্রামরাস্তার উপরেই হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে ফাটানো শুরু হল শব্দবাজি। এ বার বেশ কয়েকটি বড় আকারের চকলেট বোমা বেরোলো পলিথিনের প্যাকেট থেকে। কান ফাটানো শব্দে সেই বোমা ফাটিয়েই তখন আর এক প্রস্ত উল্লাস চলছে। যেন প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট বা ইডেন হাসপাতাল রোডের শব্দবাজির যোগ্য জবাব দেওয়া গিয়েছে। হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে তখন শব্দবাজির ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। কেউ কেউ ছোট ট্রাকের উপর থেকেই ছুড়ে দিচ্ছেন শব্দবাজি।

চকলেট বোমা ফাটানোর ছবি মোবাইলে তুলতে দেখে হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এলেন কয়েক জন যুবক। হাবভাব দেখে মনে হল, ইঙ্গিত স্পষ্ট, বাজি ফাটানোর ছবি তোলা যাবে না।

ভোর ৪টে ৫৫। পাড়ার যুবকদের তাকানো ও চোখের দৃষ্টি দেখেই বোঝা গেল, আর এখানে থাকা ঠিক হবে না। ওঁদের সন্দেহ আরও বাড়ছে। হাসপাতালের পাশ দিয়ে কলেজ স্ট্রিট ধরে যেতে যেতে দেখলাম, ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাস্তার আলো ম্রিয়মাণ। তবে শব্দবাজি তখনও ফেটে চলেছে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় শব্দবাজির দাপট নিয়ে প্রশ্ন করতে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তারও উত্তর দেননি। তাঁরা কি এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ আশিস বসুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Firecracker Pollution Chhat Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy