বর্জ্যময়: রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে প্লাস্টিকের থালা-গ্লাস। ছবি: সুদীপ ঘোষ ও স্বাতী মল্লিক
মালবাহী গাড়ি, ট্রেকার দাঁড়িয়ে, ছাদে বসে পুণ্যার্থীরা। তারস্বরে বাজছে ডিজে। রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর তৈরি হয়েছে অস্থায়ী জলসত্র, খাবারের জায়গা। কাঁধে বাঁক নিয়ে পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়ি থামিয়ে সেখান থেকে জল, খাবার খাচ্ছেন ভক্তেরা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তর ২৪ পরগনার চাকলা ও কচুয়া ধামে যাচ্ছেন ভক্তেরা। বাঁকে গঙ্গা কিংবা ইছামতী, বিদ্যাধরী নদীর জল। বুধবার থেকে তিন দিন ধরে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগমে তীব্র যানজটে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ১৫ মিনিটের পথ পার হতে লেগে যাচ্ছে এক থেকে দু’ঘণ্টা। এর পরে রয়েছে দিনে-রাতে ডিজে বাজিয়ে যাতায়াত। পাশাপাশি, মনোরঞ্জনের জন্য জলসত্র কিংবা খাবারের জায়গাতেও চলছে রাতভর জলসা। কেউ আবার স্রেফ ট্র্যাকে বাজনা চালিয়ে তুলে দিচ্ছেন কণ্ঠী গায়ককে। তারস্বরে চলছে ‘হোল নাইট ফাংশন’। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শব্দের চোটে অসুস্থ মানুষ, বয়স্ক ও শিশুদের ঘুম ছুটেছে।
এলাকাবাসীর কথায়, এর পরে রয়েছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাটি। জলসত্র, খাবারের জায়গা থেকে হাজার-হাজার প্লাস্টিকের গ্লাস, চায়ের কাপ, থার্মোকলের থালা, বাটি, পলিথিনের প্যাকেট ডাঁই করে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশেই। খিচুড়ি, তরকারি, লুচি, আলুর দম, হালুয়ার উচ্ছিষ্ট টানাটানি করে রাস্তা নোংরা করছে কুকুর। পচে যাওয়া খাবার থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হাঁটতে হাঁটতেই ছুড়ে দেওয়া এক-দু’লিটারের ফাঁকা প্লাস্টিকের বোতলে ভরে গিয়েছে রাস্তার দু’পাশ। অভিযোগ, ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে কাচের বোতল। এর উপরে রয়েছে যত্রতত্র শৌচকর্ম করার জেরে তীব্র দুর্গন্ধ।
জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, মূলত বারাসত-টাকি রোড ধরেই যাতায়াত চলছে দুই ধামে। কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে ওই রাস্তা ছাড়াও কৃষ্ণনগর রোড, যশোর রোড, ভিআইপি রোড, বিটি রোড, দমদম রোড, ব্যারাকপুর রোড সংলগ্ন গোটা এলাকায়। বাগুইআটি, দমদম, নাগেরবাজার, বাগবাজার, বেলগাছিয়া, বিমানবন্দর, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, হাবড়া, বনগাঁ, দেগঙ্গা, বসিরহাট— সর্বত্রই এক চিত্র।
বর্জ্যময়: বারাসত-টাকি রোড ও যশোর রোডে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ ও স্বাতী মল্লিক
কেন রাস্তায় থালা, গ্লাস ফেলছেন? প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার শেফালি রায় নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘রাস্তায় দু’হাত অন্তর খাবারের জায়গা। হাতে-হাতেই নিয়ে নিই জল, খাবার। বাঁক নামিয়ে তা আর রাস্তার বাইরে ফেলা হয় না।’’
সমীর বাছাড় নামে এক ভক্তের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা সেবা করতে জলসত্র, খাবারের জায়গা তৈরি করেছেন, তাঁরা কেন পরের দিন আবর্জনা পরিষ্কার করছেন না?’’এমনিতেই ওই সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিকের কাপ ও গ্লাসের জমা জলেও ডেঙ্গির মশা বংশবিস্তার করতে পারে।
কেন এই হাল হবে এলাকার? ধর্মীয় ‘আবেগ’, তাই ‘কিছুই করার নেই’— কার্যত এমনই জবাব শোনা গিয়েছে পুলিশ, প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের মুখে। তবে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘বুধবার একটি প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাঁরা জলসত্র, খাবারের জায়গা করেছেন, তাঁদেরই এলাকা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।’’ এর বাইরে যে আবর্জনা থাকবে তা স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েত পরিষ্কার করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর উচ্চস্বরে ডিজে, বক্স বাজানোর ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি চলবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার সি সুধাকর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy