Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

নিয়ম ভাঙা রাত-লরিতেই বিষপান শহরের

দিল্লি পারে। কলকাতা পড়ে থাকে বিষধোঁয়ার গর্ভেই।সোমবার জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করেছে, দিল্লি থেকে অবিলম্বে ১০ বছরের পুরনো ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করতে হবে।

অত্রি মিত্র ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

দিল্লি পারে। কলকাতা পড়ে থাকে বিষধোঁয়ার গর্ভেই।

সোমবার জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করেছে, দিল্লি থেকে অবিলম্বে ১০ বছরের পুরনো ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করতে হবে। দিল্লিতে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি নিষিদ্ধ ছিলই। সম্প্রতি দূষণ রোধে কেজরীবাল সরকার জোড়-বিজোড় গাড়ি একই দিনে পথে বার করায় নিষেধ জারি করে। তাতেও কমছে না দূষণ। এ বার তাই রাজধানীতে ১০ বছরের পুরনো ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত।

কোথায় দাঁড়িয়ে শহর? পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দিনের তুলনায় রাতের কলকাতা বেশি বিষময়। কারণ, ১০ বছরের পুরনো গাড়ি ব্রাত্য হওয়া দূর, ১৫ বছরের পুরনো গাড়িও দিব্যি চলছে শহরের রাত-পথে। তা নিয়ে প্রশাসনের হেলদোলও নেই। ২০০৯-এ ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি নিষিদ্ধ করে কলকাতা হাইকোর্ট। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, তা মেনে ১৫ বছরের পুরনো বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি বাতিল হলেও ট্রাকের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যে-কে-সেই। ফলে যাবতীয় পরিবেশ-আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাতের শহরে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ বছরের পুরনো ট্রাকও।

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, রাতের শহরে ঢোকা ট্রাক দেখলেই বিধি মানার এই ব্যর্থতা চোখে পড়ে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘শহরে রাস্তার পরিমাণ পাঁচ শতাংশেরও কম। অথচ, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রচুর। তাই গাড়ির গড় গতিবেগ কম, দূষণও বেশি। এ শহরে বাঁচার জন্য নয়, আমরা নিঃশ্বাস নিই মরার জন্য। শহরেই বন্দর, বড়বাজারের মতো এলাকা। রাতে বড় ট্রাক ঢুকছে। এ সবই শহরে কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।’’

অনেকের অবশ্য যুক্তি, লরিগুলি ভিন্‌ রাজ্যের। সেগুলি বাতিল করা এ রাজ্যের প্রশাসনের আওতায় পড়ে না। সুভাষবাবুদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘দিল্লি-সহ বেশ কিছু জায়গায় শহরের বাইরে দিয়ে ট্রাক যাতায়াত করে। কিন্তু এখানে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বাবুঘাট ও এসপ্ল্যানেড থেকে বাসস্ট্যান্ডই সরানো গেল না। ট্রাক সরানো দূরের ব্যাপার।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার ও পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘বন্দর বা বড় বাজার অন্য শহরেও রয়েছে। তারা দূষণ আইন কার্যকর করে
কী ভাবে?’’

রাতের দূষণের পিছনে অবশ্য অন্য কারণকে দায়ী করছে পরিবেশ দফতরের একাংশ। তাঁরা বলছেন, রাতের শহরে যে গাড়িগুলি ঢোকে, তার সবগুলিই ১৫ বছরের পুরনো নয়। কিন্তু দূষণের নিরিখে ২০ বছরের পুরনো গাড়িকেও টেক্কা দেবে। তাদের দূষণ ছাড়পত্র ঠিক মতো যাচাই করা হয় না বলেই অভিযোগ পরিবেশ দফতরের ওই একাংশের।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা বলছেন, রাতে দূষণ বাড়ছে, তা সত্যি। তাতে লাগাম টানতে নিয়মিত নজরদারি ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শুধু পুরনো গাড়ি নয়, নতুন গাড়িকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করতে হবে। তা কে করবে?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব নিয়মিত দূষণের মাত্রা মাপা ও তা প্রশাসনকে জানানো। তা নিয়মিতই হয়। পুরনো ও দূষণ ছড়ানো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ভার পরিবহণ দফতর ও পুলিশের।’’

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই ট্রাকের ওভারলোডিং নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছি। তাতেই দূষণের মাত্রা আনেকটা কমেছে। ভবিষ্যতে আমরা আরও কড়া হব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

lorry movement Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy