Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

জন্মদিনের প্রচারে ‘পরাক্রম’ দেখালেন নেতা-নেত্রীরাই

প্রভাতফেরি বা স্কুলের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ অবশ্য বঙ্গজীবনে ২৩ জানুয়ারির অঙ্গ ছিল বরাবরই।

দ্বৈরথ: সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালনে দুই রাজনৈতিক দলের তৎপরতায় শহরে দেখা গেল এমনই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

দ্বৈরথ: সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালনে দুই রাজনৈতিক দলের তৎপরতায় শহরে দেখা গেল এমনই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪১
Share: Save:

পরাক্রম দিবস! না কি দেশনায়ক দিবস?

দিনটা ঠিক কী? প্রশ্নটা উঠলেও বিষয়টির মীমাংসা হল না! তবে সুভাষ-জয়ন্তীর চেনা চেহারাটা যে বেমালুম পাল্টে গিয়েছে, তা শনিবার টের পেয়েছে কলকাতা। সকাল থেকে বাঙালির নেট-রসিকতাতেই সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে রাজনীতির টানাটানির ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। মজাদার মিমে দেখা গিয়েছে, সুভাষের হাত ধরে টানতে টানতে দু’রকম দিবসের দ্বন্দ্ব রীতিমতো প্রকট।

প্রভাতফেরি বা স্কুলের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ অবশ্য বঙ্গজীবনে ২৩ জানুয়ারির অঙ্গ ছিল বরাবরই। কিন্তু এমন রাজনৈতিক শোভাযাত্রা সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে কবে দেখেছে শহর? মনীষীর জন্মদিনে দেশের বা শীর্ষ স্তরের নেতা-মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানও নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাতেও এমন প্রত্যক্ষ রাজনীতির আঁচ দেখা যায় কই?

এ দিন সকালে সপার্ষদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রার সময়ে সমাজমাধ্যমেও কোনও কোনও তৃণমূল সমর্থক ‘দিদি তুমি এগিয়ে যাও’ বলে সরব হয়েছিলেন। আর বিকেলে ভিক্টোরিয়ায় সুভাষ-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার স্মারক হয়ে থাকল। টিভিতে সেই ‘জন্মদিন পালা’ দেখতে দেখতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসি পড়ুয়া মিমোসা ঘোড়ুই বলছিলেন, ‘‘যাবতীয় পরাক্রম তো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরই দেখলাম। দেশনায়কও ওঁরাই। টানাটানিতে নেতাজি নিজে ক্রমশ ঢাকা পড়ে যাচ্ছেন।’’ সল্টলেকের বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসের এমএ বর্ষণা গুপ্তও বিরক্ত, ‘‘নেতাজি-জয়ন্তীতে পাড়ায় রাত-দিন ছুটির মেজাজে গানবাজনা চলছে, এটা আগেও দেখেছি। কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কিছুটা নতুন। সুভাষচন্দ্র বসু ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। কিন্তু তাঁকে ঘিরে এই বীরপুজোটা যে ভোটের দিকে তাকিয়ে, তা যে কেউ বুঝবেন!’’

বাস্তবিক, সকালে মমতার মিছিলে ভিড় দেখে দমদমের দোকানির মন্তব্য, ‘‘দিদি দেখিয়ে দিলেন! কারা যেন বলেছিলেন ওঁর জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে।’’ ভবানীপুরের উঠতি বিজেপি নেতার সকাল থেকে ঠাসা কর্মসূচি। অন্তত ১৪টা জায়গায় পতাকা উত্তোলন, শাঁখ বাজানোর দায়িত্ব। তিনি হাসছেন, ‘‘আমি তো দলে থেকেই খেটে খেটে হয়রান।’’ মিমোসা বলছেন, ‘‘এক বছর হতে চলল, ল্যাবরেটরির ক্লাস করা মাথায় উঠেছে। অথচ, দল বেঁধে পদযাত্রা, সভা করায় বারণ নেই।’’

আমবাঙালির সুভাষ-জয়ন্তীর নস্ট্যালজিয়ায় কিন্তু কখনওই এতশত কচকচি ছিল না। নিখাদ আবেগে হেদুয়ার দোকানে বিনা পয়সায় তেলেভাজা খাওয়ার আবেগ বা ‘জয় হিন্দ’ বলে নতুন সন্দেশের নামকরণ, বঙ্গজীবনে এ সব অনুষঙ্গও আছে। নেতাজি ভবনেও বরাবরই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। বাম আমলেও সুভাষ-জয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠান নিচু তারে বাঁধা থাকত। রাজনীতির গন্ধটা এত তীব্র ছিল না।

২০১১-এ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার বছরে রবীন্দ্রনাথের সার্ধ শতবর্ষ উদ্‌যাপিত হচ্ছিল। তবু ভোটের সময়ে রবীন্দ্র-জয়ন্তীর দিনে কোনও রাজনৈতিক দলই তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। পরে ২২ শ্রাবণ, রবীন্দ্র-তিরোধান দিবসে কবির সার্ধ শতবর্ষের উদযাপন হয়। তার মধ্যেও তাৎক্ষণিক ভোটের অঙ্ক মিশে ছিল না।

কেউ কেউ বলছেন, এ বার বিজেপি তেড়েফুঁড়ে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করায় মমতার মনীষী-রাজনীতিও চড়া সুরে চলছে। আর এই টানাটানির চরম পর্যায় দেখতে হয়েছে ভিক্টোরিয়ায়। যেখানে সুভাষ-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনিও শোনা যায়। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে আর যা-ই থাকুক, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদের নামগন্ধ নেই বলে সরব নেট-নাগরিকেরাও। রাজনীতির এই টানাটানিই বাঙালির বরণীয় নায়ককে অপমানের মুখে ঠেলে দিল।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Netaji Subhash Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy