অনুপম সাহু
ন’মাস আগের স্মৃতি কয়েক দিন আগেও তাঁকে তাড়া করে বেড়াত। তাই গাড়িতে চেপে কোনও সেতুতে উঠলেই আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলতেন। পাশে বসে থাকা স্ত্রীর হাত চেপে ধরে রাখতেন বছর আটত্রিশের যুবক। চোখের সামনে ভেসে উঠত, সেতুর সামনের রাস্তা আচমকাই ভেঙে পড়ছে। আর নীচে আছাড় খেয়ে পড়ছে গাড়ি!
গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে মাঝেরহাটের সেই ঘটনার কথা আর মনে করতে চান না কলকাতা পুলিশের কর্মী অনুপম সাহু। টানা ন’মাস এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে কোমরের চোট সারিয়ে এখন সুস্থ ওই যুবক। আর তাই আজ, বুধবার সকালে ফের সাদা উর্দি গায়ে চাপিয়ে হেঁটে গিয়ে চড়বেন মেট্রোয়। তার পরে বি বা দী বাগে কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের দফতরে গিয়ে কাজে যোগ দেবেন অনুপম।
গড়িয়া স্টেশন এলাকায় একটি আবাসনের দোতলায় স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী পূরবীকে নিয়ে থাকেন অনুপম। মঙ্গলবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটে বসে ন’মাস আগের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে বারবারই গলা বুজে আসছিল তাঁর। ওই দিন তারাতলার দিক থেকে মোমিনপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে ছিলেন শুধু তিনি ও চালক। হঠাৎ মাঝেরহাট সেতু ভেঙে প্রায় ৪০ ফুট নীচে পড়ে তাঁদের গাড়ি। অনুপম জানান, প্রথমে কিছু না বুঝলেও কয়েক মিনিট পরে টের পান, কোমরে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। একটু নড়তেই পা দু’টি পুরো ঘুরে যায়। তাঁকে ভর্তি করা হয় আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
ঘটনার বিবরণ শুনতে শুনতে স্বামীর পরনের ফুলহাতা গেঞ্জিটা বারবার চেপে ধরছিলেন পূরবী। বললেন, ‘‘দিনটা আর মনে করতে চাই না। সে দিন সকালেই ও বলেছিল, কোমরে ব্যথা করছে। বিকেলে ঘটনার পরে গাড়ির চালক অনেক বার আমাকে ফোন করলেও ধরতে পারিনি। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে যখন ফোন করলাম, তখন সব জানলাম।’’ দুর্ঘটনায় অনুপমের লাম্বার-১ ভেঙে গিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত অসাড় হয়ে গিয়েছিল। পূরবী জানান, আলিপুরের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের এক মাস পরেও পায়ের দুটো বুড়ো আঙুল নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলেন না ওই যুবক।
‘‘দিশাহারা হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য। ওঁর নির্দেশেই পিজি-তে ভর্তি হই। সেখানকার চিকিৎসকদের জন্যই আমার পুনর্জন্ম হল,’’ বললেন অনুপম। এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক জানান, অনুপমকে পরীক্ষা করে তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁকে পুনরায় সচল করার জন্য যা যা করণীয় (রিহ্যাব), তা ঠিক মতো হয়নি। মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন। এমনকি, মল-মূত্র ত্যাগেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘কাউন্সেলিং করিয়ে প্রথমে ওঁর মনের জোর ফেরানো হয়। ফিজ়িয়োথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি-সহ সব রকমের থেরাপি দেওয়ার দল তৈরি করে পায়ের পেশী সচল করে অল্প অল্প হাঁটানো হয়। ছুটি দেওয়া হলেও প্রস্রাবে একটা সমস্যা ছিল। সেটা এখন সেরে গিয়েছে। এখন অনুপম পুরো সুস্থ।’’
বাড়ি ফিরে প্রতিদিন ফিজ়িয়োথেরাপি আর প্রতি মাসে এক বার করে এসএসকেএমে গিয়ে রাজেশবাবুর কাছে চেক-আপ করাতেন অনুপম। ঘরেই অল্প হাঁটাচলা করতেন। শেষ তিন মাসে বিকেলের দিকে রাস্তায় হাঁটাচলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সকালের দিকে বাড়ির সামনের বাজারেও যাওয়া শুরু হয়। কয়েক দিন আগেই পূরবীকে নিয়ে ঘুরে এসেছেন শিলং। তবে পায়ের পেশীতে হাল্কা একটা যন্ত্রণা থাকায় আবার কবে ছক্কা হাঁকাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কলকাতা পুলিশের ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার অনুপমের।
যদিও এ বারের দুর্গাপুজোটা জমিয়ে উপভোগ করতে ইতিমধ্যেই টিকিট কেটেছেন ‘বোম্বে টু গোয়া’র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy