আনন্দপুর-কাণ্ডে নির্যাতিতার বয়ানে ধোঁয়াশা। নিজস্ব চিত্র।
দেড় দিন কেটে গেলেও এখনও অধরা আনন্দপুর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে, নাম ভাঁড়িয়ে নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন অভিযুক্ত। এমনকি নির্যাতিতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নিজের আসল ফোন নম্বর ব্যবহার করেননি তিনি। ভুয়ো পরিচয়ে নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় অভিযুক্তের হদিশ পেতে সময় লেগেছে। তবে পুলিশের দাবি, অভিযুক্তের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁরা হাতে পেয়েছেন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর গাড়ি। তিনি পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু নির্যাতিতা মহিলার বক্তব্যে এখনও বেশ কিছু অংশ অস্পষ্ট রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের একাংশের।
আদতে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা, ৩১ বছরের ওই নির্যাতিতা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। তিনি থাকেন গড়িয়ার নয়াবাদের একটি আবাসনে। শনিবার ঘটনার পর এবং রবিবার পুলিশকে তিনি জানিয়েছিলেন, গত ১ সেপ্টম্বর তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ওই অভিযুক্তের। তিনি নিজের নাম বলেছিলেন অমিতাভ বসু এবং নিজেকে এক জন পদস্থ বিমাকর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ছিলেন। নির্যাতিতা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি অভিযুক্তের সঙ্গে প্রথমে পাটুলি এলাকার একটি রেস্তরাঁয় যান। সেখান থেকে সোজা তাঁর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তার বদলে অমিতাভ অন্য দিকে গাড়ি নিয়ে গেলে গন্ডগোলের সূত্রপাত। সেখান থেকেই বচসা। ওই তরুণীর অভিযোগ, তাঁকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে দেন অভিযুক্ত।
শনিবার রাতে পুলিশ যখন নির্যাতিতাকে নয়াবাদের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয়, তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোন অভিযুক্তের গাড়িতেই পড়ে রয়েছে। পরের দিন তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত সেই মোবাইল ফোন তাঁর আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীর কাছে দিয়ে চলে গিয়েছেন। রবিবার সকালে সেই ফোন তিনি হাতে পান। কিন্তু ফোন খুলে দেখেন অভিযুক্ত তাঁর ফোন থেকে সমস্ত চ্যাট হিস্ট্রি এবং ফোন নম্বর মুছে দিয়েছেন। এক তদন্তকারী প্রশ্ন করেছিলেন, তরুণীর মোবাইলের সিরিউরিটি লক খুলে কী করে অভিযুক্ত সমস্ত তথ্য ডিলিট করলেন? তরুণীর দাবি ছিল, অভিযুক্ত তাঁর মোবাইলের সিকিউরিটি ফিচার জানতেন। যে যুবকের সঙ্গে পাঁচ দিনের আলাপ, সেই যুবক কী ভাবে তরুণীর মোবাইলের সিকিউরিটি ফিচার জানলেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয় পুলিশের।
আরও পড়ুন: রেস্তরাঁয় কিশোরীর শ্লীলতাহানি, মোবাইলে ছবি তুলে গ্রেফতার অভিযুক্ত ৩ যুবক
পরবর্তীতে তদন্তকারীরা তরুণীর বয়ান অনুযায়ী পাটুলির রেস্তরাঁয় গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গাড়িটি চিহ্নিত করেন। সেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং ইএমআইয়ের নথি থেকে হদিশ মেলে গাড়ি-মালিকের। সেই সূত্র ধরেই গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু সেই নথি থেকে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু নয় বরং অভিষেক পান্ডে। অন্য দিকে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবির সূত্র ধরে তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই যুবকের সঙ্গে নির্যাতিতার যোগাযোগ বা ‘বন্ধুত্ব’ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তদন্তকারীদের একটি অংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন, অভিষেক পান্ডে এক সময়ে ওই তরুণীর সঙ্গে একই সংস্থায় কাজও করেছেন। এমনকি ওই তরুণীর সঙ্গে অভিযুক্তের বিয়ের কথাও চলছিল।
আরও পড়ুন: হাইপারসনিক যুগের সূচনা, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যানের সফল পরীক্ষা
এই সমস্ত তথ্যে ঘিরেই তৈরি হয়েছে সংশয়। প্রশ্ন উঠছে, তরুণী যদি দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযুক্তকে চেনেন তা হলে তিনি সেটা পুলিশের কাছে গোপন কেন করলেন? সেই সঙ্গে প্রশ্ন, এত দিন ধরে আদৌ কি ভুয়ো পরিচয়ে কোনও সম্পর্ক রাখা সম্ভব? না কোনও অজ্ঞাত কারণে তরুণীই ভুল নাম বলেছেন অভিযুক্তের? এ দিন তদন্তকারী আধিকারিকরা দীর্ঘ ক্ষণ নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন ওই ধোঁয়াশা কাটাতে।
অন্য দিকে, তরুণীর আর্তনাদ শুনে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অভিযুক্তের গাড়ির ধাক্কায় জখম নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের পায়ে এ দিন অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তাঁর বা পায়ের হাড় দু’টুকরো হয়ে ভেঙে গিয়েছে। তাঁর স্বামী দীপ শতপথি এ দিন অভিযোগ করেছেন, ‘‘নিজের জীবন বাজি রেখে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে এ ভাবে জখম হলেন আমার স্ত্রী। অথচ পুলিশ এখনও আমাদের কোনও বয়ান রেকর্ড করল না।” তবে পুলিশের দাবি, অভিযুক্তকে পাকড়াও করার পর সকলের বয়ান রেকর্ড করা হবে। তবে তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, নির্যাতিতার বয়ান আরও স্পষ্ট হলে এই তদন্তের আরও দ্রুত অগ্রগতি হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy