মৃত সোনু ওরফে দীপক রানার (ইনসেটে) বাবা-মা। প্রগতি ময়দান থানায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বাসন্তী হাইওয়ের ধারে চৌবাগা খালে পড়ে যাওয়া গাড়ির চালকের খোঁজ মিলল দুর্ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে। বুধবার দুপুরে ওই ঘটনার পরে প্রথমে পুলিশ যার সম্পর্কে বলেছিল, ‘দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ছেলেটি পালিয়েছে’, সেই সোনু ওরফে দীপক রানার মৃতদেহই বৃহস্পতিবার উদ্ধার হল খালে জমে থাকা পাঁকের তলা থেকে!
পুলিশের ওই মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাদের ভূমিকাও। স্থানীয়দের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, এক জনের খোঁজ না পাওয়া সত্ত্বেও কী করে স্রেফ গাড়িটি খাল থেকে তুলে বিকেল সাড়ে ৩টেতেই ঘটনাস্থল ছাড়ল পুলিশ? কী ভাবেই বা নিশ্চিন্ত হয়ে ডুবুরি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের সে দিনের মতো ছুটি দিয়ে দেওয়া হল? মৃতের বাবা মণিরাজ রানা এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশ তো প্রথমে বলে দিয়েছিল, আমার ছেলে পালিয়েছে।’’ ওই এলাকাটি কলকাতা পুলিশের পূর্ব ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি গৌরব লাল অবশ্য বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কেউ বলছিলেন, চালককে উঠে আসতে দেখেছেন। কেউ বলছিলেন, চালক হয়তো পালিয়ে গিয়েছেন। তাই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়।’’ বিভ্রান্তি না কাটিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ছাড়ল কী করে, সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গিয়েছে।
এ দিন ঘটনার পুনর্নির্মাণে নেমে পুলিশ জেনেছে, বছর সতেরোর দীপক বাবার সঙ্গে রঙের কাজ করত। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় শিয়ালদহের একটি স্কুলের পড়ুয়া এক কিশোরীর। বুধবার সরস্বতী পুজো উপলক্ষে তারা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ওই কিশোরীর সঙ্গী হয় তারই সহপাঠী, ট্যাংরার বাসিন্দা আনাম পরভিন। আনাম ডেকে নেয় তার বন্ধু বছর ষোলোর মহম্মদ আলমকে। স্কুলের সামনেই চার জন দেখা করে বেরোনোর পরিকল্পনা করে। আলম পুলিশকে বলেছে, দীপকের সঙ্গে বুধবারই তার প্রথম দেখা। একটি গ্যারাজ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ওই কিশোরীর স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করছিল দীপক। যদিও চার জনের কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িতে চার জন বাসন্তী হাইওয়ে ধরে লেদার কমপ্লেক্সের দিকে যায়। ওই কিশোরী এ দিন বলে, ‘‘ওখানকার একটি পার্কে কিছু সময় কাটিয়ে আমরা ফিরছিলাম। দীপক আর আলম ভাগাভাগি করে গাড়ি চালাচ্ছিল। তবে ঘটনার কিছু আগে গাড়িটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।’’ দীপক আর আলম নেমে সেটিকে কিছুটা ঠেলে নিয়ে যায়। ফের গাড়ি চালু হলে চালকের আসনে বসে দীপক। পাশে ওই কিশোরী। তার কথায়, ‘‘হঠাৎই গাড়িটা জোরে চলতে শুরু করে। দীপক বলছিল, ব্রেক ধরছে না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সরাসরি খালে গিয়ে পড়ে গাড়ি। আমরা সবাই বেরিয়ে আসতে পারলেও দীপককে আর দেখতে পাইনি। বুধবার রাতে পুলিশ যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে, তখনই বলেছিলাম খালেই কোথাও থেকে দীপককে পাওয়া যাবে।’’
ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি টেনে তোলার পরে থানায় ফিরে যান প্রায় সব পুলিশকর্মীই। তার আগে প্রগতি ময়দান ছাড়াও সেখানে ছিল আনন্দপুর ও আশপাশের থানার প্রচুর পুলিশ। তখনই পুলিশের তরফে বলে দেওয়া হয়, সোনু নামে এক জনের খোঁজ মিলছে না। গাড়িটি সে-ই চালাচ্ছিল। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। রাতে সোনু ওরফে দীপকের বাকি সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে টনক নড়ে পুলিশের। সে সময়েই তার মা-বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। এ দিন সকালে ফের ডাক পড়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ডুবুরির।
ডিসি (পূর্ব ডিভিশন) অবশ্য বলেছেন, ‘‘পাঁকের মধ্যে থেকে দেহটি উদ্ধার হয় বেলা ১২টা নাগাদ। কোনও ভাবে দেহটি একটু এগিয়ে গিয়েছিল। আমরা তো বুধবারই ডুবুরি নামিয়েছিলাম। ডিএমজি-ও ছিল। দেহ পাওয়া যায়নি, একটা বিভ্রান্তিও ছিল। আমরা এত কাজ করি, এই এক জনকে কেনই বা খুঁজব না?’’
ছেলের মরদেহের ময়না-তদন্তের কাগজপত্র নিতে এ দিন থানায় এসেছিলেন দীপকের মা রীতা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওর নিজের মা নই। ওর বাবার আর আমার পরে বিয়ে হয়েছে। এ ভাবে দীপককে হারাব ভাবিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy