এই গাড়ি নিয়েই সূত্রপাত বচসার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
দিঘায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য বৃদ্ধের কাছ থেকে তাঁর বিলাসবহুল গাড়িটি চেয়েছিল সে। না পাওয়ায় জুড়ে দেয় বচসা। তার মধ্যেই খুন করে বৃদ্ধকে। দমদমের নাগেরবাজারের নয়াপট্টি এলাকায় এক বৃদ্ধকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়িচালককে গ্রেফতারের পরে সে এমনই দাবি করেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত সৌরভ মণ্ডল (২৭) ওরফে পঞ্চাননকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শনিবার নাগেরবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (দক্ষিণ) অজয় প্রসাদ। এ দিন অভিযুক্তকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।
নয়াপট্টির জলের ট্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকায় একটি বাগানবাড়ি থেকে গত বুধবার রাতে উদ্ধার হয় গৃহকর্তা কল্যাণ ভট্টাচার্যের পচাগলা দেহ। প্রাথমিক ভাবে মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, মাথায় ভারী কিছুর আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের। পাশাপাশি, ওই ঘটনার পর থেকে তাঁর গাড়ি ও পোষ্য কুকুরেরও খোঁজ মিলছিল না। দেহ উদ্ধারের পরে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন পরিজনেরা। খুন এবং চুরির মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রথম থেকেই সন্দেহের তির ছিল কল্যাণের গাড়িচালকের দিকে। শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি গাড়িটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তা ছাড়া, ওই বাড়ির একটি ঘর থেকেই শুক্রবার উদ্ধার করা হয় পোষ্যটিকে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তিন মাস আগে গাড়িচালক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে সে কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পর থেকে বিলাসবহুল গাড়িটি চালাচ্ছিল সে। ১৫ সেপ্টেম্বর দিঘা যাবে বলে সে গাড়িটি চায় বৃদ্ধের থেকে। তিনি সৌরভকে বাড়ি গিয়ে দেখা করতে বলেন। ১৫ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সে বাগানবাড়িতে গিয়ে দেখে, মূল ফটক ভিতর থেকে বন্ধ। কল্যাণের মোবাইলও বন্ধ। সৌরভ পাঁচিল টপকে ঢুকে সটান চলে যায় বাড়ির ভিতরে। ফের গাড়ি চাইলে কল্যাণ রাজি হননি। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। ঠেলাঠেলির জেরে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান বৃদ্ধ। এর পরে শ্বাসরোধ করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। তাঁর মাথার আঘাত শুধু দেওয়ালে ধাক্কা লেগে, না কি ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। মাথায় আঘাত করার কথা ধৃত স্বীকার করেনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধকে খুনের পরে তাঁর দেহ ঘরের মধ্যেই রেখে দেয় সৌরভ। গ্যারাজের তালা খুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বেরোনোর পথে বাড়ির দরজায় বাইরে থেকে তালা দিলেও মূল ফটক পুরোপুরি বন্ধ করতে ভুলে যায় সৌরভ। মূল ফটক খোলা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল স্থানীয়দের। তাঁরা সৌরভকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখেছিলেন ওই দিন। তদন্তে নেমে বিভিন্ন রাস্তা, টোল প্লাজ়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তা থেকেই জানা যায়, গাড়িটি নিয়ে অভিযুক্ত দিঘায় গিয়েছিল। সঙ্গে তার কয়েক জন বন্ধুও ছিলেন। পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত দিঘা থেকে ফিরে আরও কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছিল। নজরদারি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বাড়ি বসিরহাটে। তবে সে বর্তমানে বারাসতে থাকত। তার নামে আগে কোনও অপরাধের রেকর্ড রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিকে, বৃদ্ধ খুনের ঘটনার সঙ্গে দিঘায় তার সঙ্গীদের কোনও যোগসূত্র নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়ি চাওয়া নিয়ে বিবাদের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে, বৃদ্ধকে বলে সৌরভ ওই গাড়ির সেন্সর ব্যবহারের অনুমতি নিজের নামে করে নিয়েছিল। অর্থাৎ, সে ছাড়া ওই গাড়ি অন্য কেউ খুলতে পারত না। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, গাড়িটির প্রতি তার লোভ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ওই বাড়ি থেকে আরও কিছু সামগ্রী উধাও হয়েছে। তাতে ধৃত জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া পোষ্যটিকে বর্তমানে এক চিকিৎসকের কাছে রাখা হয়েছে। খুনের পরে প্রাথমিক ভাবে বাড়ি তল্লাশি করেও তার সন্ধান মেলেনি। পুলিশের অনুমান, ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল সে। ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করার আগে প্রমাণ নষ্ট হওয়ার ভয়ে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালাতে পারেনি পুলিশ। তবে সে সাত দিন কোনও রকম সাড়াশব্দ করল না কেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy