—ফাইল চিত্র।
ফের আদালতে মুখ পুড়ল রাজ্যের।
তাদের নির্দেশনামা নিয়েও দখল জমি না ফেরাতে পারায় হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়ল সরকার। কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থের ভূমিকাকেও ভর্ত্সিত করে আদালত। তাঁর উপস্থিতিতে এক জন আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কমিশনারের ‘মূক-বধির’-এর মতো আচরণকে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানিয়ে দেন, ওই জমির দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনে তিনি কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবেন। এমনকী, সেনা নামানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
নাকতলা এলাকার ২৫৩সি এনএসসি বসু রোডে প্রায় ৪০ কাঠার ওই জমি সম্প্রতি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই জমি মালিকের হাতে তুলে দিতে গত শুক্রবার নির্দেশনামা-সহ সেখানে হাজির হয় কলকাতা পুলিশের একটা বড় বাহিনী। হাজির ছিলেন পুলিশ কমিশনার-সহ লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা, আদালত নিযুক্ত বিশেষ অফিসার এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্তারা। কিন্তু, জমি তাঁরা দখলমুক্ত করতে পারেননি। উল্টে ঘণ্টা তিনেক পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। কারণ, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করেছে এক পক্ষ। সব মিলিয়ে ওই দিন জমির দখল পাননি জমির মালিক।
আরও পড়ুন, সিপি স্বয়ং এলেও জমি পেলেন না মালিক
ওই জমিতে অনেক কিছুই রয়েছে। যেমন, জমির অনেকখানি স্থানীয় একটি ক্লাবের দখলে রয়েছে। সেই ক্লাবের সভাপতি আবার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের স্বামী ভাস্কর দাম। অন্য দিকে, মাঠের এক পাশে ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজও চলছে। আবার, ওই জমিতেই রয়েছে শাসকদলের একটি পার্টি অফিস। সেটাই কলকাতা পুরসভার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের অফিস।
ওই দিন পুলিশ কমিশনার জমি দখলমুক্ত করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে ভাস্করবাবু কেরোসিনের বোতল হাতে ধরে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এই জমির দখল নিলে আমি কেরোসিন তেল ঢেলে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করব। আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে পুলিশকে যেতে হবে উচ্ছেদ করতে।’’ এ দিন হাইকোর্ট সেই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারের সামনে এক জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন, আর তিনি মূক-বধিরের মতো তা দেখলেন। এটা অপরাধ।’’ শুধু তাই নয়, ভাস্করবাবুকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের যে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের ভিত্তিতে ওই দিন জমি দখলমুক্ত করতে গিয়েছিল পুলিশ বাহিনী, সে বেঞ্চের বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘‘আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কেন পুলিশ ব্যর্থ হল!’’ এর পরেই তিনি জানান, সরকারকে ওই জমি থেকে দখলদারকে সরাতেই হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কড়া ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে সেনা নামানো হবে।’’ পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে তাঁর নির্দেশ মানা হয়নি বলে তিনি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এর পরেই তাঁর মন্তব্য: ‘‘রাজ্যের গোটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে।’’ আদালত আরও বলে, রাজ্য সরকার তার নিজের জমি রক্ষা করতে ব্যর্থ। একটা গোটা চেন কাজ করছে। রাজ্য সরকার চলছে এদেরই অঙ্গুলি হেলনে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে জড়িত। কলকাতা পুরসভা বেআইনি কাজ করছে। এটা রাজ্যের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই ভাবে রাজ্য তার জমি রক্ষা করে? এর পরই বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আপনি কি ৫ নম্বর এসএন ব্যানার্জি রোডে (এখানে পুরসভার মূল কার্যালয়) এই অনুমতি কাউকে দেবেন? সেখানে কাউকে থাকতে দেবেন? আপনি এক ইঞ্চিও দখল করতে পারবেন না। আপনি কি মহাকরণ বা নবান্ন-য় কাউকে এই অনুমতি দেবেন?’’
এর পরেই হাইকোর্ট সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে ভাবার পরামর্শ দেয়। বিচারপতি জানান, যদি কাউকে জমি অধিগ্রহণ করতে হয় তবে তা আইন মেনেই। দখল করা যায় না। শেষ বারের মতো সুযোগ দেওয়া হল বলে নির্দেশ জারি করেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। বলেন, ‘‘যদি আইনসম্মত ভাবে অধিগ্রহণ করা যায় তবে ভাল, কিন্তু আমাকে জানানো হোক, কী চাইছেন? যদি পুলিশ কমিশনার ব্যর্থ হন, তবে আমি অন্য ব্যবস্থা নেব।’’ আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালতে এই বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
জমির মালিক ভবানীপুরের বাসিন্দা জনৈকা লীনা দত্ত। ওই জমির মালিকানা ফিরে পেতে ২০১৩-য় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। মামলার আবেদনে তিনি বলেন, তাঁর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি’ (কেএমডব্লিউএসএ)। সেই জমি তারা শেষ পর্যন্ত ঠিক পদ্ধতি মেনে অধিগ্রহণ করেনি। জমিটি তারা দীর্ঘ দিন অন্য কাজে ব্যবহার করেছে। জমির ভাড়া বাবদ তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। হাইকোর্টের বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের নির্দেশে ক্ষতিপূরণের টাকা অবশ্য তাঁকে দিয়েছে কেএমডব্লিউএসএ। কেএমডব্লিউএসএ-র দাবি, ওই জমি তাদের আর প্রয়োজন না হলেও, কলকাতা পুরসভার জমিটির দরকার। জমিটি কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর সেই জমি উদ্ধার করতেই গত শুক্রবার পুলিশ কমিশনার-সহ লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা, আদালত নিযুক্ত বিশেষ অফিসার এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্তারা সেখানে পৌঁছেছিলেন।
কী বললেন বিচারপতি
• ওই ভদ্রলোককে (ভাস্কর দাম) গ্রেফতার করা উচিত ছিল।
• আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কেন পুলিশ ব্যর্থ হল!
• পুলিশ কমিশনারের সামনে এক জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন, আর তিনি মূক-বধিরের মতো তা দেখলেন। এটা অপরাধ।
• পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে আমার নির্দেশ মানা হয়নি। রাজ্যের গোটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে।
• সরকারকে ওই জমি থেকে দখলদারকে সরাতেই হবে।
• আমি কড়া ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে সেনা নামানো হবে।
• রাজ্য সরকার তার নিজের জমি রক্ষা করতে ব্যর্থ। একটা গোটা চেন কাজ করছে। রাজ্য সরকার চলছে এদেরই অঙ্গুলি হেলনে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে জড়িত।
• কলকাতা পুরসভা বেআইনি কাজ করছে। এটা রাজ্যের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই ভাবে রাজ্য তার জমি রক্ষা করে? আপনি কি ৫ নম্বর এসএন ব্যানার্জি রোডে (এখানে পুরসভার মূল কার্যালয়) এই অনুমতি কাউকে দেবেন? সেখানে কাউকে থাকতে দেবেন? আপনি এক ইঞ্চিও দখল করতে পারবেন না। আপনি কি মহাকরণ বা নবান্ন-য় কাউকে এই অনুমতি দেবেন?
• যদি কাউকে জমি অধিগ্রহণ করতে হয় তবে তা আইন মেনেই। দখল করা যায় না। শেষ বারের মতো সুযোগ দেওয়া হল।
• যদি আইনসম্মত ভাবে অধিগ্রহণ করা যায় তবে ভাল, কিন্তু আমাকে জানানো হোক, কী চাইছেন? যদি পুলিশ কমিশনার ব্যর্থ হন, তবে আমি অন্য ব্যবস্থা নেব।
• আগামী ১৪ জানুয়ারি আমাকে জানানো হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy