আশ্বাসের পরেও পাল্টানো না দূষণ-চিত্র!
কালীপুজোর আগেই শব্দদূষণের ‘হটস্পট’ বা ‘দাগি’ বলে শহরের কয়েকটি জায়গাকে চিহ্নিত করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তার মধ্যে কসবা, গরফা, বেহালা, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, লেক টাউন, বাঙুর, বেলেঘাটা, মানিকতলা-সহ শহর ও শহর সংলগ্ন মোট ২৪টি জায়গা ছিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলেওছিল, ওই এলাকারগুলির উপরে পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। ফলে পর্ষদের আশ্বাসের পরে পরিবেশকর্মীরা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে শব্দবাজির উপদ্রব কমার আশা করেছিলেন।
বাস্তবে দেখা গেল, তেমন তো হয়ইনি। উপরন্তু কসবা, গরফা, বেহালা, জোড়াবাগান, পাটুলি, ভবানীপুর-সহ চিহ্নিত ‘দাগি’ এলাকা থেকেই শব্দতাণ্ডবের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এমনকি, কালীপুজো হয়ে যাওয়ার পরে মঙ্গলবারও শব্দ-উপদ্রুত হয়ে থাকল কসবা, গরফা, লেক টাউন-সহ একাধিক এলাকা। কসবা, গরফার একাধিক এলাকায় এ দিন দুপুর থেকেই মুহুর্মুহু বাজি ফাটা শুরু হয়েছে। যা শুনে পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, স্থানীয় পুলিশ যদি সক্রিয় থাকত তা হলে কখনওই এমন হত না। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘রোগ কী জানা, কোথায় রোগ হচ্ছে তা-ও জানা। অথচ ওষুধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা হয় না কি!’’
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর তরফে গত কয়েক বছরের শব্দবাজির অভিযোগের ভিত্তিতে এ বছর যে সমীক্ষা করা হয়েছিল, তাতেও শহরের মোট ২২টি থানা এলাকার নাম উঠে এসেছিল। তার মধ্যে আটটি উত্তরের ও ১৪টি দক্ষিণের নাম ছিল। ‘সবুজ মঞ্চ’-এর কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত পবন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতি বছরই কয়েকটি এলাকা থেকে ঘুরে ফিরে অভিযোগ আসে।’’ সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত আবার বলছেন, ‘‘শুধু তো এ বছর নয়, ধারাবাহিক ভাবে গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকাগুলি শব্দতাণ্ডবের শীর্ষে রয়েছে। শব্দবিধি ভাঙার ক্ষেত্রে সেগুলিই দাগি এলাকা। অথচ সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় পুলিশ সক্রিয় থাকলে এটা হতে পারে না!’’
শব্দবাজি সংক্রান্ত দায়ের হওয়া অভিযোগের ধারা বলছে, বরাবরই দক্ষিণ কলকাতা থেকে বেশি অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু এ বছরে উত্তর কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকা, যেখান থেকে আগে কখনও শব্দবাজি সংক্রান্ত অভিযোগ আসেনি, সেখান থেকেও এসেছে। তার মধ্যে বেনিয়াপুকুর, শ্যামপুকুর অন্যতম। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, কালীপুজোর আগে এবং কালীপুজো থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বেনিয়াপুকুর, শ্যামপুকুর থেকে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘লেক টাউন, বাঙুর সব সময়েই শব্দবাজি ফাটানোর তালিকায় শীর্ষে থাকে। নতুন জায়গার নাম যুক্ত হওয়াটাও চিন্তার।’’
অনেক আবাসন থেকে শব্দবিধি ভাঙা হয় বলে শহর এবং শহর সংলগ্ন ১৫০টি আবাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বছর কালীপুজোর আগে বৈঠক করেছিলেন পর্ষদকর্তারা। শব্দবাজি নিয়ে তাঁদের বিশেষ ভাবে সতর্কও করা হয়েছিল। তার পরেও দেখা গিয়েছে, একাধিক আবাসন বিধি ভাঙায় যুক্ত থেকেছে। পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘দূষণ নিয়ে কলকাতার মানুষের সচেতনতা বেশি থাকার কথা। কিন্তু তার পরেও দেখা গেল, যেগুলিকে হটস্পট চিহ্নিত করেছিলাম আমরা, সেই এলাকাগুলি এ বছরেও নিজস্ব চরিত্র বজায় রেখেছে। আগামী বছর এ নিয়ে আরও সতর্ক থাকব।’’ পুলিশের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগের থেকে শব্দবাজি রুখতে ভাল কাজ হয়েছে।’’ ‘ভাল কাজ’ হলে কী ভাবে চিহ্নিত এলাকা থেকেই বেশি অভিযোগ দায়ের হল? এর সদুত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy