Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Raju Naskar

৯ বছর আগে শেষ ধৃত, ডজনখানেক নয়া মামলাতেও ‘অধরা’ দাপুটে রাজু

২০১৪ সালে চৌরঙ্গি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিরোধী দলের এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলেমারধরের অভিযোগ উঠেছিল রাজুর বিরুদ্ধে।

Raju Naskar.

রাজু নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ ০৭:৫৫
Share: Save:

শেষ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১৪ সালে, ন’বছর আগে। বেলেঘাটায় বোমাবাজি ও হাঙ্গামার ঘটনায় জড়িত দাগি দুষ্কৃতি হিসেবে কলকাতা পুলিশ দিল্লি থেকে গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। কিন্তু তার পরথেকে আর তাঁর গায়ে হাত দেয়নি পুলিশ। যদিও এর মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, বোমাবাজি, খুনের চেষ্টার ডজনখানেকেরও বেশি নতুন মামলা রুজু হয়েছে।

বেলেঘাটার সেই ‘ত্রাস’ রাজু নস্করের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে আরও এক বার। এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করছেন স্থানীয়েরা। সরকারি আইনজীবী সোমবার আদালতে জানিয়েছিলেন, রাজুর অফিস থেকে সেভেনএমএম পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দু’দিন পরেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রাজুকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বেলেঘাটার বাসিন্দাদের একাংশের যদিও দাবি, এটা নতুন কিছু নয়। একাধিক গুরুতর অভিযোগে রাজুর নাম জড়ালেও পুলিশ তাঁকে ধরে না।

২০১৪ সালে চৌরঙ্গি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিরোধী দলের এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলেমারধরের অভিযোগ উঠেছিল রাজুর বিরুদ্ধে। বিধাননগর পুরসভায় সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ২০২০ সালে রাজুর নিজের ক্লাব বেলেঘাটা গান্ধী ময়দান ফ্রেন্ডস সার্কলে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে যায় ক্লাবেরপাঁচিল। সে সময়ে ক্লাবের সভাপতি হিসাবে রাজুর নাম সেই ঘটনায় জড়ালেও পুলিশ তাঁকে ছোঁয়নি। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বেলেঘাটায় একটি ১৪ কাঠাপুকুর বোজানোর ঘটনায় পুরসভার দায়ের করা এফআইআরে রাজুর নাম থাকলেও তাঁকে ধরা হয়নি। গত বছর জুনে অনির্বাণ সাহা নামে বেলেঘাটার এক ব্যবসায়ীরকারখানায় টিন লাগানোর বরাত না পেয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে হাসপাতালের গেটে ফেলে দিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল রাজুর বিরুদ্ধে।

তবু পুলিশ তাঁকে ধরে না কেন? প্রশ্ন করলেই জবাব আসে, ‘‘ওকে তো এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে না।’’আর থানা থেকে বেরিয়ে ইস্ট কুলিয়া রোডে শীতলা মন্দিরের পাশের বাড়িতে গিয়ে রাজুর খোঁজ করলে শোনা যায়, ‘‘এই তো ছিল। বেরিয়ে গেল এখনই।’’

তবে এর মধ্যেই অবাধে চলতে থাকে রাজুর ‘কারবার’। এলাকায় নির্মাণ ব্যবসা-সহ ‘ছেলেপোষার’ দায়িত্ব তাঁরই। এলাকায় কোনও বাড়ি খালি করতে গেলে ভরসা ‘রাজুদা’। ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ করতেও ডাক পড়ে তাঁর দলের। সালকিয়া থেকে খিদিরপুর, সল্টলেক থেকে বেহালা—দলে দলে ছেলে আসে তাঁর ডাকে। বেলেঘাটায় কয়েকশো ছেলে তাঁর অধীনে ইট-বালি সরবরাহ করে। বেলেঘাটার মিয়াবাগান, কে জি বসু সরণি, কবি সুকান্ত সরণিতে কান পাতলেই শোনা যায়,এলাকায় যে কোনও কাজ করতে গেলে খুশি করতে হবে রাজুকে। কারণ, ‘দাদার’ মাথায় হাত রয়েছে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতার। তার জোরেই একে একে প্রতিদ্বন্দ্বী নির্মাণব্যবসায়ীদের কার্যত এলাকাছাড়া করেছেন রাজু।

মাঠ ফাঁকা করার এই কৌশল রাজু করায়ত্ত করেছেন বামআমলেই। শোনা যায়, বেলেঘাটায় বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোছায়া সিনেমা হলের বাইরে এককালে টিকিট কালোবাজারি করতেন রাজু। এর পরেবেলেঘাটার এক সিপিএম নেতার হাত ধরে কম বয়সে দলীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ওই নেতার প্রভাব খাটিয়েই শুরু নির্মাণ ব্যবসা। সেই আমলের দাদাদের হাত ধরেই পেশিশক্তির প্রয়োগ। ট্যাংরার একটি খুনের মামলাতেও নাম জড়ায় তখনই। পরিবর্তনের পরে দল বদলান রাজু। বিরোধীদের জব্দ করার মূল মন্ত্র যাঁদের থেকে শিখেছিলেন, সেই মন্ত্রে এখন ঘায়েল করেন তাঁদেরই। পুরনো নির্মাণ ব্যবসা ক্রমশ কালে কালে সিন্ডিকেটের চেহারা নিয়েছে। প্রথমে বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালের বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীতেথাকলেও ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বিধায়কের ‘আশীর্বাদধন্য’। বিধায়কের সঙ্গে বিরোধ থাকাকালীন রাজুর গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ লেগেই থাকত কুখ্যাত কানপুরিয়া শঙ্কর ওরফে শঙ্কর চক্রবর্তীর। সেই সময়েই এক বার গন্ডগোলের পরে এলাকাছাড়া হন রাজু। গ্রেফতার হন দিল্লি থেকে

কিন্তু বেশি দিন মাঠের বাইরে রাখা যায়নি রাজুকে। এখন নিজের তৈরি নির্মাণ সংস্থারম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি। আর তাঁর ছেলে রাজ্যের শাসকদলের যুব শাখার প্রথম সারির নেতা। কিন্তু রাজু কি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন? কোনও মতে তাঁকে ধরা গিয়েছিল ফোনে। অল্প কথায় বললেন, ‘‘রাজু নস্কর কোনও দিনই জমি ছেড়ে পালায়নি। আমি নির্দোষ।’’ বিধায়ক পরেশবলেন, ‘‘রাজুকে চিনি। এখানে সবাই তৃণমূল, কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

police arrest Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy