Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Murder

পেট কেটে মাথা থেঁতলে যুবককে খুন, গঙ্গায় দেহ ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ল ‘পুলিশের সোর্স’

নিহত নওসর কলকাতার পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার সিগারেট কলের বাসিন্দা।

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৩০
Share: Save:

তলপেট খুর দিয়ে চিরে, ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে যুবককে খুন করলেন তাঁরই পরিচিতরা। তার পর ওই দেহ নদীতে ভাসাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন মূল অভিযুক্ত-সহ চারজন। মৃতের নাম নওসর। পেশায় ট্রান্সপোর্টের ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতের এই খুনে, মূল অভিযুক্ত রাজ মোর্তাজার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে আগেও। এমনকি পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবেও তিনি কাজ করতেন বলে জানা যাচ্ছে।

নিহত নওসর কলকাতার পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার সিগারেট কলের বাসিন্দা। খুন করার আগে পরিকল্পনা মাফিক তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউ মার্কেটের একটি হোটেলের পার্টিতে। সেখানে চলে মদ্যপান। মাঝরাতে আবার সেখান থেকে বেরিয়ে, গাড়ি করে নাদিয়াল থানার ‘বেঙ্গল বন্ড গ্রাউন্ড’-এর কাছে নদীর ধারে পৌঁছন তাঁরা। সেখানেও চলে মদ্যপান। এর পরই সুযোগ বুঝে, ইট দিয়ে নওসেরের মাথায় বারবার আঘাত করেন অভিযুক্তরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে খুর দিয়ে কাটা হয় তাঁর তলপেট। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীরের বিভিন্ন অংশ। এর পর মৃতদেহটি নদীতে ভাসাতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান অভিযুক্তেরা।

পুলিশ জানিয়েছে— ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রাজ মোর্তাজা নওসরের মতোই ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বাকি তিনজন সানওয়াজ আহমেদ, আসগড় আলি, আলম সফি। এঁদের প্রত্যেকের কাপড়ের কারবার রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

মোর্তাজা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, নওসর তাঁর কাছ থেকে গাড়ি কেনার জন্যে ৫০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে টাকা দিতে অস্বীকার করাতেই নওসরকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।

প্রধান অভিযুক্ত রাজ মোর্তাজা (বাঁ দিকে)। নিহত নওসর। — নিজস্ব চিত্র

আরও পডু়ন: ‘আইন তার কর্তব্য পালন করেছে’, এনকাউন্টারের বর্ণনা দিয়ে বললেন সজ্জানর

এই মোর্তাজার সঙ্গে এক দিকে যেমন বন্দর এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার যোগযোগ রয়েছে, তেমনই বিভিন্ন অপরাধীর সঙ্গেও রয়েছে ওঠাবসা। ওই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে বন্দর এলাকায় নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে ছিলেন মোর্তাজা। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে— পুলিশের সঙ্গেও ওঠাবসা ছিল মোর্তাজার। পুলিশের ‘সোর্স’ হয়ে কাজও করতেন তিনি। ওয়াটগঞ্জ থানার ডেন্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বছর আঠাশের ওই যুবক কলকাতার বিভিন্ন হোটেলের পানশালায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বন্দর এলাকাতে তো বটেই— ময়দান, শেক্সপিয়ার সরণি-সহ কলকাতার বিভিন্ন থানা এলাকায় অপরাধমূলক কাজের জন্যে ধরা পড়ার পরেও, মোর্তাজা প্রভাব খাটিয়ে বারবার ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র-সহ আরও তিনজনের সঙ্গে ধরা পড়েছিলেন মোর্তাজা। পরে অবশ্য ছাড়াও পেয়ে যান। যে গাড়িতে তাঁরা সেদিন ধরা পড়েছিলেন, নওসর খুনের ঘটনাতেও সেই টয়োটা ফর্চুনার (ডব্লুবি ২২ ইউ ২১২০) গা়ড়িটি ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ভাবে বারবারই ধরা পড়েছেন, কিন্তু পুলিশ মহলে ওঠাবসার কারণে বারবার লঘু ধারায় মামলা হওয়ার কারণে, ছাড়া পেয়ে যেতেন মোর্তাজা এবং তার বাহিনী।

আরও পড়ুন: আমার স্বামীকে যাঁরা খুন করেছে, তাঁদেরও হত্যা করুন, বলছেন অভিযুক্তের স্ত্রী

ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রাজা বলেন, “মোর্তাজা প্রধান অভিযু্ক্ত। তার নামে বিভিন্ন থানায় অভিযোগও রয়েছে। তবে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত কি না, আমার জানা নেই। তদন্ত শুরু হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Port Murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE