Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

লকডাউনে কঠোর পুলিশ, তবে উঠছে কিছু প্রশ্নও

একাংশ এখন বলছেন, বিধি পালন করানোর নামে পুলিশ কি মাঝেমধ্যে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছে না?

নজরদারি: কড়া হাতে লকডাউন-বিধি কার্যকর করতে রাস্তায় পুলিশ। লকডাউনে কেন রাস্তায়, তা জানতে হাওড়া সেতুতে বাইকচালককে দাঁড় করাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নজরদারি: কড়া হাতে লকডাউন-বিধি কার্যকর করতে রাস্তায় পুলিশ। লকডাউনে কেন রাস্তায়, তা জানতে হাওড়া সেতুতে বাইকচালককে দাঁড় করাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০১:১৩
Share: Save:

একাধিক আনলক-পর্বের পরে নতুন করে শুরু হওয়া লকডাউনে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে নানা মহলের। পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে অনেকেই বলেছেন, পুলিশ এ ভাবে সক্রিয় না হলে এই দফাতেও লকডাউন সার্থক হত না। কিন্তু গত কয়েক দিনে মানুষকে কান ধরে ওঠবোস করানো বা লাঠিপেটা করার নানা দৃশ্য দেখে তাঁদেরই একাংশ এখন বলছেন, বিধি পালন করানোর নামে পুলিশ কি মাঝেমধ্যে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছে না?

অভিযোগ, বুধবারের লকডাউনেও দেখা গিয়েছে এ রকম দু’-একটি দৃশ্য। অনেকেরই দাবি, জরুরি প্রয়োজনের কথা জানিয়ে নথি দেখালেও বহু ক্ষেত্রে ছাড় মিলছে না। তারা যে সক্রিয়, তা দেখাতে গিয়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ রোগীর গাড়ি আটকে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। গাড়িতে রোগী থাকলে কাগজপত্র দেখালেই ছেড়ে দেওয়ার কথা। কেন হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

এই অভিযোগের সূত্র ধরে অনেকেই তুলে এনেছেন গত কয়েক দিনে রাস্তাঘাটে দেখা পুলিশের লাঠিপেটা বা কান ধরে ওঠবোস করানোর দৃশ্যের কথা। তাঁদের প্রশ্ন, “আইন ভাঙার শাস্তি কি আইন না ভেঙে দেওয়া যায় না?” আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আইন ভাঙার শাস্তি কখনওই আইন ভেঙে লাঠিপেটা করে দেওয়ার কথা নয়। কেউ যদি ভেবে নেন, হাতে লাঠি আছে মানে লাঠিপেটা করাটাই তাঁর কর্তব্য, তা হলে তা চরম মানবাধিকার-বিরুদ্ধ কাজ।” জয়ন্তবাবু জানান, এই সময়ে রাজ্য সরকার মহামারি প্রতিরোধ আইন এবং কেন্দ্রীয় সরকার বিপর্যয় মোকাবিলা আইন বলবৎ করেছে। ওই আইনের বলে পুলিশকে অনেকটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি এই সময়ে মহামারি প্রতিরোধে বলবৎ হওয়া বিধি ভাঙেন, তা হলে তাঁর জরিমানা বা সাজা হতে পারে। জয়ন্তবাবুর কথায়, “কিন্তু সাজা বলতে এখন সকলকে হাজতে ভরা মুশকিল। তার থেকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা যেতে পারে। তা হলেই তো আর লাঠিপেটা করে সামলাতে হয় না!”

রাস্তায় বেরিয়েছেন কেন, তার কারণ দর্শাতে না পারায় রাজাবাজারে গ্রেফতারই করা হল এক ব্যক্তিকে। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার বলছেন, “করা তো যায় অনেক কিছুই। কিন্তু এখন পুলিশের অসম্ভব শারীরিক ও মানসিক চাপ হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কাজ তারই বহিঃপ্রকাশ।” আর এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, “পুলিশের উপরে কড়া নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়েই হয়তো কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমন কাজও করে ফেলতে হচ্ছে পুলিশকে, যা আইনে বলা নেই। এ ছাড়া তো উপায়ও নেই। এত মানুষ এর পরেও অকারণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। আমি বলব, পুলিশ নিজেই এখন নিরুপায়।”

পুলিশকর্মীদের একটি বড় অংশেরও দাবি, মানুষকে বুঝিয়ে সচেতন করতে কোনও চেষ্টাই বাকি রাখেননি তাঁরা। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ তার পরেও সচেতন হননি। কারণে-অকারণে তাঁদের রাস্তায় বেরোনো চাই-ই চাই! তাঁরা নিজে থেকে সচেতন হলে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতেই হত না।

লালবাজারের হিসেব, এ দিনও লকডাউনের বিধিভঙ্গের জন্য শহরে ৭২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস্ক না পরায় মামলা হয়েছে ৩৫২ জনের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে থুতু ফেলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয় ২১ জনের বিরুদ্ধে। আইন ভাঙায় আটক করা হয়েছে ৩৩টি গাড়ি। গত শনিবারের লকডাউনেও দেখা গিয়েছিল, বিনা কারণে রাস্তায় গাড়ি, মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। এক যুবক আবার বান্ধবী ও তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে প্রমোদভ্রমণে বেরিয়ে ধরা পড়ার ভয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন পুলিশকর্মীর পায়ের উপর দিয়েই। ওই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর পরেও যে শহরের অনেকেরই হুঁশ ফেরেনি, তা স্পষ্ট এ দিনের ধরপাকড়ের পরিসংখ্যানে।

তবু পুলিশকে মাত্রাজ্ঞান ধরে রেখেই কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, “রোগীকে নিয়ে যাওয়া বা ওষুধের দোকানে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কথা বলেই বোঝা উচিত। সেটা মানবিক দিক থেকে দেখা দরকার। পুলিশ দারুণ কাজ করছে। আর একটু সামাজিক ও মানবিক হয়ে সেই কাজ করলে ক্ষতি কী? শহরবাসীকেও বুঝতে হবে, মানবিক হওয়া মানে দুর্বলতা নয়। তাঁদেরও নিয়ম পালন করে দায়িত্ব নিতে হবে নিজের এবং সমাজের।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Coronavirus Lockdown Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy